পাকিস্তানের ভেতর জঙ্গি গোষ্ঠীর ঘাঁটি লক্ষ্য করে ইরান যেভাবে মিসাইল ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে সেটিতে অনেকেই বেশ বিস্মিত হয়েছেন। এর বড় কারণ হচ্ছে, এই দুটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিবেশী দেশকে আপাতদৃষ্টিতে থেকে পরস্পরের ভ্রাতৃপ্রতিম ও বন্ধু বলেই মনে হয়। ইরানের এই হামলার পর দেশটিতে পাল্টা হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। দুই দেশের এই পাল্টাপাল্টি হামলা যুদ্ধে মোড় নেবে কিনা তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
আজ ১৯ জানুয়ারি শুক্রবার এই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি বাংলা। এতে বলা হয়, পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যে যা ঘটেছে সেটা এটা শক্তি প্রদর্শনের হামলা। কাউকে ধরাশায়ী করার জন্য নয়। এটা একটা রাজনৈতিক বার্তাও বটে। উভয় দেশ পরস্পরের প্রতি তাদের সামর্থ দেখাতে চাইছে। তবে পাকিস্তানের পাল্টা হামলার পর ইরান যদি আবারও আক্রমণ করে তাহলে পাকিস্তান আরও জোরালো আক্রমণ করবে। সেক্ষেত্রে সংঘাত ছড়িয়ে যেতে পারে বলে আশংকা করছেন পর্যবেক্ষকরা।
কুুয়ালালামপুরে মালয় ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও সমর বিশেষজ্ঞ সৈয়দ মাহমুদ আলী বলেন, আপনি আমাকে একটা ঘুষি মেরেছেন, আমি আপনাকে পাল্টা আরেকটি ঘুষি মেরেছি। এই শক্তি প্রদর্শনের বিষয়টা যদি ওখানে শেষ হয়ে যায়, তাহলে ব্যাপারটা এখানেই শেষ হয়ে যাবে। এখন বিষয়টি ইরানের হাতে। ইরান যদি আবারও হামলা চালায় তাহলে সংঘাত ছড়িয়ে যাবে। এছাড়াও ইরান ও পাকিস্তানে মধ্যে সংঘাত ছড়িয়ে গেলে আমেরিকা পাকিস্তানকে সমর্থন দেবে বলে মনে করেন সৈয়দ মাহমুদ আলী।
ইরান কেন আক্রমণ করেছে?
প্রথম কারণ হচ্ছে ইরান মনে করে পাকিস্তানের বেলুচিস্তান থেকে জঙ্গিরা এসে ইরানের সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশে হামলা করছে। গত বছর ইরানের ভেতরে বেশ কয়েকটি জঙ্গি হামলা হয়েছে। গত ডিসেম্বর মাসে সর্বশেষ হামলায় ইরানের একটি পুলিশ স্টেশনে অতর্কিত আক্রমণে ইরানের ১১জন নিরাপত্তা কর্মী নিহত হয়েছে। ইরানের কর্মকর্তারা দাবি করেছিলেন, এসব হামলাকারীরা পাকিস্তানের ভেতর থেকে এসেছিল।
দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে শিয়া-সুন্নি বিরোধ। পাকিস্তানে বিভিন্ন সময় শিয়াদের লক্ষ্য করে নানা ধরণের হামলা হয়। এ বিষয়টি ইরানের মধ্যে একটি চাপা ক্ষোভ তৈরি করেছে বহুদিন ধরে।পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলে মসজিদে যখন কোনও বোমা হামলা হয় তখন সেটি শিয়াদের বিরুদ্ধে হয়।
পাকিস্তানের ভাবনা কী?
পাকিস্তানের সাবেক কূটনীতিক ও পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, সীমান্তে জঙ্গি-কার্যক্রমের যে সমস্যা আছে সেটি দুই দেশ একত্রে কাজ করে দূর করতে পারে। কোন একটি পক্ষ থেকে একতরফা কাজ করে এ সমস্যার সমাধান করা যাবে না। ইরানের সাথে সম্পর্কের যাতে অবনতি না হয় সেটিকে দৃষ্টি দেবার কথা বলছেন পাকিস্তানের পর্যবেক্ষকরা। তারা মনে করেন, সীমান্ত সমস্যা নিয়ে ইরানকে ভারতের কাতারে ফেলা ঠিক হবেনা।
পাকিস্তানের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, ইরানের ভেতরে আঘাত করার মাধ্যমে পাকিস্তান একটি সীমা অতিক্রম করেছে, যেটি লঙ্ঘন করার ব্যাপারে আমেরিকা এবং ইসরায়েলও সবসময় সতর্ক থাকে। পাকিস্তান যে নিয়ন্ত্রিত জবাব দিয়েছে সেটি তেহরানের মাঝে উদ্বেগ সৃষ্টি করবে।