পড়াশোনা করে কবি হওয়া দুরূহ। সাহিত্যের যতগুলো মাধ্যম আছে তার মাঝে কবি হয়ে কবিতা লিখা সবচেয়ে জনপ্রিয়। সাধারণে একটা বিষয়ে যা দেখেন, স্বতন্ত্র দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে কবি সেখানে ভিন্ন কিছু দেখেন, লিখেন। অভিজ্ঞতা সাহিত্যের সবগুলো শাখায় প্রয়োজনীয় উপাদান। কবিকেও দেখার দৃষ্টি দিয়ে অভিজ্ঞতা থেকে স্বচ্ছতর বিষয়টিকে বেছে নিতে হয়। পাশাপাশি শব্দচয়নের দিকেও লক্ষ রাখতে হয়। অনেকগুলো স্পষ্ট শব্দের মিশেলে কবিতা হয়ে উঠে নান্দনিক, যা পাঠকের মনে দ্যোতনা সৃষ্টি করে। কবি ইয়াসিন আযীযের লিখাগুলো বিষয়ের ভিন্নতা এবং শব্দচয়নে অনেকদূর এগিয়ে চলে ।
শরীয়তপুরের দক্ষিণ গোয়ালদীর, পালং এলাকায় কবির বেড়ে উঠা। পারিবারিকভাবে সাহিত্যানুরাগী ইয়াসিন আযীয বিভিন্ন দৈনিকে নিয়মিত লিখতে লিখতে পটুতা অর্জন করেন। একসময় ‘কীর্তিনাশার কাব্য’ নামের একটি ছোট কাগজের নির্বাহী সম্পাদক হয়ে এখন পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছেন।
সরকারি চাকুরে ইয়াসিন আযীযের দহনকাল, কবিতার বইয়ে কবি তার অভিজ্ঞতার পূর্ণ ব্যবহার করার প্রয়াস চালিয়েছেন। তিনি উপলব্ধি করেছেন “শিক্ষিত অমানুষ না হয়ে নিরক্ষর থাকাই বরং শ্রেয়”। কবি ইয়াসিন আযীয দেখতে সচেষ্ট ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, সময়ের ব্যাধি, নদী, প্রকৃতিসহ অসংখ্য বিষয় কবি তার আটচল্লিশটি কবিতায় তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে লিখে গেছেন। সোনালি স্বপ্নের সেতু, অদ্ভুত ভূত, ধর্মের প্যাঁচালি বা মানব জীবন, মধ্যবিত্তের প্রিয় ঋতু লিখাগুলো গদ্য আঁকারে লিখা হলেও কবি যা বলতে চান সে স্পষ্ট। দহনকাল বইটির প্রথম কবিতা ‘বাংলাদেশ’ যেখানে স্থান করে নিয়েছে আমাদের তিন প্রধান নদীগুলো, মসলিন থেকে শুরু করে শস্য ধান পাটসহ এমনকি ইলিশ, ফজলি, আর ষড়ঋতুর দেশ পুরোটাই।
‘একটি দুঃস্বপ্নের রাত, কী সংকেত দিয়ে গেল? এটা কি সত্যিই দুঃস্বপ্ন- নাকি সময়ের চিত্রকল্প’ এমন পংতিগুলো পাঠককে ভাবায়। মানদণ্ড বা ‘সবুজ পায়রা’ কবিতাগুলো মনে স্বপ্ন দেখায়। ‘ধর্মগ্রন্থগুলো ডাক দিয়ে যায় মানুষ হওয়ার তারও বেশি অনুভব করি নিজে নিভৃতে’ কবির মনে দন্দ তাকে লিখতে ব্যত্যয় ঘটাতে পারে না। শেষ স্টিমারে কবি ঠিক লাফিয়ে চরে বসেন। কবি ইয়াসিন আযীয প্রকৃতই একজন কবি। তার কবিতার পংতিগুলো মনে নাড়া দিতে বাধ্য। তার সতত চেষ্টা অব্যাহত থাকবে এ কামনা করা যুক্তিসংগত।