বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাই কমিশনার সারাহ কুক সিলেটে লাক্কাতুরা চা বাগান এলাকায় লাক্কাতুরা ব্র্যাক স্কুল পরিদর্শন করেছেন। এদেশে দায়িত্ব গ্রহণের পর এটিই তার প্রথম সিলেট সফর।
বুধবার ২৩ আগস্ট হাই কমিশনের সহকর্মীদের নিয়ে সিলেটে এই সফরে আসেন সারাহ কুক। এসময় ব্র্যাকের শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন ও মাইগ্রেশন কর্মসূচির পরিচালক সাফি রহমান খান ও ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচির প্রধান প্রফুল্ল চন্দ্র বর্মণসহ প্রধান কার্যালয় এবং মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের মূলধারার শিক্ষায় ফেরাতে বিশেষ মডেলের এই স্কুল পরিচালনা করছে ব্র্যাক। পরিদর্শনকালে ব্রিটিশ হাই কমিশনার ব্র্যাক স্কুলের ক্লাস পর্যবেক্ষণ করেন এবং শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফিরে আসার অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি সম্পর্কে জানতে চান। একইসঙ্গে তিনি শিক্ষক ও কর্মীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং অভিভাবক ও স্কুল পরিচালনা কমিটির সাথে চলমান বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করেন।
পরিদর্শনকালে সারাহ কুক বলেন, স্কুলের শিক্ষার্থী এবং চা বাগানে কাজ করা তাদের অভিভাবকদের সাথে সাক্ষাতের অভিজ্ঞতাটি ছিল অসাধারণ। এটা স্পষ্ট যে, শিক্ষা কেবল ব্যক্তিবিশেষে পরিবর্তন আনে না, বরং পুরো সম্প্রদায়ের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে। বাংলাদেশে সুবিধাবঞ্চিত শিশু, বিশেষ করে কন্যাশিশুদের অগ্রাধিকারে রেখে যে শিক্ষা কর্মসূচি চলছে, সেখানে সহায়তা করতে পেরে যুক্তরাজ্য গর্বিত।
সাফি রহমান খান বলেন, যুক্তরাজ্য সরকারের সহযোগিতায় সিলেটের চা বাগান এলাকায় ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচি যে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে তা হাইকমিশনার সারাহ কুককে সরাসরি দেখাতে পেরে আমরা গৌরবান্বিত। দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাসকারী শিশুরা, বিশেষ করে মেয়ে ও প্রতিবন্ধী শিশুরা যেন তাদের শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়, তা নিশ্চিত করা শিক্ষা খাতে কর্মরত আমাদের সকলের দায়িত্ব। এক্ষেত্রে আমাদের একসেলারেটেড মডেল স্কুলগুলো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে এবং হাইকমিশনারের উপস্থিতি আমাদের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক এবং কর্মীদের অনুপ্রাণিত করবে।
উল্লেখ্য, কোভিড-১৯ অতিমারির আকস্মিক প্রাদুর্ভাবের ফলে, বাংলাদেশের সকল স্কুল ১৮ মাসের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল এবং এসময় শ্রেণিকক্ষে প্রচলিত সকল পাঠদান বন্ধ হয়ে যায়। এই দীর্ঘস্থায়ী বিরতিতে ঝরে পড়ার ঝুঁকিতে থাকা শিক্ষার্থীরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয় এবং ঝরে পড়ার হারও বাড়তে থাকে।
যুক্তরাজ্য সরকারের সহযোগিতায় ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচি এর প্রকল্প “এডুকেট দ্য মোস্ট ডিজএডভান্টেজড চিলেড্রেন ইন বাংলাদেশ (ইএমডিসি)-এর মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য একসেলারেটেড মডেলে শিক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ১০ মাসের এই মডেলের মধ্যে রয়েছে ৪ মাসের একটি ক্যাচ-আপ কম্পোনেন্ট এবং ৬ মাসের নির্দিষ্ট শ্রেণিভিত্তিক শিখন প্রক্রিয়া, যা শিক্ষার্থীদের পূর্বের শিখন ঘাটতি পূরণ করে পুনরায় আনুষ্ঠানিক স্কুলে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করছে। বর্তমানে ইএমডিসি প্রকল্পটির দ্বিতীয় বর্ষ চলছে।
এর মাঝে প্রায় ১৬ হাজার শিক্ষার্থী ৬৫০টি ব্র্যাক স্কুল থেকে এই মডেলে শিক্ষা সম্পন্ন করেছে এবং আরও সাড়ে ১২ হাজার শিক্ষার্থী ৫০০টি ব্র্যাক স্কুলে বর্তমানে অধ্যয়নরত আছে। হিসেব বলছে, এই প্রকল্প শেষে প্রায় ৫ হাজার ৯০০টি এক কক্ষ বিশিষ্ট স্কুল থেকে এক লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী একসেলারেটেড মডেলে শিক্ষা লাভ করবে।