রোজার মাস শেষ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে। আর এরই সাথে সাথে বিশ্বের নানান প্রান্তে থাকা মুসলমানরা ঈদুল ফিতরের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। চাঁদ দেখা এবং আপনি বিশ্বের কোথায় আছেন, তারওপর নির্ভর করে সম্ভবত ২২ এপ্রিল শনিবার থেকে ঈদ উদযাপন শুরু হবে। মুসলমানদের সাধারণত ঈদের আগের রাতে চাঁদ দেখার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আলজাজিরা বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশের সাম্ভাব্য ঈদের দিন এবং তাদের আয়োজনকে একটি প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে।
প্রতিবেদনে প্রকাশ, যে দেশগুলো ২৩ শে মার্চ রমজান শুরু করেছে তারা ২০ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ঈদের চাঁদ দেখতে শুরু করবে। যদি নতুন চাঁদ দেখা যায়, তাহলে পরের দিন ঈদ হবে। অন্যথায় তারা ৩০ রোজা পূর্ণ করতে আরও একদিন রোজা রাখবে।
যখন চাঁদ দেখা যাবে তখন টেলিভিশন, রেডিও স্টেশন এবং মসজিদে তা ঘোষণা করে জানিয়ে দেওয়া হবে।
যুক্তরাজ্যের এইচএম নটিক্যাল অ্যালম্যানাক দপ্তর জানিয়েছে, নতুন চাঁদ ২০ এপ্রিল বৃহস্পতিবার গ্রিনিচ মান সময় বিকেল ৪ টা ১৩ মিনিটে দৃশ্যমান হবে তবে তা শুধুমাত্র উত্তর আমেরিকার কিছু নির্দিষ্ট স্থানে।
তাই বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষের উচিত হবে, আগামীকাল সন্ধ্যার পর শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার জন্য খালি চোখে পশ্চিম আকাশে নজর রাখা।বিশ্বের সিংহভাগ লোক পরদিন শুক্রবার ২১ এপ্রিল নতুন চাঁদ দেখতে পারবে। অর্থাৎ ঈদ শুরু হবে ২২ এপ্রিল শনিবার। দক্ষিণ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের কিছু অংশসহ দক্ষিণ গোলার্ধের কয়েকটি দেশে শুক্রবার রাতে চাঁদ দেখতে না পাবার সম্ভাবনা বেশি।
আর আগামীকাল শুক্রবার বাংলাদেশের আকাশে পবিত্র শাওয়ালের চাঁদ দেখা গেলে পরের দিন শনিবার (২২ এপ্রিল) ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। আর বাংলাদেশের কোথাও চাঁদ দেখা না গেলে শনিবার রমজান মাসের ৩০ দিন পূর্ণ হবে। সেক্ষেত্রে ঈদ উদযাপিত হবে রোববার (২৩ এপ্রিল)।
দেশভেদে ঈদ উদযাপন:
সাধারণত মুসলিম দেশগুলোতে ঈদ উপলক্ষে তিন দিন সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করা হয়। যদিও ছুটির দিনের সংখ্যা দেশ অনুসারে পরিবর্তিত হয়ে থাকে।
সব জায়গাতেই ঈদের উদযাপন নামাজের মাধ্যমেই শুরু হয়ে থাকে। ফজরের নামাজের পর ঈদের নামায অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। ঐতিহ্যগতভাবে একটি খোলা জায়গায় এই নামায অনুষ্ঠিত হয়। সবাই আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার বলে তাকবীর পাঠ করে।
নামাজের আগে মিষ্টি কিছু খাওয়ার রেওয়াজ আছে, যেমন খেজুর, পায়েস বা মিষ্টি। সবাই সাধারণত আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব এবং প্রতিবেশীদের সাথে সাক্ষাৎ এবং ঘোরাঘুরি করে দিনটি অতিবাহিত করে।
প্রতিটি দেশের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি জাতীয় খাবার রয়েছে যা ঈদের আগের দিন প্রস্তুত করে রাখা হয়।
মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে, ঈদের সময় খেজুর ভর্তি সুজির কুকিজ একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। সেমাই, ক্ষীর, জর্দা, বাদাম বা কিশমিশ দিয়ে সজ্জিত করা দুধের পুডিং হল ভারত ও পাকিস্তান জুড়ে পরিবারগুলোর ঈদের বিশেষত্ব।
বাকলাভা নামের এক ধরণের খাবার তুরস্কে ঈদের জন্য প্রস্তুত করা হয়। পেস্তা ও অন্যান্য বাদাম এবং কমলা রস দিয়ে এটি বানানো হয়ে থাকে।
আমলা নাইজেরিয়াতে খুবই পছন্দের একটি খাবার। ইওয়েডু দিয়ে তৈরি হয় আমলা। ইওয়েডু হল একটি ঐতিহ্যবাহী উদ্ভিদের স্যুপ যা রুটির সাথে পরিবেশন করা।
আখরোট বা আপেল সিরাপ দিয়ে তৈরি ‘তুফাহিজা’ বসনিয়া ও হার্জেগোভিনায় জনপ্রিয় ঈদের খাবার।
মরক্কোর মানুষেরা ঈদের দিন ‘বাস্তিলা’ নামের একটি খাবার খান। কবুতর কিংবা মুরগির মাংস দিয়ে খাবারটি বানানো হয়।
শিশুরা নতুন জামাকাপড় পরে, আনন্দ করার জন্য উপহার এবং সালামী (অর্থ) দেওয়া হয় তাদের। অনেকেই পরিবারের মৃত সদস্যদের শ্রদ্ধা জানাতে কবরস্থানে যায়। ঈদ উপলক্ষে শহরগুলোকে আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়। সবাই নামায পরে একে ওপরের সাথে কোলাকোলি করে। একজন আরেকজনকে জানায় ‘ঈদ মোবারক’।