বাজারের নাম ফকিন্নি বাজার। প্রায় অর্ধশত বছর ধরে গড়ে ওঠা একটি বাজার। নিম্নবিত্তের প্রতিদিনের বাজারের জন্য ভরসার এক জায়গা।
যেভাবে এই বাজারের নাম ফকিন্নি বাজার হল
বাজার ঘুরে উত্তর জানা গেল এই বাজারে ১৯৭৪ সাল থেকে নিয়মিত আসা শাক বিক্রেতা খলিলের কাছে। তার মতে, সারাদিন ভিক্ষা করা শেষে ভিক্ষুকরা এই স্থানটিতে আসত একটু বিশ্রাম নিতে। সেসময় টোকাই মহিলারা কারওয়ান বাজার থেকে কুড়িয়ে এনে তাদের কাছে পণ্য বিক্রি করত অল্প দামে। এরপর কয়েকজন বিক্রেতা তাদের অবিক্রিত পণ্য কম দামে বিক্রি করতে আসত ভিক্ষুকদের কাছে। ভিক্ষুকরা মন মত দামে পেতে থাকে তাদের চাহিদার পণ্য। তখন থেকেই বাজারটির নাম হয়ে যায় ফকিন্নি বাজার।
এই বাজারটি যেখানে
রাজধানী ঢাকার তেজকুনি পাড়ায় রেল লাইনের কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে এই বাজার। চলছে প্রায় চল্লিশ বছর ধরে।
এই বাজারের বিশেষত্ব
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেল এক ভিন্ন চিত্র। চাল, ডাল, কাঁচা বাজার থেকে শুরু করে মাছ-মাংস, তেল, মশলা সবই পাওয়া যাচ্ছে কম মূল্যে। বিক্রেতারা এসব পণ্য কিনে আনেন মূলত কারওয়ান বাজার থেকে। সেখানকার অবিক্রিত বা উচ্ছিষ্ট পণ্য কিনে এখানে বাজার মূল্যের তুলনায় অনেক কম মূল্যে বিক্রি করেন তারা।
১০ টাকায় অল্প পরিমাণে ছোট ছোট প্যাকেটে এখানে বিক্রি হচ্ছে হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া, লবণ, চিনি, শুঁটকি মাছসহ আরও বেশ কিছু পণ্য।
ফকিন্নি বাজারে প্রতিদিনই বসে কয়েকটি মাছের বাজার। বিভিন্ন পাইকারি মাছের আড়ত থেকে বিক্রি না হওয়া মাছগুলো সংগ্রহ করে কিনে বিক্রি করা হয় এই বাজারে। এখানে একটি পাঙ্গাস মাছ ১৫০ টাকা, কয়েক রকম ছোট মাছ এক পোয়া ৫০ টাকা। এছাড়াও নানা রকম মাছের পশরা বসে প্রতিদিন এই বাজারে।
এই বাজারে বিভিন্ন দোকানের ফেটে যাওয়া ডিম ভেঙ্গে ৪টি করে প্লাস্টিক ব্যাগে বিক্রি করেন হালিমা। জানালেন, ৪টি ডিম বিক্রি করেন ২৫ টাকায়। তবে বাজার মূল্যের সাথে সাথে উঠানামা করে এই দাম।
খাসির মাংসের দাম যেখানে সাধারণ বাজারে হাজারের কোঠায়, সেখানে এ বাজারে খাসির মাথা বিক্রি হয় ১৫০-২০০ টাকায়। পাওয়া যায় ২-৩ দিনের পুরনো খাসির মাথা ও কলিজা। নিম্নবিত্তের সংসারে এগুলো ডাল বা আলু দিয়ে রান্না করেই মাংস খাবার সাধ মেটানো হয়।
প্রসিদ্ধ ব্রান্ডের প্যাকেট বা বোতলজাত তেল নয় খোলা তেল বিক্রি হয় এই বাজারে। তেল বিক্রেতা আবু তাহের জানালেন, ১ পোয়া তেল ৪০ টাকা দামে বিক্রি করছেন তিনি।
সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেল, বেগুন ২৫ টাকা, আলু ১০ টাকা, পেয়াজ ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, ডাটা শাক ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও কয়েকটি সবজি একটি করে নেয়ার সুযোগও আছে এই বাজারে।
কাঁচা বাজার, মাছ-মাংস ভাগে পাওয়া যায় ছোট সংসারের জন্য। পুঁজিবাদ এড়াতে নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি বিক্রি করেন না এখানকার বিক্রেতারা। একজন চাল বিক্রেতা জানালেন, আধা কেজির বেশি তিনি একজনের কাছে বিক্রি করেন না।
নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ছাড়াও এখানে পাওয়া যায় আইসক্রিম, কুলফি মালাইসহ কিছু শখের পণ্যও। আলাদা কোন দোকান ভাড়া বা বিদ্যুৎ খরচ না থাকায় অতিরিক্ত মূল্য যোগ করারও দরকার হয় না।
ক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২০০ টাকার বাজারে ৪-৬ জনের একটি পরিবার চলতে পারে। তাই বলা যায় বাজারটি রাজধানীর বুকে নিম্নবিত্তদের একমাত্র ভরসার জায়গা।