নানা জল্পনা কল্পনা কাটিয়ে গত ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হলো। দেশে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এ নির্বাচনটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কয়েকটি রাজনৈতিক দল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি এবং তারা নির্বাচনকে প্রতিহত করতে চাইলেও বাংলাদেশের সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের দৃঢ়তায় ১৯৭৫ সালের পরে মানদণ্ডের বিচারে সবচেয়ে সফল নির্বাচন হয়েছে এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
এ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২২২টি আসনে জয়লাভ করে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। এই জয়ের ফলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবার এবং মোট পাঁচবার সরকার গঠন করলো। গত ১১ জানুয়ারি গঠিত ৩৭ সদস্যের নতুন মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও ২৫ জন পূর্ণ মন্ত্রী এবং ১১ জন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
কেমন হলো এবারের মন্ত্রিসভা
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ: উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’ স্লোগান সম্বলিত যে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে তার বিচারে সার্বিকভাবে একটি স্মার্ট মন্ত্রিসভা গঠিত হবে এটি অনেকটাই অনুমেয় ছিল।
বিগত মন্ত্রিসভার যেসকল মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী অত্যন্ত সফলতার সহিত মন্ত্রণালয় পরিচালনা করেছেন তাদের বেশিরভাগই পুনরায় একই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। এদের মধ্যে অন্যতম হলো আসাদুজ্জামান খান কামাল, যিনি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পর পর দু’বার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়টি কোন ধরণের সমালোচনা ছাড়াই পরিচালনা করেছেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকারিতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। কাজেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্ভার থাকবেন এতে কোন সন্দেহ নেই।
অ্যাডভোকেট আনিসুল হক হলেন বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী যিনি ২০১৪ সাল থেকে শুরু করে পর পর দু’বার আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে সফলতার সহিত দায়িত্ব পালন করেন। আনিসুল হক তৎকালীন কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার (বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা) কসবার পানিয়ারূপ গ্রামে ৩০ মার্চ ১৯৫৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সিরাজুল হক (বাচ্চু মিয়া)।
প্রয়াত অ্যাডভোকেট সিরাজুল হক ও তার ছেলে অ্যাডভোকেট আনিসুল হক তারা দু’জনেই বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী হিসেবে ১৯৮০-২০১৪ সময়কালে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, শীর্ষস্থানীয় ও সংবেদনশীল ফৌজদারি মামলার আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছিলেন। বাবার মৃত্যুর পরে আনিসুল হক বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা এবং জেল হত্যা মামলা উভয়ের প্রধান প্রসিকিউটর হয়েছিলেন। তার আইনি পরামর্শে বঙ্গবন্ধু খুনের মামলাটি শেষ হয় এবং বাংলাদেশের শীর্ষ আদালত রায় প্রদান করে।
আনিসুল হক দুর্নীতি দমন কমিশন বাংলাদেশের প্রধান আইনজীবী ও বিশেষ প্রসিকিউটরও ছিলেন। আনিসুল হক পিলখানা হত্যা মামলার প্রধান প্রসিকিউটর ছিলেন, যা ২০০৯ সালে বাংলাদেশের বিডিআর বিদ্রোহের সাথে সম্পৃক্ত। তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে পর পর তিনবার আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া প্রথম ব্যক্তি।
ওবায়দুল কাদের ২০১১ সালের ৫ ডিসেম্বর শেখ হাসিনার দ্বিতীয় মন্ত্রিসভায় তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের (বর্তমান সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়) মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। শেখ হাসিনার তৃতীয় ও চতুর্থ মন্ত্রিসভায়ও তিনি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা তিনবার (২০০৯-২০২৩) সরকারে থাকা বাংলাদেশের যোগাযোগ খাতে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। ওবায়দুল কাদের এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থেকে পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু টানেল, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো মেগা প্রকল্পগুলো সফলতার সহিত সম্পন্ন করেছেন।
বাংলাদেশ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুফল পেতে যোগাযোগ খাতের উন্নয়নকে তরান্বিত করতে চায় এবং এখাতে অভাবনীয় উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে ওবায়দুল কাদেরের মতো একজন ডায়নামিক মন্ত্রীর উপরই আস্থা রেখেছেন শেখ হাসিনা।
এছাড়াও যেসকল মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রিত্ব অপরিবর্তিত রয়েছে সেগুলো হচ্ছে- আ ক ম মোজাম্মেল হক (মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়), নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন (শিল্প মন্ত্রণালয়), মো. তাজুল ইসলাম (স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়), সাধন চন্দ্র মজুমদার (খাদ্য মন্ত্রণালয়), স্থপতি ইয়াফেস ওসমান (টেকনোক্র্যাট কোটায়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়)।
বিদায়ী মন্ত্রিসভার যেসকল প্রতিমন্ত্রী তাদের কর্মদক্ষতার সুফল হিসেবে একই মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন তারা হলেন- মো. ফরিদুল হক খান (ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়), মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল (শিক্ষা মন্ত্রণালয়) ও ফরহাদ হোসেন (জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়)।
