চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

দেশে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এ পর্যন্ত ৩০ লাখ পরিবারকে বিনামূল্যে জমিসহ ঘর করে দিয়েছি, তাদের আত্মনির্ভরশীল হওয়ার ব্যবস্থা করেছি। আরও ৪০ হাজার ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। খবর নিচ্ছি- আর কেউ ভূমিহীন আছে কিনা। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহীন বা ঠিকানাবিহীন থাকবে না। 

প্রধানমন্ত্রী আজ জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনার সমাপনী বক্তব্যে একথা বলেন।

সংসদ নেতা বলেন, দেশের মানুষকে কথা দিয়েছিলাম- ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলবো, আমরা তা গড়ে তুলেছি। একদম ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত আমরা ব্রডব্যান্ড পৌঁছে দিয়েছি। মহামারী কোভিড-১৯ আমরা সফলভাবে মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছি। অনেক উন্নত দেশও বিনামূল্যে ভ্যাকসিন বা করোনা টেস্ট করতে পারেনি, কিন্তু আমরা পেরেছি। সারাবিশ্বের মধ্যে করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশ পঞ্চম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম স্থান অর্জন করেছে।

করোনা পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক সঙ্কটের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সঙ্কট মোকাবেলায় আমরা কৃষি উৎপাদনের ওপর জোর দিয়েছি। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে ১৯ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য মজুদ আছে। যুদ্ধের কারণে সারাদেশে মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়ে গেছে। যত টাকাই লাগুক আমরা যেখান থেকে পারছি আমদানী করছি, যাতে দেশের কোন মানুষের কষ্ট না হয়, সঙ্কটে না পড়ে। টাকার দিকে তাকাচ্ছি না। কারণ আমাদের রাজনীতিই হচ্ছে দেশের মানুষের কল্যাণ করা।

শত বাধা ও প্রতিকূলতা ডিঙ্গিয়ে দেশের উন্নয়নের গতিধারা ধরে রাখতে সক্ষম হওয়ার কথা উল্লেখ করে সংসদ নেতা বলেন, নানা প্রতিকূলতা আমাদের মোকাবেলা করতে হয়েছে। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই তার সরকার দেশের মানুষের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। দেশ আরও এগিয়ে যাক, সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছি। একদিনে শত সড়ক, শত সেতু অতীতে কেউ কোনদিন উদ্বোধন করতে পেরেছে ? এটা আওয়ামী লীগ সরকার পেরেছে।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে চ্যালেঞ্জ ছিল। নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণের এই একটি সিদ্ধান্ত সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পরিবর্তন করে দিয়েছে। আমরাও যে পারি, তা আমরা প্রমাণ করেছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বলতেন, বাঙালি জাতিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। আমিও বলি, বাংলাদেশকে আর কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। ২০২১ সালে আমরা রূপকল্প ঘোষণা করেছিলাম, সেটা আমরা বাস্তবায়ন করেছি। এখন ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা গড়ে তুলবো স্মার্ট বাংলাদেশ। ইনশাআল্লাহ সেই স্মার্ট বাংলাদেশও আমরা গড়ে তুলতে সক্ষম হবো।

প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন নিয়ে সমালোচনার জবাবে বলেছেন, নির্বাচন যে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সুষ্ঠু হয়, অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়, সেটাই এই নির্বাচনের (রংপুর সিটি নির্বাচন, ছয়টি উপ-নির্বাচনসহ সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিভিন্ন নির্বাচন) মধ্যদিয়ে আমরা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি।

তিনি বলেন, আমি মনে করি, এরপরে আর কেউ নির্বাচন নিয়ে কোন কথা উত্থাপন করার সুযোগ পাবে না। কারণ আমরা ক্ষমতায় থাকলেও মানুষের ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য আমরাই সংগ্রাম করেছি। কাজেই সেই ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব বলেই মনে করি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭৫ পরবর্তী অনেক নির্বাচন আমরা দেখেছি। জিয়াউর রহমানের আমলে হ্যাঁ-না ভোট হয়েছে, না বাক্সে কোনো ভোট নেই, পাওয়া যায় না। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দেখেছি- কিভাবে কারচুপি করা হয়েছে। জেনারেল এরশাদের আমলে ৮৬ সালের নির্বাচনে আমরা অংশ নিয়েছিলাম। সেই নির্বাচনের ফলাফল ৪৮ ঘন্টা বন্ধ রেখে, জেনারেল এরশাদ নির্বাচনের ফলাফল পরিবর্তন করান, সেটাও আমরা দেখেছি। খালেদা জিয়া ২০০৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী একতরফা ভোট করেছিলেন। কিন্ত ভোট চুরি করলে, দেশের মানুষ তাদের ছেড়ে দেয় নাই।

