সাপের মতো আকাঁবাকাঁ গাঁয়েয় পথ। শেষ বিকালের আলোয় ধুলো উড়িয়ে চলছে ছইওয়ালা ১০টি গরু ও মহিষের গাড়ি। বাবার ইচ্ছা পূরণ করতে গ্র্রামবাংলার হারিয়ে যাওয়া গরু ও মহিষের গাড়ি করে বরযাত্রী নিয়ে বরবেশে কনের বাড়িতে বিয়ে করতে গেলেন নিরব নামে এক যুবক। আর এ বিয়ে দেখতে ভিড় জমান কৌতুহলী লোকজন।
শুক্রবার (২৬ মে) পড়ন্ত বিকালে এমনই এক ব্যতিক্রম বিয়ের আয়োজন করা হয় ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে।
স্থানীয়রা জানায়, পীরগঞ্জ উপজেলার খামার নারায়ণপুর গ্রামের কুদ্দুস আলীর ছেলে নিবর ওরফে সাব্বিরের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয় পার্শ্ববর্তী দুর্গাপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলামে মেয়ে ইসরাত জাহান এশা আকতারের।
কুদ্দুস আলী বলেন, আজ কাল বাস-ট্রাক, হেলিকপ্টারে এমনকি ঘোড়ার গাড়িতেও বিয়ে-শাদী হচ্ছে। তবে আমিও বিয়ে করেছি গরু গাড়িতে চড়ে। এই দৃশ্য আবারও অবতারনার জন্য আমার ছেলের বিয়েতে আয়োজনও করা হয়েছে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে ।
শুক্রবার ছিল তাদের বিয়ের দিন।নিরবের বাবার ইচ্ছা ছিল ছেলে বরবেশে গরুর গাড়িতে করে বরযাত্রী নিয়ে কনের বাড়িতে বিয়ে করতে যাবে। পুত্রবধূও আসবে গরুর গাড়িতেই। বাবার সেই ইচ্ছা পূরণ করতে গরু ও মহিষের ১০টি গাড়িতে করে বরযাত্রী নিয়ে বর বেশে কনের বাড়িতে বিয়ে করতে যান নিরব। গ্র্রাম বাংলার হরিয়ে যাওয়া গরু-মহিষের গাড়ি দেখতে শত শত নারী পুরুষ ভিড় জমান বর ও কনের বাড়িতে। রাস্তায় অসংখ্য মানুষ দাঁড়িয়ে গরু-মহিষের গাড়িতে বরযাত্রার দৃশ্য দেখেন। মোবাইল ফোনে অসংখ্য ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন অনেকেই। এমন আয়োজনে খুশি বর কনের পরিবারসহ এলাকাবাসী। গ্রাম বাংলার এ পুরনো ঐতিহ্য ধরে রাখতে আগ্রহও প্র্রকাশ করেন অনেকে।
বরের পিতা কুদ্দুস বলেন, আমার ইচ্ছা ছিল, ছেলের বিয়েতে বরযাত্রী যাবে গরুর গাড়িতে। এ সময় গরুর গাড়ি পাওয় দুস্কর। তাই মহিষের ৯টি এবং গরুর একটি গাড়ির আয়োজন করি ছেলের বিয়েতে। ছেলেও মেনে নিয়ে গরু গাড়িতে করেই বিয়ে করতে যায়।
কনের চাচা জয়নাল বলেন, এটা গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া একটি ঐতিহ্য। এ রকম আয়োজনে আমরা খুশি।
নারায়ণপুর গ্রামে আলম নামে এক ব্যক্তি জানান, তার বাবার কাছে শুনেছেন, তার দাদার বিয়েতে বরযাত্রী ও বর গরুর গাড়িতে করে যায়। এরপর আর গরুর গাড়িতে বর যাত্রার কোনো অনুষ্ঠান এলাকায় হয়নি। দেখে ভাল লেগেছে।
মহিষের গাড়ির পেছনে পা ঝুলিয়ে বসা এক বৃদ্ধ জানান, ৪০ বছর আগে এভাবেই এক প্রতিবেশির বিয়েতে বরযাত্রী হিসেবে গিয়েছিলেন। দীর্ঘদিন পর এমন আয়োজনে তিনি খুশি।
স্থানীয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক মনতোষ কুমার দে জানান, আবহমান বাংলা গ্র্রামীণ ঐতিহ্যগুলো ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে গরুর গাড়িতে বর যাত্রাসহ প্রায় হারিয়ে যাওয়া লোকজ সংস্কৃতির কিছু কিছু আয়োজন লক্ষ্য করা যাচেছ যাচ্ছে। এসব গ্রামীণ লোকজ ঐতিহ্য ধারণ ও লালন করা এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।