অতএব যেসকল মন্ত্রী তাদের মন্ত্রণালয় ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন তারা প্রত্যেকেই কর্মদক্ষতায় পরিপূর্ণ এবং এসকল মন্ত্রণালয় স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ধারাবাহিক উন্নতি সাধন করবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করাই যায়।
করোনা মহামারি এবং যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব কাটিয়ে দেশজ প্রবৃদ্ধির হার ঊর্ধ্বমুখী রাখা, দ্রব্যমূল্য কমানো এবং সকলের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা, মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রাখা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও ডলার সংকট কাটিয়ে উঠা, রাজস্ব আহরণ, খেলাপি ঋণ, ব্যাংক খাতের সুশাসনের দিকে নজর দেওয়া বর্তমান সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং বিষয় হবে।
বর্তমান মন্ত্রিসভায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ চ্যালেঞ্জিং দায়িত্বটি প্রদান করা হয়েছে আবুল হাসান মাহমুদ আলীকে, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে ১৯৬২ সালে বি.এ. এবং ১৯৬৩ সাল এম.এ. ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৬ পর্যন্ত অর্থনীতির প্রভাষক ছিলেন। ১৯৬৬ সালে তৎকালীন পাকিস্তান ফরেন সার্ভিস (পিএফএস)-এ যোগ দেন। দেশে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে কাজের পাশাপাশি বিদেশের বিভিন্ন মিশনে যেমন নিউইয়র্ক, নয়াদিল্লি, বেইজিংয়ে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
আবুল হাসান মাহমুদ আলী ভুটান (১৯৮৬-১৯৯০) ও জার্মানিতে (১৯৯২-১৯৯৫) বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যে (১৯৯৬-২০০১) হাইকমিশনারও ছিলেন। অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব (দ্বিপাক্ষিক) হিসেবে ভারতের সাথে তিন বিঘা করিডোর ইমপ্লিমেন্টেশন এগ্রিমেন্টের (১৯৯২) আলোচনা ও স্বাক্ষর করেছিলেন তিনি। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে কূটনৈতিক মঞ্চে যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করেন তিনি। ১৯৭১ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের প্রতিনিধি নির্বাচিত হন তিনি। বিভিন্ন দেশে কূটনৈতিক দায়িত্ব পালন শেষে দেশে ফেরার পর তিনি ২০০১ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।
২০০২ সালে তিনি কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা কমিটির সদস্য হন। এরপর তিনি আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির কো চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ডিসেম্বর ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে মাহমুদ আলী দিনাজপুর ৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ৯ম জাতীয় সংসদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন। ২০১২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর মাহমুদ আলী নবগঠিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান এবং ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩ পর্যন্ত এ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন।
২১ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে তিনি বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০১৪ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে ২৬ ফেব্রুয়ারি তিনি পুনরায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। গত পাঁচ বছর তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কঠিন এ সময়ে আবুল হাসান মাহমুদ আলীকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রদানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা তার রাষ্ট্র পরিচালনায় আবারও প্রজ্ঞার স্বাক্ষর রাখলেন। সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে অর্থমন্ত্রী কতটা সফল হবেন তা সময়ই বলে দেবে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রথম থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা রাষ্ট্র পক্ষপাতমূলক আচরণ করে আসছে। বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন পরবর্তী সময়েও তারা বিভিন্নভাবে বলার চেষ্টা করছে যে এ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। বিভিন্ন সময় তারা বাংলাদেশের সাধারণ জনগণকে সামনে তুলে আনলেও তাদের লক্ষ্য ভিন্ন বলেই মনে হয়। এটা তাই অনুমেয় বর্তমান সরকারকে তাদের চাপকে সামলাতে হবে। এ প্রেক্ষাপটে বর্তমান মন্ত্রিসভার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চৌকস পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করতে হবে।
এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শেখ হাসিনার আস্থার নামটি হচ্ছে মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ, যিনি বিদায়ী মন্ত্রিসভার তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এর পূর্বে তিনি শেখ হাসিনার তৃতীয় মন্ত্রিসভায় ২০০৯ সালের ৮ জানুয়ারি থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত প্রথমে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, একই বছরের ১ আগস্ট থেকে ২০১১ সালের ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং পরবর্তীতে একই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। হাছান মাহমুদ তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বর্তমান সরকারের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কতটুকু সফল হবেন এর জন্য আমাদেরকে কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হবে। তবে আপাত দৃষ্টিতে মোহাম্মদ হাছান মাহমুদকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রদান একটি ভাল সিদ্ধান্ত বলেই মনে হয়।
