চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু না হলে যুক্তরাষ্ট্র কী করবে?

মার্কিন ‘ফরেন পলিসি’ ম্যাগাজিনের সাউথ এশিয়া ব্রিফ রাইটার এবং এবং উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইন্সটিটিউটের পরিচালক মাইকেল কিউগ্যলম্যান একটি বিশ্লেষণ লিখেছেন। নিবন্ধটির একটি অনুবাদ প্রকাশিত হলো।

বাংলাদেশে  অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন বাধাগ্রস্ত এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করার প্রচেষ্টায় জড়িত ব্যক্তিদের ভিসা প্রত্যাখ্যান করার অধিকার সংরক্ষণ করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন গত সপ্তাহে একটি নীতি ঘোষণা করেছেন। আগামী জানুয়ারিতে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজনৈতিক বিরোধিতা, মুক্ত গণমাধ্যম এবং ভিন্নমতের বিষয়ে কঠোরতা অবলম্বন করছেন। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের আগের দুটি নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগও আছে।

যদিও কঠোর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন হিসাব-নিকাশ বিস্ময়কর নয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক শ্রেণীর অনেক সদস্য নিয়মিত যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করেন; কয়েকজনের পরিবারের সদস্য যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যবোধভিত্তিক বৈদেশিক নীতির উদাহরণ হিসেবে দেখাতে চায়, যা দেশে দেশে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের উপর জোর দেয়। মার্কিন কর্মকর্তারা বেছে বেছে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, নয়াদিল্লিতে গণতান্ত্রিক পশ্চাদপসরণ সম্পর্কে ওয়াশিংটন প্রকাশ্যে খুব কমই বলেছে। তবে বাংলাদেশের জন্য নীতিটি শক্তিশালী ও ধারাবাহিক।

মার্কিন ‘ফরেন পলিসি’ ম্যাগাজিনের সাউথ এশিয়া ব্রিফ রাইটার এবং এবং উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইন্সটিটিউটের পরিচালক মাইকেল কিউগ্যলম্যান

বাইডেন প্রশাসন চীনের অর্থনৈতিক সহায়তার উপর দেশটির নির্ভরতা কমাতে বাংলাদেশের সাথে তার সম্পর্ক জোরদার করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সাথে সকল দ্বিপাক্ষিক সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে গণতন্ত্রকে সর্বাগ্রে রেখেছে। মার্কিন কর্মকর্তারা ঢাকায় গণতান্ত্রিক পশ্চাদপসরণকে সমালোচনা করেছেন, এবং ওয়াশিংটন এ সমালোচনাকে ভয় দেখিয়ে সমর্থন করতে ভয় পায়নি। ২০২১ সালে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য বাংলাদেশের র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এর কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের গুরুত্বের কথা বলেন, কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে তারা এটা বলতে চান না যে কারচুপির ভোটের ক্ষেত্রে দেশটির প্রতি মার্কিন নীতির কোনো পরিবর্তন হবে কিনা। সম্ভবত সেই সিদ্ধান্ত এড়ানোর লক্ষ্যে নতুন ভিসা নীতি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের জন্য একটি শক্তিশালী প্রণোদনা ।

বাংলাদেশে গণতন্ত্রের উন্নয়নে অতীত মার্কিন প্রচেষ্টা নড়বড়ে হয়েছে এবং ওয়াশিংটনের উহ্য সমালোচনার প্রতি ঢাকা সদয় প্রতিক্রিয়া জানায়নি। বাংলাদেশের কিছু ব্যক্তি বলছেন যে যুক্তরাষ্ট্র শেখ হাসিনার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলের প্রতি বিরক্ত এবং জানুয়ারিতে বিরোধীদল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের জয়ী হওয়াকে পছন্দ করবে। গত মাসে একটি সংসদীয় ভাষণে শেখ হাসিনা পরোক্ষভাবে ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে তার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টার অভিযোগ করেন।

অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে বাধা দেন এমন “যেকোনো” ব্যক্তির জন্য ভিসা নীতি সুস্পষ্টভাবে প্রযোজ্য হবে। বাংলাদেশে সরকারী ও বিরোধী দলের নেতারা উভয়েই নীতিটির পক্ষে অনুকূল প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। দু’ পক্ষই বলছেন, ভিসা নীতিটির কারণে অন্য পক্ষ বিপদে পড়বে। শুধু মূল্যবোধ-ভিত্তিক মার্কিন বৈদেশিক নীতি হয়তো বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনাকে উস্কে দিতে পারে, কিন্তু এই সর্বশেষ ব্যবস্থা তা প্রশমিতও করতে পারে।

বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এই নীতিকে জনকূটনীতির সাফল্য হিসাবে চিত্রিত করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন যে ওয়াশিংটন এবং ঢাকা উভয়ই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত। তবুও, এটি জিজ্ঞাসা করা গুরুত্বপূর্ণ যে কেন বাইডেন প্রশাসন ঢাকাকে তার দেশে দেশে গণতন্ত্র বিকাশের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে, বিশেষ করে এমন একটি দেশ যার সঙ্গে ওয়াশিংটন সম্পর্ক শক্তিশালী করতে আগ্রহী। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বাংলাদেশ যেমন চীনের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, তেমনি মিয়ানমারের মতো রাষ্ট্রও নয়।

উত্তর সহজ হতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে যে বাংলাদেশ মানবাধিকার এবং গণতন্ত্র সম্পর্কে তার দীর্ঘস্থায়ী উদ্বেগের সমাধান করেনি, যা বাইডেন প্রশাসনের আগে থেকেই ছিল। সাম্প্রতিক ঘোষণা কেবল নীতির ধারাবাহিকতাকে প্রতিফলন এবং স্ক্রুগুলোকে শক্ত করা।

এটাও স্পষ্ট যে গণতন্ত্রের এজেন্ডা বাস্তবায়নের নামে বাংলাদেশকে চীনের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি কিছুটা বাড়তে পারে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল বাংলাদেশের শীর্ষ রপ্তানি গন্তব্য এবং বিদেশী সরাসরি বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় উৎস। ঢাকা চীনের অবকাঠামোগত সহায়তাকে মূল্য দিতে পারে, তবে ওয়াশিংটনের সাথে এর বাণিজ্যিক অংশীদারিত্বও গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে; ঢাকা তিন শক্তির সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে চায়।

ভূ-রাজনৈতিক বিবেচনাকে বাদ দিলেও ওয়াশিংটনের জন্য একটি সম্ভাব্য নীতিগত সমস্যা দেখা দিতে পারে: নতুন মার্কিন ভিসা নীতি সত্ত্বেও যদি বাংলাদেশের ২০২৪ সালের নির্বাচন অবাধ বা সুষ্ঠু না হয় তবে কী হবে? সেই সময়ে ওয়াশিংটনকে এমন কিছু করতে হতে পারে যা তারা এড়ানোর আশা করে এবং ঢাকার প্রতি তার নীতি পুনর্মূল্যায়ন করতে হতে পারে।

 

মাইকেল কিউগ্যলম্যান,পরিচালক, সাউথ এশিয়া ইন্সটিটিউট, উইলসন সেন্টার, সাউথ এশিয়া ব্রিফ রাইটার, ফরেন পলিসি ম্যাগাজিন