আজারবাইজান গত সপ্তাহে বিতর্কিত নাগোর্নো-কারাবাখ এলাকা দখলে নেওয়ার পর সেখান থেকে জাতিগত নিধনের ভয়ে হাজার হাজার আর্মেনিয়ানরা এলাকা ছাড়তে শুরু করেছে। এ পর্যন্ত সাড়ে ছয় হাজারের মতো বাসিন্দা ওই ছিটমহলটি ছেড়ে আর্মেনিয়ায় পাড়ি জমিয়েছেন। এলাকাটিতে এক লাখ বিশ হাজার জাতিগত আর্মেনিয়ান বসবাস করতো।
বিবিসি জানিয়েছে, আর্মেনিয়ার সরকার যুদ্ধের কারণে বাস্তুহারা মানুষদের সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করার পর থেকেই তারা এলাকা ছাড়তে শুরু করেন।
আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান এর আগে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, ওই অঞ্চলে ‘জাতিগত নিধন’ চলছে। তিনি বলেন, বর্তমানে সেখানে এটাই চলছে যা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এ বিষয়ে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে অনুরোধ জানানোর চেষ্টা করছি। আজারবাইজান যদি জাতিগত নিধনের বিরুদ্ধে কার্যকর সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাহলে সেখানকার মানুষের বাড়ি-ঘর ছেড়ে যাওয়া ছাড়া আর উপায় থাকবে না। তিনি বলেন, সরকার আমাদের ভাই-বোনদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত।
এই দিকে মানুষের ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার কারণে আর্মেনিয়ার সীমান্তে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়েছে। কারাবাখের সীমান্তের কাছে অবস্থিত গোরিস শহরে আশ্রয় নেওয়া একজন শরণার্থী বলেন, আমি আমার সারা জীবন আমার মাতৃভূমির প্রতি উৎসর্গ করেছি। এভাবে পালিয়ে আসার চেয়ে তারা যদি আমাকে মেরে ফেলতো তাহলে বেশি ভাল হতো।
ভেরোনিকা নামের আরেকজন জানিয়েছেন, দ্বিতীয় বারের মতো শরণার্থী হয়েছেন তিনি। ২০২০ সালের লড়াইয়ের সময় প্রথমবার শরণার্থীতে পরিণত হয়েছিলেন তিনি।
গোরিস শহরের প্রধান চত্বরে ভিড় জমে গেছে। সেখানকার একটি থিয়েটারকে রেড ক্রসের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। একটি স্বেচ্ছাসেবী ফাউন্ডেশনের প্রধান এবং চিকিৎসক টিটিয়ানা ওগানেসিয়ান বলেছেন, তিনি এখন গোরিস শহরে আসা শরণার্থীদের সহায়তা দিচ্ছেন। তিনি জানান, এখানে আসা বেশিরভাগই ক্লান্ত, অপুষ্টিতে আক্রান্ত এবং মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন।
করনিডজর নামে কাছের একটি গ্রামে যেসব শরণার্থীরা আশ্রয় নিয়েছেন তারা বলছেন, আজারবাইজানের শাসনে তারা নিজেদেরকে সুরক্ষিত বলে মনে করেন না এবং তারা যে আবার বাড়িতে ফিরতে পারবেন সেটাও আশা করেন না। জাতিগত আর্মেনিয়ান নেতারা বলছেন, হাজার হাজার মানুষ খাদ্য ও আশ্রয় বঞ্চিত হয়ে পড়েছে এবং তারা বেজমেন্ট, স্কুল ভবন বা বাইরে ঘুমাতে বাধ্য হচ্ছে। যদিও আজারবাইজান বলেছে, তারা জাতিগত আর্মেনিয়ানদেরকে ‘সমান নাগরিক’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে চায়।
নাগোর্নো-কারাবাখ দক্ষিণ ককেসাস এলাকার একটি পাহাড়ি এলাকা। এটি আজারবাইজানের অংশ হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। তবে তিন দশক ধরে এটি জাতিগত আর্মেনিয়ানরা নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। এই ছিটমহলের প্রতি আর্মেনিয়া এবং তাদের মিত্র রাশিয়ার সমর্থন ছিল। বছরের পর বছর ধরে সেখানে শত শত রুশ সেনা অবস্থান করছিল। গত সপ্তাহে আজারবাইজানের সেনারা আক্রমণ চালালে রাশিয়ার ৫ জন শান্তিরক্ষী এবং ২০০ জন জাতিগত আর্মেনিয়ানসহ বেশ কয়েকজন আজারবানি সেনাও নিহত হন।