কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার হলদিয়াপালং ইউনিয়নের পশ্চিম মরিচ্যা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আবুল হাশেমের বাড়িতে বিরাজ করছে নিরবতা ও কান্নার সুর।
শনিবার ২ মার্চ সকাল ৮টায় বাড়ির সামনে বসে ছিলেন বয়োবৃদ্ধ এই মুক্তিযোদ্ধা। বাড়ির উঠানে সারিবদ্ধ চেয়ার বসানো। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়িটিতে ভিড় জমতে শুরু করেছে আত্মীয়-স্বজন আর গ্রামের মানুষের কিছু আনাগোনা। বাড়ির একটু দূরে পশ্চিম মরিচ্যা জামে মসজিদের পাশে পারিবারিক কবরস্থানে তৈরি করা হচ্ছে ৩টি কবর। যেখানে শানিত করা হবে বীর মুক্তিযোদ্ধার ছেলে কাস্টমস কর্মকর্তা, তার স্ত্রী ও সন্তানকে। যারা রাজধানীর বেইলি রোডের ‘গ্রিনফ কোজি কটেজ’ ভবনে লাগা আগুনে মারা গেছেন।
তারা হলেন, কাস্টমস ইন্সপেক্টর শাহজালাল উদ্দিন (৩৭) তার স্ত্রী মেহেরুন নেসা হেলালী (২৪) এবং তাদের মেয়ে ফাইরুজ কাশেম জামিলা (৪)।
শনিবার সকাল সাড়ে ৯ টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে মরদেহ ৩ টি গ্রহণ করেছেন নিহত শাহ জালাল উদ্দিনের বড় ভাই শাহজাহান সাজু। শাহজাহান সাজু উখিয়া উপজেলার হলদিয়াপালং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। শাহজাহান সাজু বলেন, মরদেহবাহী গাড়ি নিয়ে তিনি ঢাকা থেকে মরিচ্যার গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন।
সন্তান হারিয়ে অনেকটা নির্বাক মুক্তিযোদ্ধা ও চিকিৎসক পিতা। তারপরও পাথরচাপা কষ্টে কথা বলেন গণমাধ্যমের সাথে।
হতভাগ্য বাবা আবুল হাশেম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ৫ ভাই এক বোনের মধ্যে শাহজালাল উদ্দিন তৃতীয়। তিনি ২০১৭ সালে কাস্টমসের চাকুরিতে যোগদান করেন। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলার পানগাঁও কাস্টমস অফিসে কর্মরত তিনি। প্রতিদিন বাবার সাথে ৩ থেকে ৪ বার ফোনে কথা বলেন। বৃদ্ধ পিতার চিকিৎসা ওষুধ সেবনের জন্য তাড়া দেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬ টার পর পিতার সাথে সর্বশেষ কথা বলেছিলেন শাহ জালাল উদ্দিন।
নিহত শাহ জালাল উদ্দিনের ছোট্ট ভাই হাশেম বিন লিংকন চ্যানেল আইন অনলাইনকে বলেন, বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের ২৪ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পর কক্সবাজার কাস্টমস অফিসের ভাইয়ের এক সহকর্মী ফোন করে জানান ফেসবুকে অজ্ঞাত পরিচয়ে যে কয়েকজনের মরদেহ দেখা যাচ্ছে সেগুলোর মধ্যে তার ভাবী ও মেয়ের ছবি দেখা যাচ্ছে। ভাইয়ের বিষয়টি জানেন না। তারপর থেকে পরিবারের পক্ষে যোগাযোগ করার পর শুক্রবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে ভাবীর বাবা ইঞ্জিনিয়ার মোক্তার হোসেন হেলালী ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে গিয়ে ৩ জনের মরদেহ শনাক্ত করেন। এরপর প্রশাসনিকভাবে মরদেহ হস্তান্তর করতে আইনগত বিষয় থাকায় রাতে ভাই (সাজু) ঢাকা পৌঁছে মরদেহ গ্রহণ করেছেন। গাড়ি যোগে রওয়ানা হয়েছেন।
নিহতের বোন তসলিমা আকতার চ্যানেল আইন অনলাইনকে বলেন, ভাইদের মধ্যে অনেকটা পিতার ভুমিকা পালন করতেন শাহজালাল। প্রতিনিয়ত ফোন করে খোঁজ খবর নিতেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়ও ফোন করে কিছু লাগবে কিনা জানতে চেয়েছিলেন। এখন ভাই নেই।
নিহতের মামাতো ভাই জামাল উদ্দিন চ্যানেল আইন অনলাইনকে জানান, পশ্চিম মরিচ্যা জামে মসজিদ সংলগ্ন পারিবারিক কবরস্থানে কবর তৈরি কাজ চলছে। ঢাকা থেকে মরদেহ গ্রামের বাড়ীতে পৌঁছার পর বিকালে মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হবে।