চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

‘দুটি ফুটফুটে সন্তানের মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না’

রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসায় তেলাপোকা-ছারপোকা মারার ওষুধের বিষক্রিয়ায় স্কুলপড়ুয়া ২ ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনায়  দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন শিশু দুটির বাবা মোবারক হোসেন। 

তিনি বলেন, আল্লাহ আমার দুই সন্তানকে তুলে নিয়েছে, নিশ্চয় আল্লাহ ভালো জানেন। কিন্তু ফুটফুটে দুই শিশুর এভাবে মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। যাদের কারণে আমি দুই সন্তান হারিয়েছি, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত হোক, আমি চাই সুষ্ঠু বিচারে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। যেন আর কোনো বাবা-মা এভাবে তাদের আদরের সন্তান না হারায়।

বাসাটিতে যে পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিসের কর্মীরা স্প্রে করেছিলেন সেই ডিসিএস অর্গানাইজেশন লিমিটেড কোম্পানির চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান এবং কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর ফরহাদুল আমিনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।

বৃহস্পতিবার ৮ জুন সংবাদ সম্মেলনে আসেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও গোয়েন্দা পুলিশ প্রধান হারুন অর-রশীদ। এই সংবাদ সম্মেলনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন শিশু দুটির বাবা মোবারক হোসেন।

ডিসিএস অর্গানাইজেশন লি. কোম্পানির চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর ফরহাদুল আমিন

হারুন অর-রশীদ বলেন, বাসাটিতে অ্যালুমিনিয়াম ফসফেট সমৃদ্ধ পেস্টিসাইড স্প্রে করা হয়েছিল। বড় গার্মেন্টস, গুদাম বা অনাবাসিক জায়গাতে এই পেস্টিসাইড স্প্রে করা যায়। কিন্তু ঘরে এটা ব্যবহার করা যায় না। করলেও আবাসস্থল ৭২ থেকে ৯৬ ঘণ্টা ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে হয়।

এ পেস্টিসাইডে রাসায়নিক আইটেম সঠিক অনুপাতে ছিল না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। ২ জুনের এ ঘটনায় গত ৫ জুন ভাটারা থানায় একটি মামলাও হয়েছে।

হারুন অর-রশীদ বলেন, ঘটনার পরই মূল আসামি ডিসিএস অর্গানাইজেশন লি. কোম্পানির চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান এবং কোম্পানিটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর ফরহাদুল আমিন গা ঢাকা দেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা টের পেয়ে দুজনই টাঙ্গাইল, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতে থাকেন। অবশেষে আজ সকাল পৌনে ৮টার দিকে নরসিংদী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্ত এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

নরসিংদী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন ডিসিএস অর্গানাইজেশন লি. কোম্পানির চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর ফরহাদুল আমিন।

ডিবি প্রধান বলেন, কীটনাশক মানবজীবনের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে বিশেষত তীব্র দাবদাহের এই সময়ে বিষয়টি উপলব্ধি করা দরকার ছিল পেস্টিসাইড কোম্পানির কর্মকর্তাদের। কিন্তু অর্থের লোভে কোম্পানির মালিক-কর্মচারীরা স্বাস্থ্য ঝুঁকির এই বিষয়টিকে উপলব্ধি না করে এবং পরিবারের সদস্যদেরকে যথাযথ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার উপদেশ না দিয়েই আনাড়ি, কর্মচারীদের দিয়ে এই কীটনাশক স্প্রে করিয়েছেন। যার ফলশ্রুতিতে দুইটি শিশুর জীবন ঝরে যায় অকালে। অসুস্থ হন পরিবারের অন্য সদস্যরাও।

সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও গোয়েন্দা পুলিশ প্রধান হারুন অর-রশীদ

যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে এই বিষাক্ত পণ্য কোথা থেকে কিভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে, এর অনুমোদন ছিল কিনা, এর রাসায়নিক অনুপাত সঠিক ছিল কিনা, মানবদেহের জন্য এগুলো কতটা ক্ষতিকর তা যাচাই-বাছাই করা হবে।

ভাটারা থানা সূত্রে জানা যায়, মোবারক হোসেন তার বাসায় তেলাপোকা-ছারপোকা মারার জন্য ডিসিএস অর্গানাইজেশন লিমিটেডকে ভাড়া করেন। শুক্রবার ডিসিএসের কর্মীরা মোবারক হোসেনের বাড়িতে কীটনাশক প্রয়োগ করে এবং ২ থেকে ৩ ঘণ্টা পর তাদের বাড়িতে প্রবেশ করতে বলেন। তবে পরিবারের সদস্যরা অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করে প্রায় ১০ ঘণ্টা পরে বাড়িতে ফেরেন।

পরিবারের সবাই অসুস্থ হয়ে পড়লেও শিশুদের দ্রুত নিকটস্থ একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রোববার সকালে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র শাহিল মোবারত জায়ান (৯) ও রাতে অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া শায়েন মোবারত জাহিনের (১৫) মৃত্যু হয়।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কীটনাশক থেকে বিষক্রিয়ায় তাদের মৃত্যুর কারণ বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের বোনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এছাড়া নিহত দুই শিশুর মা শারমিন জাহান লিমা ও বাবা মোবারক হোসেন বিষক্রিয়ায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।