সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দুই দিনব্যাপী নির্বাচনে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণের পর ফলাফল ঘোষণা নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত দৃশ্যপট তৈরি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতেই ভোট গণনার পক্ষে সোচ্চার ছিলেন সম্পাদক প্রার্থী নাহিদ সুলতানা যুথী। তবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্পাদক প্রার্থী শাহ মনজুরুল হক শুক্রবার বেলা ৩ টায় ‘দিনের আলোতে’ ভোট গণনা চাচ্ছিলেন। এবিষয় নিয়েই একপর্যায়ে দুপক্ষের সমর্থকদের মাঝে হট্টগোল শুরু হয়। শুক্রবার ভোরে মারামারির ঘটনাও ঘটে। যেখানে একজন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলকে আক্রমণ করার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এখানে ‘বহিরাগতের হামলা’ হয়েছে বলে অনেকে দাবী করেন।
একপর্যায়ে গণনা ছাড়াই শুক্রবার সকালে নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়ক সিনিয়র আইনজীবী আবুল খায়ের সম্পাদক পদে বিজয়ী ঘোষণা করে বলেন, ‘শুধুমাত্র নাহিদ সুলতানা যুথী সম্পাদক প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন, তাই তাকে সম্পাদক পদে বিজয়ী ঘোষণা করা হলো।’
ভোটের ফলাফলের বিষয়ে কোন মন্তব্য না করে সাদা প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী শাহ মনজুরুল হক চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘সকাল ৮ টার পর পুলিশের পাহারায় আমি সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ ছেড়ে বাসায় চলে এসেছি।’
অন্যদিকে, বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল শুক্রবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ভোটের পর আমরা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ফলাফলের অপেক্ষায় ছিলাম। এখনও আমরা ফলাফলের অপেক্ষায় আছি। আমরা এখন ব্যালট বাক্সও খুজে পাচ্ছি না, নির্বাচন কমিশনকেও খুজে পাচ্ছি না।’
এদিকে শুক্রবার সকালে দেখা যায় ভোটের ব্যালট বাক্স সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির অডিটোরিয়ামে পুলিশের পাহারায় রয়েছে। এই প্রাঙ্গণে আইন শৃংখলা বাহিনীর কিছু সদস্য ও কয়েকজন সাংবাদিক ছাড়া কোন দলের প্রার্থী ও সমর্থকদের দেখা যায়নি।
গত বুধ ও বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার পর শুরু হয়ে মাঝে এক ঘণ্টার বিরতি দিয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট ভোট গ্রহণ হয়। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবী সমিতির এই নির্বাচনে ১৪ জনের কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি, দুজন সহ-সভাপতি, সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ, দুজন সহ-সম্পাদক এবং সাত জন সদস্য নির্বাচিত হবেন। এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ৭ হাজার ৮৮৩ জন। আর প্রার্থী ছিলেন ৩৩ জন।
এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ (সাদা প্যানেল) থেকে সভাপতি পদে আবু সাঈদ সাগর, সম্পাদক পদে শাহ মঞ্জুরুল হক, সহ-সভাপতি পদে রমজান আলী শিকদার ও দেওয়ান মো. আবু ওবাঈদ হোসেন সেতু, কোষাধ্যক্ষ পদে মোহাম্মদ নুরুল হুদা আনসারী, সহ-সম্পাদকের দুটি পদে মো. হুমায়ুন কবির ও মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়া সাতটি সদস্য পদে মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান ভূইয়া, মাহমুদা আফরোজ, মো. বেলাল হোসেন, খালেদ মোশাররফ, মো. রায়হান রনি, সৌমিত্র সরদার ও রাশেদুল হক খোকন প্রার্থী হন।
অন্যদিকে, বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল (নীল প্যানেল) থেকে সভাপতি পদে ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন (খোকন), সম্পাদক পদে ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস, সহ-সভাপতি পদে মো. হুমায়ুন কবির ও সরকার তাহমিনা বেগম, কোষাধ্যক্ষ পদে মো. রেজাউল করিম, সহ-সম্পাদক পদে মাহফুজুর রহমান ও মো. আবদুল করিম প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়া সাতটি সদস্য পদে ফাতিমা আক্তার, সৈয়দ ফজলে এলাহী, মো. শফিকুল ইসলাম শফিক, মো. রাসেল আহমেদ, মো. আশিকুজ্জামান নজরুল, মহিউদ্দিন হানিফ ও মো. ইব্রাহিম খলিল প্রার্থী হন।
সাদা ও নীল প্যানেলের বাইরে এবার সভাপতি পদে প্রার্থী হন অ্যাডভোকেট মো. ইউনুছ আলী আকন্দ ও অ্যাডভোকেট মো. খলিলুর রহমান বাবলু (এম কে রহমান)। সম্পাদক পদে প্রার্থী হন অ্যাডভোকেট ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূইয়া ও অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথী। আর কোষাধ্যক্ষ পদে প্রার্থী হন মো. সাইফুল ইসলাম।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির গত (২০২৩-২৪) নির্বাচনে ভাঙচুর, সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের লাঠিপেটা ও হট্টগোলের নজিরবিহীন ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের ভোট বর্জন ও নতুন নির্বাচনের দাবীর মধ্যেই ১৭ মার্চ রাতে সে নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হয়। যেখানে সভাপতি-সম্পাদকসহ ১৪টি পদের সব কটিতেই জয় পান আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্যানেলের আইনজীবীরা।