
আপিল বিভাগের সাতজন বিচারপতির দেয়া সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের আলোচিত রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন এখন ছয়জন বিচারপতির বেঞ্চ শুনানি করতে পারেন কি না? সে সিদ্ধান্ত আগামী বৃহস্পতিবার জানাবেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পর আলোচিত এই রিভিউ আবেদনটি বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বিভাগে শুনানির জন্য এলে রিটকারি পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরশেদ প্রশ্ন তোলেন। সাতজন বিচারপতির দেয়া রায় ছয়জন বিচারপতির বেঞ্চ শুনানি করতে পারেন কি না? এই প্রশ্ন উত্থাপন করে ‘ফুল বেঞ্চ’ ও ‘সেইম বেঞ্চ’ এর বিষয় আদালতের সামনে আনেন। আইনজীবী মনজিল মোরশেদ আরও বলেন, এই আদালতের রিতি অনুযায়ী যে কয়জন বিচারপতি রায় দেন সে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন সেই একই সংখ্যক কিংবা তার চেয়ে বেসি সংখ্যক বিচারপতির বেঞ্চ শুনে থাকেন।
অন্যদিকে, সাতজন বিচারপতির দেয়া রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন ছয়জন বিচারপতি শুনতে পারেন কিনা? সে বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র কয়েকজন আইনজীবীর অভিমত শুনেন সর্বোচ্চ আদালত। যাদের অভিমত শুনেন সর্বোচ্চ আদালত তারা হলেন: অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মমতাজ উদ্দিন ফকির, অ্যাডভোকেট আজমালুল হোসেন কেসি, অ্যাডভোকেট প্রবীর নিয়োগী, অ্যাডভোকেট কামরুল হক সিদ্দিকী, অ্যাডভোকেট মুরাদ রেজা, ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ।
একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন এবিষয়টিতে আমাদের সিদ্ধান্ত যাতে ভুল না হয়, তাই আপনাদের অভিমত শুনলাম। আপনাদের আরও যদি কোন বিষয় বা ডিসিশন দেখানের থাকে আপনারা সেটা আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে দিতে পারেন। আমরা এবিষয়ে আগামী বৃহস্পতিবার আমাদের সিদ্ধান্ত দেবো, তারপর ষোড়শ সংশোধনী রিভিউ শুনানির বিষয়ে যাওয়া যাবে।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস করা হয়। ওই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশ হয়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ন্যস্ত করে আনা সংবিধানের এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একই বছরের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয়জন আইনজীবী হাইকোর্টে একটি রিট করেন। সে রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ৫ মে হাইকোর্টের তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন।
এরপর হাইকোর্টের দেয়া ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে। সে আপিলের শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ৩ জুলাই ততকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ করে রায় ঘোষণা করেন।
বহুল আলোচিত ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে, দেশের গণতন্ত্র, রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, সুশাসন, দুর্নীতি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে। তবে আপিল বিভাগের দেয়া রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
বিজ্ঞাপন