বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, প্লাস্টিক কোনো সস্তা পণ্য নয়। আপাত দৃষ্টিতে সস্তা মনে হলেও দীর্ঘমেয়াদে এর ক্ষতিকর প্রভাবটি বিপুল। রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবহারের প্রসার ও দূষণ রোধ করা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
দেশে প্রতিদিন ৩ হাজার কারখানায় ১ কোটি ৪০ লাখ পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন হচ্ছে বলে উল্লেখ করে রিজওয়ানা হাসান বলেন, একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিনের ব্যাগের পরিবর্তে হাট-বাজারে ও পণ্যের প্যাকেজিং-এ পরিবেশ বান্ধব দেশীয় উপাদান যেমন পাট, কাপড় ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে একদিকে যেমন পরিবেশ রক্ষা পাবে, অন্যদিকে দেশীয় পণ্যের প্রসার ঘটবে। প্লাস্টিক দূষণ থেকে দেশকে রক্ষা করতে স্বনামধন্য স্থানীয় ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলো মিলে গঠন করেছে ‘বাংলাদেশ সাসটেইনেবিলিটি অ্যালায়েন্স’ (বিএসএ)।
গতবছর নভেম্বরে বিএসএ-এর যাত্রা শুরু। ওই অনুষ্ঠানে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন বিশেষ দূত ও বর্তমানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, এমপি উপস্থিত ছিলেন। ‘প্লাস্টিক এবং পরিবেশ’ বিষয়ে একটি আলোচনার মাধ্যমে শুরু হয়েছে ‘সাসটেইনেবিলিটি শর্টস’ শীর্ষক কার্যক্রম।
বুধবার ৩১ জানুয়ারি মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে অনুষ্ঠিত এই আলোচনায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বেলা’র প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। অনুষ্ঠানে ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ তার বক্তব্যে বলেন, বিএসএ এমন একটি প্ল্যাটফরম যেখানে প্লাস্টিক দূষণ রোধ ও পরিবেশ সুরক্ষা বিষয়ে সবার কথা আমরা শুনতে চাই, সকলকে এখানে যুক্ত করতে চাই। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে ‘সাসটেইনেবিলিটি শর্টস’-এর উদ্বোধনী বক্তা হিসেবে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে; পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়ে যার প্রজ্ঞা, জ্ঞান এবং সাহসী পদক্ষেপগুলো সর্বজনস্বীকৃত।
অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্যে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহতা, এ সংক্রান্ত দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আইনগুলো তুলে ধরার পাশাপাশি প্লাস্টিক বর্জ্যব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার
প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
তিনি বলেন, ২০০৫ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে মাথাপিছু প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার ৩ কেজি থেকে বেড়ে ৯ কেজি হয়েছে। এই প্লাস্টিক ও পলিথিনের একটি বড় অংশই মাটিতে এবং নদনদীতে গিয়ে জড়ো হচ্ছে। শিশুদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ মায়ের দুধেও প্লাস্টিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এ ছাড়া নদ-নদীর মাছ, চিনি, লবন ও পানিতেও পাওয়া গেছে ক্ষতিকর প্লাস্টিক।
প্লাস্টিক পণ্যের যথেচ্ছ ব্যবহার রোধে দেশের বিদ্যমান আইনগুলোকে ইতিবাচক হিসেবে উল্লেখ করে রিজওয়ানা হাসান বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ এবং বর্জ্যব্যাবস্থাপনা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। এর পাশাপাশি বাজার মনিটরিং-এর অভাব এবং প্লাস্টিক বর্জ্যব্যবস্থাপনায় বাজেট স্বল্পতাকেও বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রশ্ন-উত্তর পর্বটি সঞ্চালনা করেন আসিফ সালেহ্। এই পর্বে ব্র্যাক এন্টারপ্রাইজেস, প্রাণ- আরএফএল, ম্যারিকো বাংলাদেশসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং জলবায়ু ইস্যুতে সক্রিয় তরুণ
কর্মীরা অংশ নেন। প্লাস্টিক দূষণকে প্রতিরোধ-প্রতিকারে কাজ করার অঙ্গীকার নিয়ে গঠিত হয়েছে বিএসএ।
প্লাস্টিক দূষণ রোধে কার্যকরী সমাধান খোঁজার পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য, প্রকৃতি, জীবিকা এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করবে বিএসএ। এই উদ্যোগের অংশীদার হয়েছে ব্র্যাক, প্রাণ-আরএফএল, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ, ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেড, বাংলাদেশ পেট্রোকেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড, ও ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড।