ইউক্রেনে আক্রমণ করার পর এই প্রথম চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং রাশিয়া সফরে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসছেন। দুই ক্ষমতাধর দেশের নেতাদের এই বৈঠক থেকে কী আশা করা যায়, তা নিয়ে একটি সার-সংক্ষেপ বের করার চেষ্টা করছে আন্তর্জাতিক বার্তাসংস্থা বিবিসি।
বিবিসির রাশিয়ার সম্পাদক স্টিভ রোজেনবার্গ এবং চীনের সংবাদদাতা স্টিফেন ম্যাকডোনেলের বিবেচনায় নানা বিষয় উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে প্রকাশ, ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ পরিকল্পনা অনুযায়ী হচ্ছে না। নানান অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার পর এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত পুতিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের জন্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। ক্রেমলিন যখন তীব্র আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে রয়েছে তখন চীনের রাষ্ট্রপতির রাষ্ট্রীয় সফর রাশিয়া এবং পুতিনের প্রতি সমর্থনের একটি স্পষ্ট লক্ষণ।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি একবার প্রেসিডেন্ট পুতিনকে তার ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’ বলেছিলেন। উভয় নেতার মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। তারা উভয়ই কর্তৃত্ববাদী নেতা এবং উভয়েই মার্কিন আধিপত্যকে মেনে নেয় না। মস্কোতে তারা তাদের দুই দেশের মধ্যেকার অংশীদারিত্ব আরও গভীর করার বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পুতিনের একজন বন্ধু প্রয়োজন। পুতিন মিত্রদের সন্ধান করছে এবং চীনের পাশাপাশি ভারত, ল্যাটিন আমেরিকা এবং আফ্রিকার কিছু অংশের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করছেন। পুতিন তার পশ্চিমা বিরোধী বিশ্ব গড়ে তুলতে চাইছেন। যুদ্ধ রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, পররাষ্ট্র নীতি এবং অর্থনৈতিক নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে।
ইউক্রেনকে ধ্বংস করার একটি ইচ্ছা হয়ত পুতিনের আছে। এর জন্য দরকার অস্ত্র ও অর্থ। চীন রাশিয়াকে অন্তত অস্ত্রের উপাদান এবং বেসামরিক প্রযুক্তি সরবরাহ করবে যা সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যেতে পারে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলা করতে এবং রুশ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য রাশিয়া চীনের সাথে প্রাথমিকভাবে জ্বালানি খাতে বাণিজ্য বাড়াচ্ছে। পুতিন-শি আলোচনায় তেল, গ্যাস এবং জ্বালানি পাইপলাইনগুলো আলোচনায় থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অনেক বিশ্লেষক চিন্তা করছেন, চীন কি করতে পারে যদি মনে হয় রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে পরাজয়ের মুখোমুখি হচ্ছে। চীন কি তখন এটি ঘটতে দেবে, নাকি রাশিয়ান সেনাবাহিনীকে জয় লাভের জন্য সাহায্য করবে।
গত সপ্তাহে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, কিয়েভ ও মস্কোর মধ্যে শান্তি আলোচনা এগিয়ে নিতে চীন গঠনমূলক ভূমিকা রাখবে। পুতিন বেইজিংয়ের এ অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, রুশ-চীনা সম্পর্ক সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে।
পুতিনের আমন্ত্রণে শি সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত মস্কো সফর করছেন। সর্বশেষ গত বছর চীনে দুজনের দেখা হয়েছিল। সে সময় পুতিন বেইজিংয়ে শীতকালীন অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। এছাড়া সেপ্টেম্বরে উজবেকিস্তানে একটি আঞ্চলিক সম্মেলনেও উভয়ের দেখা হয়।