আসাদুজ্জামান বাবুল : দখল আর দূষণে মরতে বসেছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাজার স্মৃতি বিজড়িত গোপালগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী পাচুড়িয়া খাল। জেলার মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া এক সময়কার প্রবল খরস্রোতা ঐতিহ্যবাহী পাচুড়িয়া খাল এখন শুধুই স্মৃতি।
জানা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শৈশব থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই খাল দিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় আসা-যাওয়া করতেন। শুধু তাই নয়, খাল দিয়ে নৌকায় চড়ে গ্রামের বাড়ি যাওয়া-আসা করতেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেচ্ছা মুজিব ও তার কন্যা, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ পরিবারের অন্যান্য লোকজন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ না থাকায় খালটি দখল ও দূষণ শুরু হয়। ভুমিদস্যু দখলদাররা খালের দু’পাড় দখল করে ইচ্ছেমতো বহুতল বসতবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা করেছেন। কেউ কেউ আবার টিনশেড বাড়ি বানিয়ে মাসিক ভাড়া দিচ্ছে। কোন কোন জায়গায় আবার খালের মধ্যেই সীমানা প্রাচীর দিয়ে দখল করে বহুতল ভবনের বিলাসবহুল বসতবাড়ি নির্মাণ করেছে। দখলদাররা খালের তলদেশ থেকে তৈরি করেছে একাধিক বহুতল ভবনের বাড়ি।
খালটির তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষের কাছে খালটি এখন নামেই শুধু খাল হিসাবে পরিচিত হয়ে আছে। শহরের চারপাশের পয়ঃনিস্কাশন খালে পরিণত হয়েছে। ক্লিনিক, ডায়াগনিস্টিক সেন্টারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান-ও বাসা বাড়ির ময়লা-আবর্জনা আর দুগন্ধযুক্ত বর্জ্য প্রতিনিয়ত খালের মধ্যে ফেলা হচ্ছে। এতে মরে যাচ্ছে নানা প্রজাতির দেশীয় মাছ আর চলে গেছে নানা প্রকার জীববৈচিত্র। ফলে খালটি এখন মাছ ও জীববৈচিত্র শূন্য হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে একসময় এ অঞ্চলের নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে এই খালটি ছিল জীবন-জীবিকার একমাত্র ভরসা।
খালটি প্রভাবশালী ভুমিদস্যুদের দখল আর দূষণে মরতে বসেছে– খবরটি গণমাধ্যমে পাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থানীয় জেলা প্রশাসনকে খালটি দখলমুক্ত করে খনন করে পানি সরবরাহের নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রীর নিদের্শনা অনুযায়ী খালটির দু’পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ খননসহ উন্নয়ন প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু করেন জেলা প্রশাসন।
গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবাহী প্রকৌশলী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নিবাহী প্রকৌশলী ও পৌর মেয়র শেখ রকিব হোসেন এ কাজে সহযোগিতা করতে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগ দেন।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, ডিসি অফিস অবৈধ দখলদারদের বাঁচাতে খালটির খনন কাজ আদি নকশা অনুযায়ী না করে বিকল্প পথে শুরু করে। পরবর্তীতে কোনভাবে খালের মুখ কেটে পানি প্রবাহ চালু করেই জেলা প্রশাসক বদলী হয়ে ঢাকায় যাওয়ার পর খালের উন্নয়ন কাজ বন্ধ হয়ে পড়ে, যা আজও অব্যাহত রয়েছে।