গত বছর যখন যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়া বিপুল সংখ্যক সৈন্য নিয়ে যৌথ মহড়া শুরু করে তখন তারা চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা মোকাবেলায় মিত্রদের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা গভীর করার বিষয়ে আলোকপাত করে। মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ পরিকল্পনাকারীরা তাইওয়ানের ওপর সম্ভাব্য সংঘাতের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তারা আগস্টে মহড়া শেষ হওয়ার পরে অস্ট্রেলিয়ায় সামরিক সরঞ্জাম মজুদ বাড়াতে কাজ করছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপটিকে চীন তার নিজস্ব ভূখণ্ড বলে দাবি করে। যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা ক্রমবর্ধমানভাবে উদ্বিগ্ন যে, আগামী বছরগুলোতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তার সামরিক বাহিনীকে তাইওয়ান দখল করার নির্দেশ দিতে পারেন। তাই মার্কিন সামরিক বাহিনী এখন চীনের সামরিক প্রস্তুতির প্রতি কঠোর নজর রাখছে এবং গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করতে চাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া সেরকমই একটি জায়গা।
মার্কিন সেনাবাহিনী জানিয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব অস্ট্রেলিয়ার বান্দিয়ানার গুদামঘরে মজুদ করা মার্কিন সামরিক সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে প্রায় ৩৩০টি যানবাহন ও ট্রেলার এবং ১৩০টি কন্টেইনার। এই পরিমাণ সরঞ্জাম যুদ্ধ ক্ষেত্রে ৫০০ বা তারও বেশি সৈন্য রয়েছে এমন তিনটি দলকে সরবরাহ করার জন্য যথেষ্ট। এগুলো আক্রমণ বা যুদ্ধের জন্য বেশ প্রয়োজনীয় উপাদান।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শীর্ষ সেনা কমান্ডার আর্মি জেনারেল চার্লস ফ্লিন বলেছেন, আমরা এইরকম কিছু আরও বেশি করে করতে চাইছি। এই অঞ্চলে আরও বেশ কয়েকটি দেশ রয়েছে যেখানে আমাদের ইতিমধ্যেই এরকম কিছু করার জন্য চুক্তি হয়েছে।
দুই ডজনেরও বেশি বর্তমান এবং সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সরবরাহ তাইওয়ানের ওপর যে কোনও সম্ভাব্য সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় দুর্বলতাগুলোর মধ্যে একটি। তাইওয়ানে আক্রমণ শুরু করলে যুক্তরাষ্ট্র সহজেই কোন সামরিক সরবরাহ পাঠাতে পারবে না। কারণ পথিমধ্যেই চীন মার্কিন জাহাজে বোমা ফেলার চেষ্টা করবে। মার্কিন বিমান ও নৌ শক্তিকে পঙ্গু করে দিবে বা যুদ্ধজাহাজের বহর ডুবিয়ে দিবে। এর জন্যই যুক্তরাষ্ট্র অস্ট্রেলিয়াসহ আশেপাশের অঞ্চলে তার সামরিক সরবরাহ কেন্দ্র ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
দেশটির সামরিক পণ্য সরবরাহকারী সংস্থা ইউএস ট্রান্সপোর্টেশন কমান্ড (ট্রান্সকম) রাশিয়ার সাথে যুদ্ধে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে ৬৬০ মিলিয়ন পাউন্ডেরও বেশি সরঞ্জাম এবং ২ মিলিয়ন রাউন্ডেরও বেশি কামান পাঠিয়েছে। তবে মার্কিন কর্মকর্তা এবং বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, চীনের উপকূল থেকে প্রায় ১০০ মাইল দূরে তাইওয়ানকে এভাবে সমর্থন করা তাদের জন্য অনেক বেশি কঠিন হবে।
দুর্বলতা মোকাবেলা করার জন্য, মার্কিন সামরিক বাহিনী অস্ট্রেলিয়ার মতো জায়গাগুলোকে সরঞ্জাম মজুদ করার জন্য ব্যবহার করছে। এমনকি ফিলিপিন্স, জাপান এবং প্রশান্ত মহাসাগরের অন্যান্য অংশীদারদের সাথে এই ব্যাপারে কথা বলেছে।
যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তক্ষেপের কথা না বললেও জো বাইডেন বলেছেন, তিনি দ্বীপটি রক্ষার জন্য মার্কিন সেনা মোতায়েন করবেন। অন্যদিকে শি তার সামরিক বাহিনীকে ২০২৭ সালের মধ্যে তাইওয়ান দখলের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু অনেক বিশ্লেষক এটিকে আক্রমণের সময়সীমার পরিবর্তে তার সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন।
পেন্টাগনের শীর্ষ লজিস্টিক কর্মকর্তাদের একজন রিয়ার অ্যাডমিরাল ডিওন ইংলিশ বলেছেন, দক্ষতার জন্য পরিকল্পনা করার পরিবর্তে, আপনাকে সম্ভবত কার্যকারিতার জন্য পরিকল্পনা করতে হবে এবং ঠিক সময়ে যুদ্ধ ক্ষেত্রে পৌছাতে হবে। রয়টার্সের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মার্কিন সামরিক বাহিনী ২০২৩ থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত এশিয়ায় সরঞ্জাম ও জ্বালানি সরবরাহের উন্নতির জন্য আড়াই বিলিয়ন ডলার চাওয়ার পরিকল্পনা করছে। এতে ভালোভাবেই বোঝা যাচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে সমর্থন জানাতে নিজেদের আগে থেকেই গুছিয়ে নিচ্ছে।