এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ
রোজায় হোটেল বন্ধ থাকায় চাহিদা কমে যাওয়া এবং ঈদের পর থেকে ‘দাবদাহে’ মুরগি মরা যাওয়ার প্রভাবে মাঝে কিছু দিন দাম নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকলেও আবারও বেড়েছে ডিমের দাম। ডজন দেড়শ’ টাকা ছুঁই ছুঁই। খুচরা বাজারে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা পর্যন্ত। সেই সঙ্গে বেড়েছে সব ধরণের মুরগির দামও।
যদিও কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ১৫ মার্চ যে ২৯টি পণ্যের দাম বেঁধে দিয়েছিল, তাতে একটি ডিমের খুচরা দাম নির্ধারণ করা হয় ১০ টাকা ৪৯ পয়সা। সে হিসেবে এক ডজন ডিমের দাম ১২৬টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার দরেও ডিমের এমন বাড়তি দাম পাওয়া গেছে। টিসিবি জানিয়েছে, প্রতি হালি ডিম বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪৮ টাকায়। তাতে ডিমের দাম পড়ে ১২০ থেকে ১৪৪ টাকা ডজন। এক সপ্তাহ আগেও বাজারে ডিমের হালি ৪০ থেকে ৪৪ টাকা ছিল। কিন্তু পাড়া-মহল্লার দোকানে এই ডিমের দাম আরও বেশি রাখা হচ্ছে।
ডিমের বাড়তি দাম প্রসঙ্গে বাংলাদেশ এগ প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তাহের আহমেদ সিদ্দিকী জানান: উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার কারণে ডিমের দাম বেড়েছে। বাজারে ডিমের সরবরাহ কম থাকলে বাজার এমনিতেই বাড়তি থাকে। খামারিরা উৎপাদনে ফিরতে পারলে ডিমের দাম আবার কমে আসবে।
এদিকে খামারিরা বলছেন: ডিমের উৎপাদন খরচ বাড়লেও পাইকারি বাজারে তারা ডিমের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। এখন খামারি পর্যায়ে একটি ডিমের দাম পড়ছে সাড়ে ৯ টাকার মতো।
কিন্তু খুচরা বাজারে সেই ডিম ক্রেতাকে কিনতে হচ্ছে ১২ টাকার মত খরচ করে।
খামারিদের অভিযোগ: ঢাকার তেজগাঁওয়ে ডিম সিন্ডিকেট রয়েছে। তারা প্রান্তিক খামারির ডিম কম দামে কিনে মজুত করে এখন বাড়তি দরে বিক্রি করছেন। ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে এবং মোবাইল ফোনে এসএমএস করে সিন্ডিকেট দাম বাড়ায় এসব সিন্ডিকেটের হোতারা।
তবে খামারিদের এ অভিযোগ অস্বীকার করে তেজগাঁওয় ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আমানত উল্লাহ বলেন: তিন-চার দিন ধরে পাইকারি বাজার গরম। প্রতিদিন প্রতি ১০০ পিস ডিমে ২০ থেকে ৩০ টাকা করে বাড়ছে। এজন্য খুচরা বাজারেও বাড়তে শুরু করেছে।
ঢাকায় ডিমের বড় দুটি পাইকারি বাজার কারওয়ান এবং কাপ্তান বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন: গত সাত দিনে বাদামি ও সাদা ডিমের দাম বেড়েছে প্রতি ডজনে ২০-২৫ টাকা।
এদিকে গত সোমবার (৬ মে) কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া একটি কোল্ডস্টোরেজে অভিযান চালিয়ে ২৮ লাখ মজুদ ডিম জব্দ করে জেলা ভোক্তা-অধিকার অধিদপ্তর। এ সময় ডিমগুলো দ্রুত বাজারজাত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এমন মজুদদারিও দাম বাড়ার একটি কারণ।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে ডিমের উৎপাদন ছিল ২ হাজার ৩৩৮ কোটি। আগের অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৩৩৫ কোটি। দেশে উৎপাদিত এই ডিম দিয়েই চাহিদা মিটে যায়। এই ডিম খাওয়ার পাশাপাশি একটি বড় অংশ দিয়ে আবার বাচ্চাও ফোটানো হয়।
এদিকে ডিমের পাশাপাশি বেড়েছে মুরগির দামও। গত সপ্তাহ থেকে কেজিতে ১০টাকা বেড়েছে সব ধরনের মুরগির দাম। প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২১০ থেকে ২২০ টাকায়। আবার সোনালি জাতের মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৭০ থেকে ৩৯০ টাকায়।