বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অসম আচরণের কোন মানে হয় না বলে উল্লেখ করেছেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সাবেক উপদেষ্টা ব্রহ্মা চেলানি। তিনি বলেন, বাইডেন প্রশাসন পাকিস্তানে অঘোষিত সামরিক আইন পরিস্থিতির বিষয়ে নীরব, অথচ বাংলাদেশে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিচ্ছে!
জাপানভিত্তিক ইংরেজি ভাষার সাপ্তাহিক পত্রিকা নিক্কেই এশিয়ায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ভারতীয় এই উপদেষ্টা বলেন, তবে কি পাকিস্তানের জন্য গণগ্রেফতার, গুম ও নির্যাতন রাজনৈতিক অস্ত্রে পরিণত হয়েছে?
ব্রহ্মা চেলানি নয়াদিল্লি সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের এমেরিটাস অফ স্ট্রাটেজিক স্টাডিস বিভাগের অধ্যাপক। এছাড়া লেখক হিসেবেও তার খ্যাতি রয়েছে। ‘ওয়াটার: এশিয়াস নিউ ব্যাটলগ্রাউন্ড’সহ মোট ৯টি বই লিখেছেন এই ভারতীয় অধ্যাপক।
ব্রহ্মা চেলানি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রচার দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচনী, ভূ-রাজনৈতিক বিবেচনায় বাড়াচ্ছে। গণতন্ত্রের জন্য নিষেধাজ্ঞাকে হাতিয়ার করছে।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বাইডেন প্রশাসন আরও দু’টি বিষয়কে কাজে লাগাতে চাচ্ছে। যেমন- অনেক বাংলাদেশি রাজনীতিবিদদের নিকটাত্মীয়রা যুক্তরাষ্ট্র বা ব্রিটেনে বসবাস করছে। এরমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদের যুক্তরাষ্ট্রে গ্রিন কার্ড রয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশের রপ্তানির সিংহভাগই যুক্তরাষ্ট্রে যায়।
ব্রহ্মা চেলানি বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন যা বলেছেন তা নিয়ে খুব কম লোকই আপত্তি করতে পারেন। তিনি বলেছেন, মার্কিন লক্ষ্য ২০২৪ সালের শুরুতে হতে যাওয়া বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে।
‘তবে গণতান্ত্রিক এই নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত ব্যক্তিদের বিষয়ে ভিসা বন্ধ করার তার যে হুমকি তা এই লক্ষ্যের প্রচারের জন্য খুব কমই সহায়ক হবে’, বলেন চেলানি।
তিনি লিখেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের কৌশল অনুসরণ করছে। তারা গণতন্ত্রের বদলে এমন একটি সরকার চালু করার চেষ্টা করছে যার গণতান্ত্রিক অস্তিত্ব থাকবে না। তিনি এপ্রিলে সংসদে বলেছিলেন, ‘এটি একটি অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ হবে।’
চেলানি বলেন, বাংলাদেশের ইসলামপন্থীদের বিরোধিতা থাকা সত্ত্বেও ২০০৯ সাল থেকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের নেতৃত্ব এগিয়ে যাচ্ছে দেশটি। শেখ হাসিনা দেশকে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দিয়েছেন। এছাড়াও তিনি বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পতন কিছুটা বাংলাদেশের উপরও প্রভাব পড়ছে।
ব্রহ্মা চেলানি বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতিপথের চিত্র পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে সম্পূর্ণ বিপরীতে রয়েছে। পাকিস্তান টলমল অবস্থায় রয়েছে। অথচ ২০২১ সালে এবং চলতি বছরের শুরুতে বাইডেন প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত সামিট ফর ডেমোক্রেসি থেকে বাংলাদেশকে বাদ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তানকে দু’বারই আমন্ত্রণ জানানো হয়, যদিও তারা এতে অংশগ্রহণ করেনি।
স্বল্পমেয়াদী ভূ-রাজনৈতিক বিবেচনাকে অগ্রাধিকার দিয়ে পাকিস্তানকে পুরস্কৃত করছে বাইডেন প্রশাসন। অন্যদিকে বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে সমালোচনা করে আসছে তার প্রশাসন। ২০২১ সালে বাংলাদেশের র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং এর ছয়জন বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
তিনি বলেন, ব্লিঙ্কেনের ভিসা-নিষেধাজ্ঞার ঘোষণাটি পরিষ্কারভাবে হাসিনা সরকারের সদস্যদের লক্ষ্য করে। এতে আইন প্রয়োগকারী বং অন্যান্য নিরাপত্তা কর্মকর্তারাও যুক্ত রয়েছে। যদিও নতুন নীতির ঘোষণায় বিরোধী দলগুলোর সদস্যদেরও উল্লেখ করা হয়েছে।