শুক্রবার ভোরে ঢাকায় ৪ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্প অনূভত হয়েছে। এর ফলে আতঙ্ক বিরাজ করছে জনসাধারণের মাঝে। এমন পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন: এমন মাত্রার ভূমিকম্প সাধারণ ঘটনা। যা কয়েক বছর পর পর এলাকা বিশেষে হয়ে থাকে। ঢাকায় বড় মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা নেই।
ঢাকায় বড় মাত্রার ভূমিকম্প হবে কিনা এ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মাঝে দুই ধরণের মত রয়েছে। একদল বিশেষজ্ঞ বলছেন, ঢাকা বড় ধরণের ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে। যেকোন সময় ৮.৩ থেকে ৮.৬ মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে। আরেকদল বিশেষজ্ঞ বলছেন, ঢাকার ভৌগলিক অবস্থানের কারণেই বড় ধরণের ভূমিকম্পের ঝুঁকি নেই।
কোনো স্থানের ভূকম্পনের জন্য ফল্ট লাইন এবং টেকনিক স্ট্রেস ফিল্ড গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। সাধারণত বড় ধরনের ভূকম্পন হয়ে থাকে প্লেট বাউন্ডারির মধ্যে। যদিও বাংলাদেশ প্লেট বাউন্ডারির মধ্যে নয়, তবু ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থান ও বিন্যাসের স্বকীয়তা বাংলাদেশকে ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকার আশপাশেই ফেলেছে।
এমন উদাহরণ তুলে ধরে ভূতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ মকবুল ই ইলাহী চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেছেন: ঢাকায় বড় ধরণের ভূমিকম্পের সম্ভাবনা নেই। বাংলাদেশ তথা রাজধানী ঢাকা ভূমিকম্পের প্লেট বাউন্ডারির বেশ বাইরে অবস্থান করায় এমন সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন তিনি।
তিনি বলেন: প্লেট বাউন্ডারিতে বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলেও ঢাকা পর্যন্ত আসতে আসতে সেটি দুর্বল হয়ে আসবে। সেটি আমাদের জন্য খুব বেশি আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নয়। গত ৪০০ বছরের ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করলে আমরা এমন চিত্র দেখতে পাই।
বাংলাদেশকে ভূকম্পনের তিনটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জোন হিসেবে উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কিছু কিছু স্থান যেমন: সিলেট, রাঙামাটি, বান্দরবান, কক্সবাজার উল্লেখযোগ্য। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ এবং পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল সর্বাপেক্ষা কম ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত।
আরেক ভূতাত্ত্বিক, প্রফেসর ড. জিল্লুর রহমান বলেন: ঢাকায় যে ভূমিকম্প হয়েছে সেটি একটি সাধারণ ঘটনা। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্প ৬ মাত্রার কম হলে সেটি নিয়ে আতঙ্কিত হবার কিছু নেই। যে কোন জায়গায় নিম্ন ও মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প সংগঠিত হওয়া স্বাভাবিক বিষয়।
তিনি আরও বলেন: বিভিন্ন গবেষণায় যে ফাটলরেখা দেখানো হচ্ছে, তার বাইরেও একটা ফাটলরেখা মিয়ানমারের সমান্তরালে চলে গেছে। সেখানে গত কয়েক শতাব্দীতে বড় ধরনের অনেক ভূমিকম্প হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রায় মাঝ বরাবর যে ফাটল রেখা চলে গেছে অতীতে কোনো বড় ভূমিকম্প হওয়ার তথ্য মেলেনি।
১৯৭৬ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত যতবার পাঁচ বা তার বেশি মাত্রায় ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে, তার প্রায় সব কটির উৎপত্তিস্থল সিলেট, মৌলভীবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান ও কক্সবাজার এলাকায়। এসব অঞ্চলে ভবিষ্যতে আরও বেশি মাত্রার ভূকম্পনের পূর্বাভাস উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল এক গবেষণায় উল্লেখ করেছেন, ৮.৩ থেকে ৮.৬ মাত্রার ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ।
১৯২৩ সালে ঢাকা থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে কিশোরগঞ্জের নিকটবর্তী স্থানে ৭.২ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানলে সারাদেশ কেঁপে ওঠে এবং ঢাকায় বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয় বলে জানা গেছে।