মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন একরাতে নৌবাহিনীর ভয়ংকর একটি অভিযান ‘অপারেশন জ্যাকপট’ নামে খ্যাত। সেই ঐতিহাসিক ঘটনা উঠে আসছে সিনেমার পর্দায়। গেল ডিসেম্বর থেকে এই সিনেমার শুটিং শুরু হয়েছে। নির্মাণের শুরু থেকে এ সিনেমা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি সমালোচনায় কম হচ্ছে না!
এফডিসির পর বর্তমানে সিনেমাটির শুটিং চলছে কবিরপুর ফিল্ম সিটিতে। শনিবার সেই শুটিংয়ের কয়েকটি স্থিরচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট হয়। সেগুলোর মধ্যে একটি স্থিরচিত্রে দেখা যায়, সাদা স্যান্ডু গেঞ্জি ও হাফ প্যান্ট পরে দাঁড়িয়ে আছেন অনন্ত জলিল, ইমন, সাঞ্জু এবং শিপন।
এর মধ্যে দেখা যায়, স্তুপকৃত মাটির উপর দাঁড়িয়ে আছেন অনন্ত জলিল। সেই স্থিরচিত্রটি রীতিমত ভাইরাল হয়ে যায়! নেটিজেনরা বলছেন, অনন্ত জলিলের উচ্চতা বাড়াতেই এমনটা করা হয়েছে! যা নিয়ে দুদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রলের শিকার হচ্ছেন সেই সিনেমা সংশ্লিষ্টরা।
শুধু সেটায় নয়, কেউ কেউ আবার মুক্তিযুদ্ধকালীন অনন্তর হেয়ার স্টাইল এবং দাঁড়ির কাটিং নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন। তারা বলছেন, ২৩ কোটি বাজেট পাওয়া মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাঁথা আর গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট নিয়ে এমন যাচ্ছেতাইভাবে কেন সিনেমা নির্মাণ হচ্ছে! একটু সচেতন হয়ে সিনেমাটি কি নির্মাণ করা যেত না?
তবে নেটিজেনদের এসব অভিযোগ কিংবা ট্রল কানে তুলছেন না ছবি সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, সিনেমা মুক্তির পরই দেখা যাবে তারা কতোটা গুরুত্বের সঙ্গে সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন!
সদ্য যে ছবিটি ভাইরাল হয়েছে, সেখানে অনন্ত জলিলের পাশে দেখা গেছে চিত্রনায়ক ইমনকেও। ভাইরাল ছবিটি নিয়ে চ্যানেল আই অনলাইনের সাথে কথা বলেছেন এই নায়ক।
‘অপারেশন জ্যাকপট’-কে ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ এর পর দেশের সবচেয়ে বিগ বাজেটের ছবি উল্লেখ করে ইমন বলেন, আমেরিকায় যেমন রাজকুমার হচ্ছে, তেমনি বাংলাদেশে হচ্ছে ‘অপারেশন জ্যাকপট’। এর আগে বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক মুক্তির আগে মানুষ সমালোচনা করেছিল। কিন্তু সিনেমা মুক্তির পর এটি দেখে সবাই পছন্দ করেছেন। আমাদের বিশ্বাস জ্যাকপট দেখেও মানুষ পছন্দ করবেন। কারণ, আমরা শুটিং করে অনুভব করতে পারছি স্ক্রিনে দর্শক কী দেখতে পারবে।
ভাইরাল ছবিটি নিয়ে ইমন বলেন,“অনন্ত ভাই মাটির উপর দাঁড়ানো নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগছে, এগুলোর উত্তর ছবিটি মুক্তির পর পাওয়া যাবে। নির্মাতা রাজীব বিশ্বাস তার কাজে অনেক স্মার্ট। আমরা সবাই তাকে পেয়ে খুশি। এতটুকু বলতে পারি সিনেমা ভাল হচ্ছে।”
চিত্রনায়ক ইমন আরও বলেন, প্রতিদিন শুটিংয়ে ৪০ লাখ টাকার বেশি খরচ হচ্ছে। আমরা প্রধান শিল্পীরা ভোরে উঠে ট্রেনিং করি, জিম করি। রবিবার থেকে শুটিংয়ে দৈনিক প্রায় ৯০০ জন জুনিয়র আর্টিস্ট শুটিং করছেন। সর্বনিম্ন পারিশ্রমিক যদি ১৫০০ টাকা করে হয় তাহলে হিসেব করেন দৈনিক কত খরচ হচ্ছে। সেই সাথে তাদের খাওয়ার খরচও আছে। শুটিং চলবে ফেব্রুয়ারি মাস পুরোটা, মার্চে কিছু শুটিং সেরে এপ্রিলে দেশের বাইরে শুটিং হবে।
নতুন কোনো সিনেমা নির্মিত হওয়ার খবরে দর্শকদের আগ্রহ বাড়তে থাকে। মুক্তির আগে প্রচারণার সময় ছাড়া লুকও অনেকে প্রকাশ করেন না। কিন্তু ‘অপারেশন জ্যাকপট’ শুরু থেকে শিল্পীদের লুক প্রকাশ করা হচ্ছে। এমনও দেখা গেছে, শুটিং দৃশ্যগুলো লাইভে প্রচার করা হচ্ছে। এ নিয়েও সমালোচনার পড়তে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের।
এ প্রসঙ্গে ইমন বলেন, আমি মনে করি একেক টিমের একেক প্ল্যান থাকে। ‘অপারেশন জ্যাকপট’-এর নির্মাণের সঙ্গে জড়িতরা মনে করেন প্রচারে প্রসার। তারা সেই নীতিতে আগাচ্ছেন। এ কারণে আমরা আমাদের জায়গা থেকে সহযোগিতা করছি।
ঐতিহাসিক ঘটনায় ‘অপারেশন জ্যাকপট’ নির্মাণ করছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। যদিও ‘অপারেশন জ্যাকপট’ নিয়ে ছবি নির্মাণে প্রথম উদ্যোগ নিয়েছিল নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়। প্রায় আড়াই বছর ধরে নির্মাতা গিয়াসউদ্দিন সেলিম চিত্রনাট্য তৈরি করেন। এমনকি প্রাক প্রস্তুতিও শুরু করেছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে তিনি সিনেমাটি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছিলেন। গত কয়েক বছরে এ নিয়ে অসংখ্য প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে। পুরো প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৩ কোটি ২৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা।
মন্ত্রণালয় বদল হওয়ার সাথে সাথে ‘অপারেশন জ্যাকপট’ নির্মাণ থেকে সরিয়ে দেয়া হয় গুণী নির্মাতা গিয়াসউদ্দিন সেলিমকে। চূড়ান্তভাবে এই ছবি নির্মাণের দায়িত্ব পেয়েছেন কলকাতার নির্মাতা রাজীব বিশ্বাস ও বাংলাদেশের দেলোয়ার জাহান ঝন্টু।
‘অপারেশন জ্যাকপট’ সিনেমার বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন অনন্ত জলিল, ইমন, নিরব, রোশান, শিপন, সাঞ্জু, জয় চৌধুরী, অমিত হাসান, পল্লব, ইশতিয়াক আহমেদ রুমেল, নিপুণ, নাদের চৌধুরী, শহীদুল আলম সাচ্চু, ড্যানি সিডাক, ইলিয়াস কাঞ্চন, কাজী হায়াত, ওমর সানী, মিশা সওদাগর।