আফ্রিকার দেশ মরক্কোতে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর ঢাকাতেও একাধিক ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। সর্বশেষ গত রোববার ঢাকায় ৪.৭ মাত্রার ভূমকম্পন অনুভূত হয়। এরপর থেকেই সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে নানা গুজব। এরমধ্যে একটি হলো- ৯ মাত্রার ভূমিকম্প ঝুঁকিতে রয়েছে ঢাকা। আরেকটি হচ্ছে- বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে নাকি ঢাকা মাটির নিচে মিশে যাবে।
এমন তথ্যের সত্যতা আসলে কতটুকু?
এই বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মু. মুস্তফা কামাল বলছেন, বড় ধরণের একটা ভূমিকম্পের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে তা সাম্প্রতিক সময়ে হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
তিনি বলেন, সাধারণত রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার ওপর ভূমিকম্প হতে হলে তার আগে কিছু ছোট ছোট ভূমিকম্প অনুভূত হয়। তবে তা যে সবক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে, তা না। যদিও এর কিছুটা সম্ভাবনা থাকে।

তিনি জানান, আমরা এখন ৩টি প্লেটের জংশনে আছি। ভূতাত্ত্বিক জায়গা থেকে যা খুবই স্পর্শকাতর। তবে এর সব কিছুই নির্ভর করছে প্লেটগুলোর মুভমেন্টের ওপর। এখন ইন্ডিয়া প্লেট মুভ করছে নর্থ এর দিকে। ইস্টার্ন ইন্ডিয়া (বাংলাদেশসহ) মুভ করছে ইস্ট এর দিকে, আর বার্মা প্লেট মুভ করছে ওয়েস্ট এর দিকে। আবার সিলেট ও মেঘালয়ের মধ্য থাকা ডাউকি ফল্ট কিন্তু বড় ধরণের ঝুঁকি আমাদের জন্য। ফলে আমরা একেবারে উড়িয়ে দিতে পারি না যে বড় ধরণের ভূমিকম্পের কোন সম্ভাবনা নেই। সম্ভাবনা রয়েছে যে আগামী ১৫-২০ বছরের মধ্যে দেশে বড় ধরণের একটি ভূমিকম্প হতে পারে।
বিশ্লেষকরা আরও জানান, প্রতিদিন সারা পৃথিবীতে যে পরিমাণ ভূমিকম্প হয় তাতে দুই একটা এই অঞ্চলে হবেই। এতে কোন অস্বাভাবিকতা নেই।
ভূতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ মকবুল ই ইলাহী বলেছন, গত ৪০০ বছরের ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করলে আমি ঢাকাতে ৭ মাত্রার বেশি ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার সম্ভাবনা দেখছি না। আর তা সম্প্রতি সময়ে হওয়ার সম্ভাবনাও খুব কম।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশকে ভূকম্পনের তিনটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জোন হিসেবে উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কিছু কিছু স্থান- যেমন: সিলেট, রাঙামাটি, বান্দরবান, কক্সবাজার উল্লেখযোগ্য। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ এবং পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল সর্বাপেক্ষা কম ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরে মাঝে মধ্যেই যেসব ভূকম্পনগুলো অনুভূত হয়, যার উৎস সাধারণত বাংলাদেশের বাইরে এবং এই শহর থেকে ২০০/৩০০ কিলোমিটার দূরে। অনেকগুলো ভূমিকম্পের মূল কেন্দ্র ছিল পূর্ব দিকে মিয়ানমার অথবা ভারতের মিজোরাম, মনিপুর এবং উত্তরে আসাম, নেপাল কিংবা ভুটানে। কিন্তু এর মধ্যেই অনেক ছোট-বড় ভূমিকম্প হয়েছে যার উৎসস্থল ছিলো ঢাকার কাছাকাছি এলাকাগুলোতেই।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভূমিকম্প যেকোন সময় হতেই পারে। তাই আতঙ্কিত না হয়ে আগেই সচেতন থাকা জরুরি।
বিজ্ঞাপন