
স্মরণকালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে তুরস্ক ও সিরিয়া। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এই ভয়াবহতায় দেশ দু’টির পাশাপাশি থমকে দাঁড়িয়েছে পুরো বিশ্ব। বিশেষ করে গৃহযুদ্ধকবলিত সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এখন যেন থমকে যাওয়া এক জনপদ। ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত হয়ে পড়া অঞ্চল দু’টি খুব কাছাকাছি হলেও উদ্ধার কাজে রয়েছে আকাশ-পাতাল পার্থক্য।
গত সোমবার ৬ ফেব্রুয়ারি দিনটিতে তুরস্ক-সিরিয়ার পাশাপাশি পুরো বিশ্ব কেঁপে উঠেছে। ভয়াবহ এক ভূমিকম্পের সাক্ষী হয়েছে বিশ্ব। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে পরিবর্তন হয়েছে তুরস্ক ও উত্তর সিরিয়ার দৃশ্য। মুহূর্তে ধূলিসাৎ হয়ে পড়ে শত শত দালান।
সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, মৃ্তের সংখ্যা ৪৬ হাজার ছাড়িয়েছে। তুরস্কে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার ৬৪২ জনে। আর প্রতিবেশী দেশ সিরিয়ায় পাঁচ হাজার ২৮ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। যদিও এই সংখ্যা কয়েকদিন ধরে একই রকম দেখাচ্ছে।
উদ্ধারকাজে বৈষম্য

তুরস্কে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর মৃতদেহের পাশাপাশি যখন জীবিত দেহ একের পর এক উদ্ধার হচ্ছিল। তখনও সিরিয়ার মানুষ একটু সাহায্যের আশায় তাকিয়ে ছিল বিশ্বের দিকে। এক দশকের গৃহযুদ্ধ সিরিয়ার এ অঞ্চলকে অনেকটা তছনছ করে দিয়েছে। সেইসঙ্গে সোমবারের ভূমিকম্পের ভয়াবহতা এ অঞ্চলের মানুষের মুখ থেকে কেড়ে নিয়েছে হাসি।
ভয়াবহ এ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর তুরস্কে সরকারি-বেসরকারি ও বাইরের দেশের পক্ষ থেকে উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা শুরু হলেও সিরিয়ার অবস্থা এর বিপরীত। দেখা দিয়েছে, খাবারসহ জরুরি নানা পণ্যের সংকট। জাতিসংঘের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে আট লাখের বেশি মানুষ পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবারের সংকটে রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
তুরস্কে ক্রেন, প্যারামেডিকস এবং স্নিপার কুকুরসহ হাজার হাজার উদ্ধারকর্মী রাস্তায় জ্যাম করেছে এবং এখনও বেঁচে থাকাদের খুঁজে বের করার জন্য কাজ করছে। অপরদিকে সিরিয়া অংশে এর কিছুই চলছে না। ভূমিকম্প দেশের সীমানা মেনে ক্ষতি করে না। তবে উদ্ধার কাজে কেন দুই দেশের মধ্যে এত ব্যবধান? আন্তর্জাতিক ত্রাণ প্রচেষ্টা যেন সীমানার ওপর ভিত্তি করেই পরিচালিত হচ্ছে।
দেশটির ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা থাকায় বাইরের কোনো দেশ থেকে সেখানে ঢোকা যাচ্ছিল না। ভারী ও আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে সিরিয়ার আলেপ্পো অঞ্চলে উদ্ধারকাজ থমকে আছে। নেই সেরকম কোনো ত্রাণ তৎপরতাও। অথচ বিবিসি বলছে, তুরস্কে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে এবং সাহায্য সংস্থাগুলো বলছে যে, সিরিয়ায় এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
সহায়তা পাঠানো যাচ্ছে না কেন!
উদ্ধার তৎপরতায় শুরু থেকে দেশটিতে একটি মাত্র বর্ডার গেট খোলা ছিল, যার মাধ্যমে জাতিসংঘ ত্রাণ সামগ্রী পাঠানোর চেষ্টা করছিল। যা ক্ষতিগ্রস্থদের তুলনায় খুবই কম। এরপর গত ১৪ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের শিরোনাম হয় সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদ।
যেখানে বলা হয়, সিরিয়া সরকার নতুন দু’টি সীমান্ত গেট খুলে দেওয়ার সম্মতি জানিয়েছে। যার মাধ্যমে জাতিসংঘ ত্রাণ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। গেট দু’টি আগামী তিন মাসের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা থাকায় বাইরের কোনো দেশ সেখানে সহায়তা করার সুযোগ পাচ্ছে না। তাই শুধুমাত্র জাতিসংঘের দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে লক্ষ লক্ষ সিরিয়ানকে।
এর মধ্যে সর্বশেষ বিবিসি থেকে পাওয়া তথ্যনুযায়ী, সিরিয়ার যুদ্ধ থেকে পালিয়ে যে হাজার হাজার শরণার্থী সীমান্ত পেরিয়ে তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছিল, ভূমিকম্পের পর এখন তাদের ফিরে যেতে হচ্ছে। শরণার্থীরা তাদের নিজেদের বাড়িঘরে ফিরে যাওয়ার আশায় সিরিয়ার সীমান্তে এসে হাজির হয়েছে।
যদিও তুরস্ক বলছে, তারা এই শরণার্থীদের ছয় মাসের জন্য ফিরে যেতে দেবে।
উদ্ধারের মাঝে ক্ষেপনাস্ত্র হামলা!
সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের দেওয়া এক তথ্য অনুযায়ী, সিরিয়ার উত্তর সীমান্তে এখনো্ উদ্ধার কাজ চলছে। এরই মাঝে দেশটির রাজধানী দামেস্কে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ১৫ জন নিহত হয়েছে এবং একটি ভবন ধ্বংস হয়েছে। নিহতদের মধ্যে বেসামরিক নাগরিকও রয়েছে। রোববার ১৯ ফেব্রুয়ারি ভোরে দামেস্কের কাফর সুসা আবাসিক এলাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটে।
সিরিয়ায় ২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরাইল দেশটিতে অসংখ্যবার বিমান হামলা চালিয়েছে। কিন্তু আবাসিক এলাকায় হামলা চালানোর ঘটনা খুবই কম।
সর্বশেষ এ হামলা কাফর সুসায় চালানো হয় যেখানে সিনিয়র কর্মকর্তাদের আবাসস্থল, নিরাপত্তা সংস্থাসমূহ ও গোয়েন্দা সদরদপ্তরের কার্যালয় রয়েছে। ব্রিটেন ভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস প্রধান রামি আবদেল রহমান বলেছেন, রোববারের হামলাই সিরিয়ার রাজধানীতে ইসয়য়েলের চালানো সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা।
বিজ্ঞাপন