বহুমাত্রিক গুণসূত্রের সূচিতে ভরপুর মাহে রমজান। ইবাদতের আমেজপূর্ণ হওয়ার পাশাপাশি এ মাস আমাদের শিখিয়ে যায় সচ্চরিত্রের হিসাবনিকাশ। হুসনে খুলুক তথা উত্তম চরিত্র বা সুন্দর চরিত্রের এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটে এ মাসে। উত্তম চরিত্র মানুষকে আল্লাহর প্রিয় করে তোলে। যার চরিত্র যত সুন্দর, সে আল্লাহর কাছে তত বেশি প্রিয়। হাদিসে মুবারকায় নবি আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় মানুষ তারা, যারা উত্তম চরিত্রের অধিকারী।’ (জামিউস সগির, হাদিস : ২১৮)। পবিত্র মাহে রমজানে হুসনে খুলুকের যেসব দ্বার উন্মুক্ত হয়, তার কিছুটা নিচে তোলে ধরার প্রয়াস পাচ্ছি।
ত্যাগ : মাহে রমজান সর্বাগ্রে যে গুণগত মানের অধিকারী করে তোলে, তার নাম ত্যাগ। শারীরিক, মানসিক, আর্থিক ভাবে বিভিন্ন পর্যায়ের সুবিধা লুফে নেয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও মুমিন এসব ক্ষেত্রে নিজেকে ত্যাগের মোহনায় উপনীত করে মাহে রমজানের সুবাদে।
সহমর্মিতা : একে অপরের প্রতি সহমর্মিতার শিক্ষা ইসলামের অনন্যসুন্দর একটি দিক। জীবনের অধিকাংশ ক্ষেত্রে সহমর্মিতার প্রয়োজন। ক্ষেত্রভেদে একজন মানুষ আরেকজনের সহমর্মিতা না পেলে তার জীবন হয়ে উঠে অতিষ্ঠ। বিভিন্ন সমস্যা ও বিপদগ্রস্ত মানুষ অন্যদের সহমর্মিতায় সান্ত্বনার সন্ধান পাওয়া যায়। মানবতার ধর্ম তাই সহমর্মিতার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। রমজান মাস এলে মুসলিম মানসপটে যাকাত, ফিতরা ও দান-খয়রাতের মনমানসিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। হাদিসের উদ্ধৃতিও বলছে তাই। হযরত সালমান ফারসি রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত; রসুলে আশরাফ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের মাঝে রমজানের মাস উপনীত হয়েছে, যা সহমর্মিতার মাস।’ (সহিহ ইবন খুযাইমা, হাদিস নং—১৮৮৭)
সময়ানুবর্তিতা : একই সময়ে সাহরি, আবার একই সময়ে ইফতার। ধনী-গরিবের মাঝে কোনো ভেদাভেদ নেই, সবাই সময়ের প্রতি যথাযথ মূল্যায়ন করার ক্ষেত্র হিসেবে মাহে রমজান সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। হাজারো নামি-দামি বাহারি খাবার সামনে থাকা সত্ত্বেও নিজেকে সংবরণ করে রাখে মানুষ অল্পকিছু সময়ের কারণে। দিনের বেলায় অনেক কাজের ফিরিস্তি থাকার পরেও সময়ের প্রতি যথাযথ দৃষ্টিপাত করে কাজগুলো সম্পন্ন করেন। তাই, মাহে রমজান আমাদেরকে সময়ের প্রতি যত্নবান হতে হাতছানি দেয়।
ধৈর্য : সারাদিন উপবাস। পানাহারে প্রচণ্ড টান। জৈবিক চাহিদা পূরণের উত্তেজনা সত্ত্বেও মহান রবের সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে সবধরণের পানাহার এবং পাপাচার থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে ধৈর্যের পরিচয় দেয়ার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত মাহে রমজান। এ মাস আমাদের জন্য ধৈর্য চর্চার একটি বড় ক্ষেত্র। সাহাবিয়ে রসুল হযরত আবু হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত; রসুলে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘রোজাদারদের কেউ অশ্রাবোক্তি কিংবা প্রহার করার উপনীত হলে, সে রোজাদার যেনো বলে—আমি রোজা পালন করছি।’ (বুখারি ও মুসলিম।)
দয়া ও নম্রতা : অন্যান্য মাসের চেয়ে মাহে রমজানেই মানুষ তুলনামূলক একে আপরের প্রতি দয়া ও নম্রতা প্রদর্শন করে থাকে। বড় ধরণের অন্যায় করে থাকলে তা ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার ও মূল্যায়ন করার সুযোগ করে দেয় কেবল মাহে রমজান। এভাবে চরিত্রের ভাস্কর্যসমূহ বারংবার নব আঙিকে সাজানোর অপার সম্ভাবনার সুযোগ করে দেওয়ার ক্ষেত্রে মাহে রমজান অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
চারিত্রিক উৎকর্ষ সাধন হলেও মাধ্যমে মানুষ মহান আল্লাহর কাছে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী হয়। তাদের মহান আল্লাহ অধিক হারে ভালোবাসেন। পদমর্যাদা বাড়িয়ে দেন। সবার নিকট প্রিয় ও সম্মানিত করেন। আর এসব উত্তম চরিত্রের অগুনতি দরজার কপাট খোলে আমাদের ডাক দিয়ে যায় পবিত্র মাহে রমজান। মাহে রমজান বিদায়ের পথে। অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে উত্তম চরিত্রের বিষয়াবলির অর্জন ও চর্চার প্রতি মনোনিবেশ অতীব প্রয়োজন। সুযোগ নাগালে আসা সত্ত্বেও যেনো হাতছাড়া না করি।