রোজার প্রধান দুই অনুষঙ্গ হলো সাহরি ও ইফতার। অন্যান্য ধর্মের সাথে মুসলমানদের রোজার একটি বড় পার্থক্য হচ্ছে সাহরির মাধ্যমে রোজা শুরু করা এবং ইফতারের মাধ্যমে তা শেষ করা। রোজার জন্য আল্লাহ তায়ালার তরফ থেকে বিশেষ ফজিলত তো আছেই, সাথে বোনাস হিসেবে সাহরি ও ইফতারের জন্যও রয়েছে ফজিলত। রোজাদারের জন্য সাহরি ও ইফতারে স্বতন্ত্র কী কী ফজিলত রয়েছে তা বিস্তারিত আলোকপাতের চেষ্টা করবো বর্তমান রচনায়।
সাহরি
আরবি সুহুর (سحور) শব্দ থেকে এসেছে সাহরি, অর্থ: সুবহে সাদিকের পূর্বের খাবার, প্রভাতের আগের খাবার। মূল শব্দ সুহুর হলেও বাংলায় আসার ফলে ভূগোলভেদে উচ্চারণের স্বতন্ত্র বৈশিষ্টের কারণে বাংলা ভাষাভাষী মুসলমান সাহরি, সেহরি, সেহেরি ইত্যাদি বিভিন্নভাবে উচ্চারণ করে থাকেন। ভাষাতাত্ত্বিক ও ধর্মীয়, উভয় দৃষ্টিকোণ থেকেই এটি স্বাভাবিক বিবর্তন, কোনো সমস্যা নেই।
সাহরি বরকতের খাবার। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমরা সাহরি সম্পন্ন করো, কারণ এতে বরকত রয়েছে” (বুখারী শরীফ, ইফা, হাদিস নং ১৮০১)।
অর্থাৎ, যে কোনো হালাল খাবারে বরকত চলে আসবে যদি তা সাহরি হিসেবে খাওয়া হয়।
সাহরি মুসলমানদের জন্য এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের রোজা আর মুসলমানদের রোজার মধ্যে পার্থক্য গড়ে দেয় সাহরি। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “মুসলমানদের এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে রোজার ফারাক হচ্ছে সাহরি” (মুসলিম শরীফ, ইফা, হাদিস নং ২৪২১)।

সেজন্য যত অসুবিধাই থাকুক না কেন, কিছু না কিছু খেয়ে বা পান করে সাহরির মাধ্যমে রোজা রাখা উচিত। এতে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের সাথে পার্থক্য তৈরির সাথে সাথে বরকত হাসিল হবে এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশও মান্য করা হবে।
ইফতার
ইফতার অর্থ রোজা ত্যাগ করা। পরিভাষায়, রোজা ভাঙ্গা/ছাড়ার জন্য নির্দিষ্ট সময়ে যে হালাল খাদ্য গ্রহণ করা হয় তাকে ইসলামী পরিভাষায় ইফতার বলা হয়।
সাহরির মতো ইফতারেও রয়েছে রোজাদারদের জন্য বিশেষ ফজিলত। হাদিসে এসেছে, রোজাদারের জন্য দুইটি খুশীর মুহূর্ত রয়েছে। এক. যখন সে ইফতার করে এবং খুশী হয় ; দুই. যখন সে তার রবের দিদার পাবে এবং খুশী হবে। (বুখারী শরীফ, ইফা, হাদিস নং ১৭৮৩) আল্লাহ তায়ালার সাথে সাক্ষাতের সাথে সাথে রোজাদারের জন্য ইফতারও আনন্দের মুহূর্ত হিসেবে নির্ধারিত হয়েছে। এতেই ইফতারের ফজিলত সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়।
ইফতার করা মুসলমানদের জন্য কল্যাণেরও নিদর্শন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “মুসলমান যতদিন সময়মতো ইফতার করবে, ততদিন তারা কল্যাণের উপর থাকবে” (বুখারী শরীফ, ইফা, হাদিস নং ১৮৩৩)। অর্থাৎ, সময় হওয়া মাত্র যত দ্রুত সম্ভব ইফতার করতে হবে। প্রিয়নবীর ঘোষণা অনুযায়ী এতেই রয়েছে উম্মতের জন্য কল্যাণ। আরেক হাদিসে এসেছে: “আল্লাহর প্রিয়তম বান্দা সে, যে দ্রুত ইফতার গ্রহণ করে” (তিরমিজী শরীফ, ইফা, হাদিস নং ৬৯৮)।
হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদিআল্লাহু আনহাকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: “হে উম্মুল মুমিনীন! মুহাম্মাদ (সাঃ) সাহাবীদের মধ্যে একজন ইফতার ও নামাজে তাড়াহুড়ো করে এবং অন্যজন বিলম্ব করে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, সে কোন ব্যক্তি যে ইফতার ও নামাজে তাড়াহুড়ো করে? আমরা বললাম, আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ রাদিআল্লাহু আনহু। তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনই করতেন” (মুসলিম শরীফ, ইফা, হাদিস নং ২৪২৭)। অর্থাৎ, ইফতার যত দ্রুত সম্ভব করা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত এবং সাহাবায়ে কেরাম তা আমল করতেন।
খেজুর দ্বারা ইফতার শুরু করা সুন্নত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের কেউ যখন ইফতার করে তখন সে যেন খেজুর দিয়ে ইফতার করে, কারণ এতে রয়েছে বরকত” (তিরমিজী শরীফ, ইফা, হাদিস নং ৬৫৫)। খেজুর না থাকলে যে কোনো হালাল খাবারের মাধ্যমে ইফতার গ্রহণ করা যাবে। এতে ইফতারের যে বিশেষ ফজিলত তাতে ঘাটতি হবে না।
রোজাদারের জন্য সাহরি ও ইফতার দুটিই অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ মুহূর্ত। এই ফজিলত যেন উম্মত সঠিকভাবে আয়ত্ত করতে পারে সেজন্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে উৎসাহিত করেছেন। প্রত্যেক রোজাদারের উচিত সাহরি ও ইফতার সঠিকভাবে গ্রহণ করার মাধ্যমে ফজিলতের ভাগীদার হওয়া। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে আমল করার তৌফিক দান করুন, আমিন।