মরণযন্ত্রণায় ভুগছিলেন দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার ২৩ বছর বয়সী তরুণী লিলি। দক্ষিণ অ্যাডিলেডের ফ্লিন্ডার্স মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসাধীন লিলি অটো-ইমিউন অটোনমিক গ্যাগ্লিয়োনোপ্যাথি (এএজি)-র সমস্যায় ভুগছিলেন। স্বাভাবিকের মতো হাঁটাচলা করতে পারতেন না তিনি। খেতে গেলেও হতো সমস্যা। এই অসহ্য যন্ত্রণা থেকে মুক্তির জন্য স্বেচ্ছামৃত্যুকে বেঁছে নিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।
বুধবার (২১ জুন) পৃথিবীকে বিদায় জানায় লিলি। যাবতীয় যন্ত্রণা থেকে নিষ্কৃতি পেতে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন করেন লিলি। গত সপ্তাহে হাসপাতাল থেকেই আইনি কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেন তিনি। বুধবার তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী নিষ্কৃতিমৃত্যু দেওয়া হয়েছে লিলিকে। ১০ সেকেন্ডেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন তিনি।
ব্যথা উপশমের জন্য লিলিকে অ্যাডিলেডের হাসপাতালে প্যালিয়েটিভ কেয়ারে রাখা হয়েছিল। তবে তাতে অবস্থার বিশেষ হেরফের হয়নি। দিন দিন তাঁর শারীরিক অবস্থা বিগড়ে যাচ্ছিল।
অস্ট্রেলীয় সংবাদমাধ্যম ‘দি অ্যাডভারটাইজ়ার’-এর কাছে লিলি বলেন, ‘‘এই যন্ত্রণা এতটাই অসহ্য যে, বেঁচে থাকার কোনও অর্থ নেই। তা ছাড়া, নিজের হাতেই নিজেকে শেষ করতে চেয়েছিলাম।’’
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘ডেলি মেল’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, লিলির দেহে সমস্যার শুরু কিশোরী অবস্থায়। ১৭ বছর বয়সে ইলার্স ড্যানলোস সিনড্রোম (ইডিএস) উপসর্গ ধরা পড়েছিল তাঁর। তাতে ত্বক অতিরিক্ত নমনীয় হওয়া থেকে অস্থিসংযোগগুলি অতিরিক্ত মাত্রায় সক্রিয় হয়ে পড়ে। রক্তনালিতেও সমস্যা দেখা দেয়।
ইডিএসের চিকিৎসার জন্য অ্যাডিলেড থেকে সিডনি পাড়ি দিয়েছিলেন লিলি। সেখানকার ম্যাকোয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসপাতালে বিশেষজ্ঞদের একটি দল তাঁর চিকিৎসা শুরু করেন।
স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় খাবার হজম করা সম্ভব ছিল না লিলির পক্ষে। তাই খাবার হজম করানোর জন্য লিলির মেরুদণ্ডের অস্ত্রোপচার করে একটি টিউব ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যাতে ওই টিউবের মাধ্যমে তার পাকস্থলীতে অ্যাসিড নিঃসরণ করানো যায়। অতিমারি পর্বে ওই অস্ত্রোপচারের সময় থেকেই লিলির সঙ্গে বাইরের লোকজনের দেখাসাক্ষাৎ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।
অস্ত্রোপচারের পর সিডনিতে নিউরোইমিউনোলজিস্টের চিকিৎসা শুরু হয়। সে সময় ধরা পড়ে, লিলি এএজি-তে আক্রান্ত। এর জেরে ভবিষ্যতে তাঁর একাধিক অঙ্গ বিকল হয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা।
তবে জীবনের শেষ কিছু ইচ্ছা ছিল লিলির। মৃত্যুর আগে সমুদ্র দেখতে চেয়েছিলেন লিলি। হাসপাতাল বা লিলির চিকিৎসকরা এতে বাধা দেয়নি।
সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২৮ জন নাগরিককে স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া সরকার। তবে মৃত্যুর আগে যে কোনও মুহূর্তে নিজেদের সেই সিদ্ধান্ত বদল করতে পারেন তাঁরা।