ভোট চুরির অপরাধে দেশের জনগণ আন্দোলন করে খালেদা জিয়াকে মাত্র দেড় মাসের মাথায় পদত্যাগে বাধ্য করেছিল। তারপরে নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা ক্ষমতায় আসলাম। তিনি বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনে আবার একটা চক্রান্ত ছিল গ্যাস বিক্রি নিয়ে। কাজেই সেটা নিয়ে বিএনপি-জামাত জোট আসলো ক্ষমতায়। এসে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতিসহ নানারকম অপকর্ম করে, দেশে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করলো যে ইমার্জেন্সি এলো। সেই অবস্থা থেকে দেশকে মুক্ত করে, আমরা দেশে উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছি।

৭৫ পরবর্তী অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পালাবদলের কথা উল্লেখ করে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মাত্র সাড়ে তিন বছর ক্ষমতায় থাকতে পেরেছিলেন। এরপর দেশে দীর্ঘদিন অবৈধ ক্ষমতা দখলের পালা চলেছে। ইতিহাসে মাত্র একবার ২০০১ সালে ক্ষমতার পাঁচ বছর পূর্ণ করে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলাম। এরপর কখনো শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার পালাবদল ঘটেনি।

প্রধানমন্ত্রী নারীর ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, এক সময় দেশের কোন উচ্চ পদে নারীর কোন পদ ছিল না। আমরা ক্ষমতায় এসে সশস্ত্রবাহিনী, বিচারবিভাগসহ সবস্থানে নারীর পদ  নিশ্চিত করেছি। আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছি। দেশের প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজেদের স্মার্ট করে গড়ে তুলতে পারে, সেই ব্যবস্থাও আমরা নিয়েছি। অর্থনৈতিক চাপ সত্বেও আমরা বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের বই দিয়েছি, সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতাসহ প্রায় ২৪ লাখ প্রতিবন্ধিকে বিশেষ ভাতা দিয়ে যাচ্ছি। প্রায় আড়াই কোটি শিক্ষার্থীদের বৃত্তি, উপবৃত্তি দিয়ে যাচ্ছি।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের বর্ণাঢ্য সফল রাজনৈতিক জীবনের কথা তুলে ধরে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, অত্যন্ত প্রাণবন্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি সংসদে শেষ ভাষণ দিয়ে গেছেন। কারণ আমাদের সংবিধানে রয়েছে কেউ দুবারের বেশি রাষ্ট্রপতি পদে থাকতে পারবেন না। সেই ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি। খুব অল্প বয়সে তিনি এই সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। সাতবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। বিরোধী দলে থাকতে তিনি (আবদুল হামিদ) সংসদ উপনেতা, পরে প্রথমে ডেপুটি স্পীকার, এরপর স্পীকার এবং পরবর্তীতে দুইবারের রাষ্ট্রপতি, সব ক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন সফল।

নিজের, সকল সংসদ সদস্য এবং দেশবাসীর পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিক জীবনে তিনি অত্যন্ত সফল। স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন। জাতির পিতার আহ্বানে অস্ত্রহাতে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছেন। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেও রাষ্ট্রপতিকে আমি শ্রদ্ধা জানাই। ডেপুটি স্পীকার ও স্পীকারের দায়িত্ব পালনের সময়ও তিনি সংসদকে সবসময় প্রাণবন্ত রাখতেন। এমনকি মনে হয়, বিরোধী দলের সদস্যদেরও তিনি সমর্থন পেয়েছেন। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে রাষ্ট্রপতি পদ থেকে তিনি চলে যাচ্ছেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবেও তিনি অত্যন্ত সফল ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।

রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় এসময় অংশ নেন বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ, সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, সংসদের প্রধান হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী এবং বিরোধী দলের উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের।