নরসিংদীতে এক ব্যবসায়ীর কাছে ৫ লাখ টাকা ‘চাঁদা দাবি’র মামলায় নুরালাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আরিফ হোসেনকে (৪০) গ্রেপ্তার করেছে মাধবদী থানা পুলিশ। গ্রেপ্তার ইউপি চেয়ারম্যান আরিফ হোসেন সদর উপজেলার মাধবদী থানাধীন নুরালাপুরের মরহুম শরীফ হোসেনের ছেলে।
শনিবার ১৫ জুলাই রাত ১১টার দিকে সদর উপজেলার নুরালাপুর নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। রোববার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রকীবুজ্জামান।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, নুরালাপুরের টেক্সটাইল ব্যবসায়ী মো. আইনুল হক রাজমিস্ত্রির সহযোগিতায় নিজবাড়ির সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু করেছিলেন। গত ১২ জুন বেলা ১১টার দিকে ইউপি চেয়ারম্যান আরিফ হোসেন কয়েকজনকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে ওই সীমানাপ্রাচীর নির্মাণে বাধা দেন। এ সময় তিনি মো. আইনুল হককে, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করতে চাইলে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দেয়ার কথা বলেন। এছাড়া তিনি আরও বলেন, টাকা রেডি রাখবেন, কালকে এসে নিয়ে যাব। টাকা না পেলে কাজ করতে দেওয়া হবে না। পরে আইনুলের হাত কেটে ফেলার হুমকি দিয়ে দলবল নিয়ে চলে যান চেয়ারম্যান।
পরদিন দুপুর একটার দিকে চাঁদার টাকা নেয়ার জন্য ইউপি চেয়ারম্যান আরিফ হোসেনের নির্দেশে বাকী আসামীরা চারটি মোটরসাইকেলে ঘটনাস্থলে এসে আইনুলকে না পেয়ে হৈ-হুল্লোর শুরু করেন এবং রাজমিস্ত্রিদের ভয়ভীতি দেখিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন। সেসময় রাজমিস্ত্রিরা আইনুল হক তাদের কোন চাঁদা দেবেন না বলে জানান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আশিক, রহম, মজিবুর ও সামাদসহ অজ্ঞাত আসামীরা উপস্থিত রাজমিস্ত্রিদের ওপর হামলা করে। এ সময় রমজান ও উজ্জ্বল নামের দুই রাজমিস্ত্রিকে তাদের মোটরসাইকেলে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেন আসামীরা। ওই সময় আসামীরা হুমকি দিয়ে বলেন, আইনুলকে বলবি পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে তাদের দুজনকে ফেরত আনতে। না হলে তাদের গলা কেটে লাশ ফেলে দেয়া হবে।
পরে চাঁদার টাকা না দেয়ায় গত ১৯ জুন ভোর ৪টার দিকে ব্যবসায়ী আইনুল হকের সুতার গুডাউনে আগুন লাগিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটে। ওই সময় আলাউদ্দীন নামের গোডাউনটির এক শ্রমিক বাইরে বেরিয়ে দেখেন, আশিক, রহম আলী, মজিবুর ও সামাদসহ অজ্ঞাত আরও ২-৩ জন আসামী সেখানে অবস্থান করছেন। তারা প্লাস্টিকের জার্কিন থেকে দাহ্য পদার্থ ছড়িয়ে দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে আগুন নেভান। অগ্নিকাণ্ডে সুতাসহ প্রায় এক কোটি টাকার মালামাল পুড়ে গেছে বলে দাবি ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর। চাঁদা না দেওয়ায় সুতার গোডাউনে অগ্নিকাণ্ডের অভিযোগে নুরালাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আরিফ হোসেন (৪০), তার কর্মী মো. আশিক (৩০), রহম আলী (৩৬), মজিবুর রহমান (২৭) ও মো. সামাদ (২৫)সহ অজ্ঞাতনামা আরও ৫-৬ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আইনুল হক।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মো. আইনুল হক জানান, পরপর ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর বিচারের দাবিতে কয়েক দফা আসামীদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ নিয়ে থানা-পুলিশের কাছে গিয়েছি। তারা আমার দেওয়া লিখিত অভিযোগ মামলা হিসেবে নেয়নি। পরে বাধ্য হয়ে নরসিংদীর আদালতে সিআর মামলার আবেদন করলে বিচারক মাধবদী থানার ওসিকে মামলা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। এরপরই মামলা নেয় পুলিশ। প্রধান আসামী গ্রেপ্তার হয়েছেন, বাকী আসামীদেরও গ্রেপ্তারের দাবি জানাই।
মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রকীবুজ্জামান জানান, চাঁদাবাজির মামলার আসামী নুরালাপুরের ইউপি চেয়ারম্যান আরিফ হোসেনকে গতকাল রাতে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। এরই মধ্যে আজ দুপুরে তাকে নরসিংদীর আদালতে পাঠানো হয়েছে। এই মামলায় এখনও পর্যন্ত দুজন আসামী গ্রেপ্তার হয়েছেন। বাকী আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।