গাজায় যুদ্ধের কারণে মিশরের পর্যটন খাত, গ্যাস রপ্তানি বাণিজ্য এবং সুয়েজ খালের রাজস্ব আয় ক্ষতির মুখে পড়েছে। লোহিত সাগরে জাহাজে হুতিদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণে শিপিং কোম্পানিগুলো নৌ-রুট পরিবর্তন করেছে। এতে সুয়েজ খাল থেকে মিশরের রাজস্ব আয় প্রায় অর্ধেক কমে গেছে।
আল-জাজিরা জানিয়েছে, মিশরের পর্যটন খাত এবং সুয়েজ খাল দেশটির বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের ২টি প্রধান উৎস। দীর্ঘদিন ধরেই পর্যটন শিল্পকে দেশটির জাতীয় আয়ের প্রধান উৎস হিসেবে গড়ে তোলে মিশর। মিশরের পিরামিড, জাদুঘর, রিসোর্ট এবং স্মৃতিস্তম্ভগুলো সারাবিশ্বের দর্শনার্থীদের আকর্ষণের জায়গা। তবে সীমান্তবর্তী গাজা উপত্যকায় যুদ্ধের কারণে মিশরের পর্যটন খাত, গ্যাস রপ্তানি বাণিজ্য এবং সুয়েজ খালের রাজস্ব আয় ক্ষতির মুখে পড়েছে।
২০২০ সাল থেকে মিশরের পর্যটন খাত করোনাভাইরাসের প্রভাব থেকে পুনরুদ্ধারে লড়াই করে আসছিল। এবার গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ ঘিরে পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে দেশটির রাজস্ব আয়ের সম্ভাবনা ব্যাহত হয়ে পড়েছে। এসএন্ডপি গ্লোবাল রেটিং অনুসারে, মিশরের পর্যটন খাতের রাজস্ব আয় গত বছরের তুলনায় ১০-৩০ শতাংশ কমতে যাচ্ছে। যার কারণে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ৪-১১ শতাংশ ব্যয় হতে পারে। পাশাপাশি সংকুচিত হবে দেশটির জিডিপি।
আবার লোহিত সাগরে জাহাজে হুতিদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রভাবও পড়েছে মিশরে। নিরাপত্তার জন্য মিশরের সুয়েজ খালের পরিবর্তে কেপ অফ গুড হোপের আশেপাশের নৌ-রুট পুনরায় ব্যবহার করছে শিপিং কোম্পানিগুলো। ফলে, সুয়েজ খাল থেকে দেশটির রাজস্ব আয় প্রায় অর্ধেক কমে গেছে। আবার তামার গ্যাস ক্ষেত্র থেকে উত্তোলন সাময়িকভাবে বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা সংস্থা। ফলে, গ্যাস আমদানি না করতে পারায় অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানো এবং তরলীকরণ প্ল্যান্ট থেকে এলএনজি রপ্তানি করা বন্ধ হয়ে যায় মিশরের।
ইসরায়েলের হত্যাযজ্ঞ গাজার মোট জনসংখ্যার বড় একটি অংশকে মিশরের রাফাহ অভিমুখে ঠেলে দিয়েছে। বর্তমানে দেশটিতে ৯ মিলিয়ন শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে। রাফাহতে আশ্রয় নেওয়া ফিলিস্তিনিদের ভাগ্য কোনদিকে যাবে, সেই বিষয় নিয়েও সংকটের মধ্যে রয়েছে দেশটি। সিনাই উপদ্বীপে ফিলিস্তিনিদের প্রবেশ ঠেকাতে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সরকার। মিশর-গাজা সীমান্তের ২ মাইল পশ্চিমে প্রাচীর নির্মাণ তৈরির কাজ শুরু করেছে তারা।
অপরদিকে, সুদানে সংঘাতের কারণে ৪ লাখ ৫০ হাজার শরণার্থী মিশরের দক্ষিণ সীমান্তে প্রবেশ করে অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করেছে। তাই গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ এবং লোহিত সাগরের সংকট মোকাবেলায় সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফের সাথে ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ বাড়ানোর বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে মিশর।