নতুন মন্ত্রিসভায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন সাবের হোসেন চৌধুরী। গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স ২০২১ অনুযায়ী বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি দেশের মধ্যে সপ্তম অবস্থানে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চ্যালেঞ্জ সাফল্যের সঙ্গে মোকাবেলা করা ও খাপ খাইয়ে চলা বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় ভৌত-প্রাকৃতিক চ্যালেঞ্জ। একই সঙ্গে ক্রমবর্ধমান শিল্পায়ন, নগরায়ন, আধুনিকায়ন এবং জনসংখ্যা-উৎপাদন-ভোগ বৃদ্ধির পরিবেশগত অভিঘাত সুষ্ঠুভাবে মোকাবিলা করা আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই দুই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিগত সময়কালে আওয়ামী লীগ সরকার যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছে এবং আগামীতে এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
সাবের হোসেন চৌধুরী বিগত সরকারের সময়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং একাদশ জাতীয় সংসদে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি ২০২৩ সালের জুন মাসে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূত হিসেবে নিযুক্ত হন এবং বিশ্বব্যাপী জলবায়ু আলোচনায় বাংলাদেশ ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করেন। তিনি রাষ্ট্রীয় নীতির অন্যতম মৌলিক নীতি হিসেবে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের (অনুচ্ছেদ ১৮ক) সুরক্ষা ও উন্নতি সম্পর্কিত বাংলাদেশের সংবিধানে একটি নতুন বিধানের প্রস্তাবের সূচনা করেন।
এছাড়াও তিনি জলবায়ু পরিবর্তন, তীব্রতা এবং দুর্যোগের ফ্রিকোয়েন্সি, সম্পদের স্থায়িত্ব, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি, খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর বিশেষভাবে কাজ করেছেন। এ মন্ত্রণালয়টি তার জন্য একটি চিরচেনা পথ হিসেবেই বিবেচিত হওয়ার কথা এবং আগামীতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়কে একটি অনন্য উচ্চতায় অধিষ্ঠিত করতে পারবেন বলেই মনে হয়।
এছাড়াও বর্তমান মন্ত্রিসভার মধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের গুরুত্ব অপরিসীম হবে। উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুস শহীদ কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে কৃষিখাতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। এ উন্নয়নকে টেকসই এবং ঊর্ধ্বগামী করতে হলে প্রযুক্তি নির্ভর কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। কৃষি পণ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণ, বাযোটেকনোলজিক্যাল অ্যাপ্লিকেশন আগামী দিনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বর্তমান কৃষি মন্ত্রীর রয়েছে বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা। তার এ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এ মন্ত্রণালয়কে তিনি এগিয়ে নিবেন সেই প্রত্যাশা থাকবে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের। আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে এ মন্ত্রণালয়টিতে প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী হিসেবে একজন কৃষিবিদকে সংযোজন করা গেলে সরকার তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেশ কয়েকজন কৃষিবিদ নির্বাচিত হয়েছেন তাদের যে কাউকে এখানে বিবেচনা করা যেতে পারে।
একইভাবে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্মার্ট টেকসই প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে যেখানে মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালাম। তার দীর্ঘ সামরিক কর্মজীবনের পাশাপাশি রয়েছে রাজনৈতিক পথচলা। ব্যক্তিজীবনে অত্যন্ত সফল আবদুস সালাম পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সুনাম বাড়াবে বলেই বিশ্বাস। এ মন্ত্রণালয়টিতে বিদায়ী মন্ত্রিসভার টেকনোক্র্যাট প্রতিমন্ত্রী প্রফেসর ড. শামসুল আলমকে পুনরায় টেকনোক্র্যাট প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দেখতে পেলে ভাল হতো। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং পরবর্তীতে টেকনোক্র্যাট প্রতিমন্ত্রী হিসেবে রয়েছে তার বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার। তার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ যে পরিকল্পনায় অগ্রসর হচ্ছে তা অনেকটাই সফল হবে বলে আমার বিশ্বাস।
বরাবরের মতো এবারও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে রয়েছে একাধিক মন্ত্রণালয় (মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ; প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়; সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ; বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়; সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়; শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়) যেগুলো তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাবে এতে কোন সন্দেহ নাই।
উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বর্তমান মন্ত্রিসভা নির্বাচনী ইশতেহারের সঙ্গে অত্যন্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রধানমন্ত্রীর একটি স্মার্ট মন্ত্রিসভা। ১৯৪১ সালের মধ্যে সাংস্কৃতিক মুক্তির, অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল, অন্তর্ভুক্তিমূলক, উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে স্বপ্ন নির্ধারণ করা হয়েছে বর্তমান মন্ত্রিসভার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সেই স্বপ্নের বাস্তবিক রূপ দিতে তারা অনেকটাই এগিয়ে যাবে, এ প্রত্যাশা আমাদের সকলের।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)