দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে দর্শকের সামনে ‘মুজিব- একটি জাতির রূপকার’। শুক্রবার দেড় শতাধিক প্রেক্ষাগৃহে সিনেমাটি মুক্তি পেল। তার আগে বৃহস্পতিবার রাজধানীর এসকেএস টাওয়ারে সিনেপ্লেক্সে শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত বাংলাদেশ-ভারতের যৌথপ্রযোজনায় নির্মিত সিনেমাটির প্রিমিয়ার অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে যারাই ছবিটি দেখেছেন প্রশংসা করেছেন। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধকালীন বঙ্গবন্ধুর পরিবারের বন্দিজীবন, ‘৭৫-এর ১৫ আগস্ট রাতে সপরিবারে মুজিবকে হত্যার দৃশ্য কাঁদিয়েছে।
বাঙালির জাতির গর্ব শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে নির্মিত এ ছবিটি দেখার অনেকগুলো কারণ আছে
বাংলাদেশের রূপকারের জীবন
আপনি যে কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শ, ধর্ম, বর্ণ বা কর্মের হতে পারেন; কিন্তু বাংলাদেশের রূপকার যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান; এ বিষয়ে কারো দ্বিমত থাকার কথা নয়! বঙ্গবন্ধু না থাকলে হয়তো আজকে স্বাধীন সার্বভৌম লাল-সবুজের বাংলাদেশের জন্মই হতো না। তাই এই মানুষটির জীবনের জানা-অজানা গল্প জানতে নতুন প্রজন্মকে অবশ্যই ‘মুজিব’ ছবিটি আগে দেখা উচিত।
ইতিহাসের নেপথ্য কারিগর যারা
বাংলাদেশে সৃষ্টির নেপথ্যে রয়েছে বহু ইতিহাস। বৃটিশদের শাসন থেকে বেরিয়ে পাকিস্তানিদের হাতে জিন্মি ছিল তৎকালীন এদেশের জনগণ। তাদের মুক্তির বার্তা এবং নতুন করে স্বপ্ন দেখাতেন যারা, ‘মুজিব’ এ আছে সেইসব নেপথ্য কারিগররাও। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা ভাসানী থেকে শুরু করে ‘ইত্তেফাক’ সম্পাদক মানিক মিয়া সহ বহু নেপথ্য কারিগর!
তথ্যচিত্র নয়, একটি পরিপূর্ণ সিনেমা ‘মুজিব’
সাধারণত কোনো মহান ব্যক্তির জীবনী অবলম্বনে নির্মিত বায়োপিকে তথ্যের ছড়াছড়িই বেশী থাকে! কিন্তু শ্যাম বেনেগাল নির্মিত ‘মুজিব’ সেই ধারণা পাল্টে দিবে। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ক্ষুণ্ণ না করেও সিনেমাটিক ট্রিটমেন্টের প্রভাবে ‘মুজিব’ হয়ে উঠেছে পরিপূর্ণ সিনেমা! দর্শকের বোরিং লাগার সুযোগ নেই!
১৫ আগস্টের বেদনাদায়ক দৃশ্যায়ণ
ইতিহাস যাকে ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি’ হিসেবে বিনির্মাণ করেছিল, কৃতঘ্ন ঘাতকেরা ১৫ আগস্ট সেই বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করলো। সেই রাতের নির্মমতা ‘মুজিব’ এ যে গুরুত্ব দিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে, দর্শকের হৃদয় ক্ষতাক্ত হবে। ছুঁয়ে যাবে পৃথিবীর যে কোনো সীমারের হৃদয়!
‘মুজিব’ এর পরিচালক বিখ্যাত শ্যাম বেনেগাল
ভারতীয় সিনেমার সবচেয়ে প্রতিভাবান নির্মাতাদের একজন শ্যাম বেনেগাল। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই নতুন নতুন চমক উপহার দিচ্ছেন সিনেমার দর্শকদেরকে। অঙ্কুর, মন্থর, ত্রিকাল, জুনুন, মান্ডি এবং বোস দ্য ফরগটেন হিরোর মতো সিনেমা তার ঝুলিতে। এমন কিংবদন্তী নির্মাতার হাতে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সিনেমাটির দায়িত্ব দেয়া নিয়েও শুরুতে হয়েছিলো সমালোচনা। অনেকেই সন্দিহান ছিলেন, অন্য দেশের একজন সিনেমায় ‘মুজিব’কে ঠিকঠাক তুলে ধরতে পারবেন তো? বাঙালির আবেগ স্পর্শ করতে পারবেন তো বেনেগাল? পর্দায় ‘মুজিব- একটি জাতির রূপকার’ দেখে সেই সিদ্ধান্ত দর্শকই নিক!
‘মুজিব’ এ তারকার মহামিলন
একসঙ্গে এতো তারকার ছড়াছড়ি বাংলাদেশের সিনেমা ইতিহাসে দেখা যায়নি। শতাধিক তারকাদের মহামিলন ঘটেছে ‘মুজিব’ সিনেমাটিতে। সেই সঙ্গে আছেন ভারতের গুণী অভিনয়শিল্পীরাও। কে নেই সিনেমায়!
পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন শুভ-তিশা
মুজিব চরিত্রে কতোটা দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন আরিফিন শুভ, সেটা সিনেমা না দেখলে শুধু ট্রেলার দেখে বোঝা মুশকিল হবে! চরিত্র নিয়ে শুভর ডেডিকেশন, একাগ্রতা, পরিশ্রম- সবকিছু উপলব্ধি করা যাবে পুরো সিনেমায়! তার সাথে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা। সিনেমাটি দেখার পর মনে হবে, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছার চরিত্রে তিশার বিকল্প হয়তো আর কেউ ছিলো না!
একটি ব্যয়বহুল সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতা
এই সিনেমার বাজেট নিয়ে শুরু থেকেই ছিলো না কোনো লুকোছাপা। বিশাল ক্যানভাসের ‘মুজিব’ সিনেমাটি নির্মাণে ব্য়য় হয়েছে ৮৩ কোটি টাকা। প্রথমবার দেশী প্রেক্ষাপটে এতো বড় বাজেটের সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতা নিতে হলেও ‘মুজিব’ দেখা উচিত।