চাল রপ্তানিতে ভারত সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষের খাদ্যের জন্য অপরিহার্য চাল। এই চাল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা কী প্রভাব ফেলতে চলেছে বিশ্বে?
গত ২০ জুলাই ভারত নন-বাসমতি সাদা চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ করে। এরপর যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার ভারতীয় মুদি দোকানগুলো আতঙ্কিত হয়ে দাম বাড়িয়ে দেয়।
আইএমএফ’র প্রধান অর্থনীতিবিদ পিয়েরে-অলিভিয়ার গৌরিঞ্চাস মনে করছেন, নিষেধাজ্ঞার ফলে দাম বেড়ে যাবে এবং এই বছর বিশ্বব্যাপী শস্যের দাম ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
বিশ্বে প্রধানত চার ধরণের চাল রপ্তানি করা হয়। সরু লম্বা দানাযুক্ত ‘ইন্ডিকা চাল’ যা বিশ্ব বাণিজ্যের সিংহভাগই দখল করে আছে। বাকিগুলো বাসমতির মতো সুগন্ধি চাল, ছোট দানাযুক্ত জাপোনিকা, সুশি এবং সুসি ও রিসোটস তৈরিতে ব্যবহৃত আঠালো চাল যা মিস্টি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
ভারত বিশ্বের শীর্ষ চাল রপ্তানিকারক। শস্যের বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রায় ৪০ শতাংশ এর দখলে। এরপর রয়েছে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান। চালের প্রধান ক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে চীন, ফিলিপাইন ও নাইজেরিয়া। ইন্দোনেশিয়া এবং বাংলাদেশের মতো দেশগুলো অভ্যন্তরীণ সরবরাহের ঘাটতি হলে চাল আমদানি করে থাকে। আফ্রিকায় চালের ব্যবহার বেশি এবং ক্রমবর্ধমান। কিউবা এবং পানামার মতো দেশে এটি শক্তির প্রধান উৎস।
গত বছর ভারত ১৪০টি দেশে ২২ মিলিয়ন টন চাল রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে ছয় লাখ টন ছিল অপেক্ষাকৃত সস্তা ইন্ডিকা সাদা চাল। ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী যত চাল আমদানি-রপ্তানি হয়েছে তার ৭০ শতাংশ ছিল ইন্ডিকা চাল, আর এখন ভারত সেই চাল রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) বাজার বিশ্লেষক সিরলে মুস্তাফা বলেন, ভারতের চালের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়াটা ভুল সময়ে এসেছে।
সমগ্র বিশ্বেই চালের সরবরাহ চাপের মধ্যে রয়েছে, কারণ বাজারে নতুন ফসল আসতে এখনও প্রায় তিন মাস বাকি। দক্ষিণ এশিয়ায় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, ভারতে মৌসুমি বৃষ্টিপাত এবং পাকিস্তানে বন্যা এই সরবরাহকে আরও প্রভাবিত করেছে। সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় ধানের দামও বেড়েছে। তাছাড়া মুদ্রার অবমূল্যায়নের ফলে অনেক দেশের আমদানি খরচ বেড়েছে, যখন উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি বাণিজ্যের ঋণের খরচ বাড়িয়েছে।
মুস্তফা বলেছেন, আমরা এমন পরিস্থিতিতে আছি যেখানে আমদানিকারকরা বাধার মধ্যে পড়েছেন। এসব আমদানিকারক মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারবেন কিনা তাই এখন দেখার বিষয়। ভারতের ৪১ মিলিয়ন টন চাল মজুদ রয়েছে। যা প্রয়োজনে তুলনায় প্রায় ৩ গুণ। এসব চাল দেশটির ৭০ কোটি মানুষকে কম দামে দেওয়া হয়।
প্রায় ৪২টি দেশে চাল আমদানির অর্ধেকেরও বেশি ভারত থেকে করে থাকে এবং অনেক আফ্রিকান দেশে ৪০ শতাংশ চাল ভারত থেকে রপ্তানি হয়। এই নিষেধাজ্ঞা দুর্বল লোকদের সবচেয়ে বেশি আঘাত করে কারণ তারা তাদের আয়ের একটি বড় অংশ খাদ্যর পেছনে ব্যয় করে।
বিশ্বে খাদ্যপণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা নতুন কিছু নয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর ইন্দোনেশিয়া পাম ওয়েল, আর্জেন্টিনা গরুর মাংস, তুরস্ক এবং কিরগিজস্তান শস্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। কিন্তু ভারতের চাল রপ্তানির বড় প্রভাব পড়বে বিশ্বে। কারণ তাদের রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল অনেক দেশ।