‘আমাদের মাথার ছায়া নেই দশ বছর। ২০১৩ সালের ২৭ অক্টোবর আমার বাবার গাড়ির ওপর পেট্রোল বোমা মারে। বাবাকে হত্যা করা হয়। অথচ হত্যাকারীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। আজ মানবতার কথা বলে বিএনপি, আমাদের মানবতার বিচার কে করবে?’ অগ্নিদগ্ধে নিহত আলমগীর হোসেন শিমুলের সন্তান জাফর হোসেন এ প্রশ্ন রাখেন।
শনিবার ৩ ডিসেম্বর রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘বিএনপি-জামায়াতের মানুষ পোড়ানোর প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে’ মানববন্ধনের আয়োজন করে ‘অগ্নি সন্ত্রাসের আর্তনাদ’ সংগঠন।
আরেক ভিকটিম লিটন মিয়া বলেন, ‘সেদিন ছিল শুক্রবার। চানখারপুল থেকে লেগুনায় ওঠার পর ককটেলের বিস্ফোরণে ভেতরে থাকা ১৩ জন আহত হই। গাড়িতে আগুন ধরে যায়। আমরা তো রাজনীতি করি না, আমরা কী অপরাধ ছিল? আমাদের দোষ, আমরা খেটে খাই। এখন পর্যন্ত এ ঘটনার বিচার হয়নি৷ যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হোক।’
পেট্রোল বোমায় স্বামী-সন্তান হারানো মাশরুহা বেগম বলেন, ‘২০১৫ সালে স্বামী ও কোলের শিশু মাইশা নাহিয়ানকে নিয়ে বাসে যাচ্ছিলাম। পেট্রোল বোমায় চলন্ত বাসে দাউ দাউ করে আগুন ধরে যায়। আমার স্বামী ধাক্কা দিয়ে আমাকে জানালা দিয়ে ফেলে দেয়। কিন্তু চোখের সামনে স্বামী ও সন্তানকে হারাই। আমার বেঁচে থাকা দুঃস্বপ্নের মত, এটাকে কি বেঁচে থাকা বলে? এভাবে মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারবেন না, এভাবে পরিবারকে পঙ্গু করে মারবেন না।’
কেবল মাশরুহা বা লিটন মিয়া নন, এ মানববন্ধনে জমির আলী, জাহেদুল ইসলাম, ঠাকুরগাঁওয়ের রফিক, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট খাদিজা নাসরীন, নিহত নাহিদের মা রুনী বেগম, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন বক্তব্য দেন। তাদের সবার প্রশ্ন- বিএনপির এই সহিংসতার মধ্যে কারা মানবিকতা দেখতে পায়?
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘২০১৩-১৪ সালে খালেদা জিয়া আর এখন তারেক জিয়ার নেতৃত্বে এ আগুনসন্ত্রাস চলছে। কেউ কেউ তাদের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য বিবৃতি দেয়। কিন্তু সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আলোচনা হয় না। তাদেরকে নির্মূল করতে আমরা বদ্ধপরিকর। জনগণের রায়ে আমরা যদি সরকার গঠন করতে পারি, শেষ আগুনসন্ত্রাসীকে নির্মূল করতে আমরা বদ্ধপরিকর। এদেরকে নির্মূল করা না গেলে দেশে শান্তি আসবে না।’
মানববন্ধনে মন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে কমনওয়েলথ সেক্রেটারি জেনারেলের সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আমার বৈঠক হয়েছে। সেখানে আমি প্রশ্ন করেছি, পৃথিবীর কোথাও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পেট্রোল বোমায় মানুষ হত্যা হচ্ছে কিনা। তিনি স্বীকার করেছেন, গত বিশ বছরে পৃথিবীর কোথাও এরকম কিছু ঘটেনি।’
এসময় মানুষ পুড়িয়ে মারার রাজনীতি যারা করে তারা দেশ জাতি সমাজের শত্রু উল্লেখ করে তিনি অগ্নিসন্ত্রাসের মূলোৎপাটনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘এদের অর্থদাতা হুকুমদাতা, মদদদাতাদের ধরতে হবে। বিএনপি-জামায়াত নেতাদের অর্থে, হুকুমে, মদদে এ হত্যা চলছে। এদের বিচার না হলে এই আগুন সন্ত্রাস বন্ধ হবে না।’
মন্ত্রী বিএনপির কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘এই মানুষের আর্তনাদ কি আপনাদের কানে পৌঁছায় না? আসলে কয়লা ধুইলে যেমন ময়লা যায় না, কুকুরের লেজ যেমন সোজা হয় না, তেমন বিএনপি-জামায়াতও কখনও ভালো হবে না। সুতরাং এদের নির্মূল করতে হবে।’
এ সময় সংহতি জানিয়ে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘হত্যা সন্ত্রাসের মাধ্যমে বিএনপির সৃষ্টি হয়েছে, খালেদা জিয়া একই কাজ চালিয়ে গেছে এখনও একই প্রক্রিয়া তারা চালিয়ে যাচ্ছে৷ তাদের রক্তে সন্ত্রাস মিশে আছে। তারা দেশকে আবার পাকিস্তানি তালিবানি রাষ্ট্র বানাতে চায়।’
জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত অগ্নিসন্ত্রাস বন্ধে ভবিষ্যতে নতুন আইন চালুর দাবি জানান। সেসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান ২০১৩-১৪ সালে জামায়াত বিএনপির সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে প্রচলিত আইনেই শাস্তির দাবি জানান।