জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার প্রতিষ্ঠাতা শামিন মাহফুজকে ২০১৪ সালে ডিবি গ্রেপ্তার করেছিল। এরপর তিনি কাশিমপুর কারাগারে ছিলেন। সেখানে থাকাকালীন সময়ে জেএমবির শীর্ষ নেতৃত্ব সাইদুর রহমান, মুফতি হান্নান, আবু সাঈদের সংস্পর্শে আসেন। তখনই কারাগারে বসে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ নতুন জঙ্গি সংগঠনটির পরিকল্পনা করেন তারা।
দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর মোস্ট ওয়ান্টেড দুর্ধর্ষ জঙ্গি শামিন মাহফুজ ওরফে স্যার ওরফে আরিফ ওরফে আসলাম ওরফে মেন্ডিং ও তার স্ত্রী নাজনীনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।
শুক্রবার ২৩ জুন রাতে রাজধানীর ডেমরা এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি পিস্তল ও বিপুল পরিমান বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার ২৪ জুন দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।
তিনি বলেন: ছাত্র জীবন থেকেই শামিন মাহফুজ অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলো। এসএসসিতে রাজশাহী বোর্ডে ৫ম স্থান অর্জন করে, এরপর রংপুর ক্যাডেট কলেজে পড়াকালীন সময়ে শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আসলে তাকে ক্যাডেট কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর অন্য একটি কলেজে ভর্তি হলেও সে মেধার স্বাক্ষর রাখে। এইচএসসিতে রাজশাহী বোর্ডে ৭ম স্থান অর্জন করে।
এরপর ঢাবিতে ভর্তি হওয়ার পরেই বড়ভাইয়ের ছেলের মাধ্যমে জঙ্গি সংগঠনে জড়িয়ে যায়। যে সংগঠনটি পরে আনসার আল ইনলাম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ২০০৭ সাল থেকেই শামিন মাহফুজ সংগঠনের আধ্যাত্মিক নেতা জসীম উদ্দিন রহমানীসহ শীর্ষ নেতৃত্বের সংস্পর্শে আসে। সে সময় আরেকটা বিদেশী চরিত্র বাংলাদেশের জঙ্গিবাদে আভির্ভুত হয় বলে জানা গিয়েছিল। কিন্তু সে চরিত্রের বিষয়ে আমরা স্পষ্ট নই, সেই চরিত্রের বিষয়ে আমরা শামিন মাহফুজের কাছ থেকে জানার চেষ্টা করবো।
সিটিটিসি প্রধান বলেন: শামিন মাহফুজকে ২০১১ সালে বিজিবি কর্তৃক গ্রেপ্তার হয়। জেল থেকে বেরিয়ে একই কার্যক্রম অব্যহত রাখে। ২০১৪ সালে ডিবি কর্তৃক আবার গ্রেপ্তার। এরপর তিনি কাশিমপুর কারাগারে ছিলেন। সেখানে থাকাকালীন নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের প্রথম পরিকল্পনা হয়। সেখানে থাকা অবস্থায় আটক হুজি এবং জেএমবির শীর্ষ নেতৃত্ব সাইদুর রহমান, মুফতি হান্নান, আবু সাঈদের সংস্পর্শে আসেন। তখন রক্সিও জেলখানায় ছিলেন।
সে সময় জঙ্গি নেতারা জানতো শামিন মাহফুজ এবং রক্সি আগেই জেল থেকে বের হবে। তাই তাদের উপর দায়িত্ব দেওয়া হয় নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরির জন্য। ২০১৭ সালে রক্সি এবং ২০১৮ সালে শামিন মাহফুজ জেল থেকে জামিনে ছাড়া পান। এরপর থেকে তারা সদস্য সংগ্রহ শুরু করে কিন্তু সংগঠনের নামকরন হয়নি। তবে তারা একটি প্ল্যাটফর্ম নিয়ে কাজ করতে থাকে।
মো. আসাদুজ্জামান বলেন: রক্সি দাওয়াতি কার্যক্রম এবং শামিন মাহফুজ পাহাড়ে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু করে। তখন ২০১৯ সালে রক্সিকে সংগঠনের আমির হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।
রক্সি গ্রেপ্তারের পর মূল ব্যক্তি হিসেবে তমালকে আমির হিসেবে নিয়োগ দেন শামিন। ২০২২ সসালে সুরা কমিটি গঠন করে বিভিন্ন জনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের উদ্দেশ্য সশস্ত্র জিহাদ করা। তাদের মতে যারা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য যারা কাজ করে তারা মুরতাদ। তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাই মূল উদ্দেশ্য ছিল। তবে তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিশ্চিত হতে আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন: শামিন মাহফুজের স্ত্রী যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিনি ছিলেন আনসার আল ইসলামের ইজাজ কারগিলের স্ত্রী। যিনি কারগিল যুদ্ধে ড্রোন হামলায় মারা যান। ইজাজ যখন পাকিস্তান চলে যান তখন সংগঠনের সিদ্ধান্তে তার স্ত্রীকে বিয়ে করেন শামিন। তার স্ত্রীও সংগঠনের নারী সদস্য হিসেবে নারীদের দাওয়াতি কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন।
সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে আলোচিত জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার প্রতিষ্ঠাতা ও মূল ব্যক্তি শামিন মাহফুজকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান হয়েছে। এর মাধ্যমে একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন সিটিটিসি প্রধান।