দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের ভোট গ্রহণের বাকি আর মাত্র কয়েক মাস। এমন সমীকরণকে সামনে রেখে রাজধানীতে পরপর দু’দিন (১ ও ২ সেপ্টেম্বর) বড় জমায়েতর মধ্যদিনে সাংগঠনিক সক্ষমতার পরিচয় দিতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
১ সেপ্টেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘ছাত্র সমাবেশ’ করবে আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। পরদিন ২ সেপ্টেম্বর আগারগাঁওয়ে ‘সুধী সমাবেশ’র আয়োজন করছে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। ওইদিন ঢাকা উড়ালসড়ক (এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে) উদ্বোধনের পর এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। দু’দিনের অনুষ্ঠানেই প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১ সেপ্টেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘ছাত্র সমাবেশ’
ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে দেশের ছাত্রসমাজ ও তরুণ প্রজন্মকে ছাত্রলীগের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ করার কৌশল নিয়েছে ছাত্রলীগ। সে উপলক্ষ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে প্রায় ৫ লাখ তরুণ ও ছাত্রের সমাবেশ করবে সংগঠনটি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ ‘ছাত্র সমাবেশ’ সমাবেশের এ আয়োজন।
সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সমাবেশ থেকে শিক্ষার্থীদের নির্বাচনি দিকনির্দেশনা দেবেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপরে ছাত্রসমাজ ও তরুণ প্রজন্মের আস্থা রয়েছে এমন বার্তাই দিতে যাচ্ছে ছাত্রলীগ। দেশবাসীকে আগামী নির্বাচনে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে থাকার আহ্বান জানাবে তারা। সেখানে তিনি স্মার্ট বাংলাদেশের পক্ষে ছাত্রসমাজের করণীয় ও দেশবাসীর কাছে ভোট চাইবেন বলেও জানা গেছে। এছাড়া স্বাধীনতাবিরোধী, বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় দেশবাসী ও ছাত্রসমাজকে সর্তক থাকারও আহ্বান জানাবেন শেখ হাসিনা।
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ৩১ আগস্ট এবং ১ সেপ্টেম্বর সকালের মধ্যে ঢাকায় পৌঁছানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ছাত্রসমাবেশ সফল করতে নেতাকর্মীদের একাধিক নির্দেশনা দিয়েছে ছাত্রলীগ। নির্দেশনায় রয়েছে, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়, মহানগর, জেলা, মেডিকেল কলেজ, কলেজ, উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন শাখা নিজ উদ্যোগে (কেন্দ্র ও সংশ্লিষ্ট ইউনিটের সঙ্গে সমন্বয় করে) নিজ-নিজ ইউনিট থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী, ছাত্র-তরুণ-যুবকদের নিয়ে উপস্থিত হওয়া।
ছাত্রসমাবেশের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন জানিয়েছেন: ছাত্র সমাবেশকে কেন্দ্র করে সারাদেশে শিক্ষার্থীদের মাঝে উচ্ছাস উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশের পক্ষে ছাত্রসমাজের নিরঙ্কুশ সমর্থন রয়েছে, সমাবেশে তার বহিঃপ্রকাশ ঘাটবে। বঙ্গবন্ধু তনয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে দেশের ছাত্রসমাজ ও তরুণ প্রজন্ম শপথগ্রহণ করবে, আগামী নির্বাচনে নৌকার পক্ষে ব্যালট বিপ্লব নিশ্চিত করার। সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে আমরা আগাচ্ছি।
শিক্ষার্থীরা ময়মনসিংহ বিভাগ থেকে বাসযোগে সমাবেশে আসবে। তাদের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এলাকায় গাড়ি পার্কিংয়ে ব্যবস্থা করা হবে। বরিশাল বিভাগ থেকে আসবে লঞ্চযোগে। তারা সদরঘাট থেকে নেমে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাবে। খুলনা বিভাগ থেকে বাসযোগে আসবে। চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে বাস এবং ট্রেনযোগে আসবে। রংপুর এবং রাজশাহী বিভাগ থেকে বাস এবং ট্রেনযোগে আসবে। ঢাকা বিভাগের শিক্ষার্থীরা নিজেদের মতো করে সমাবেশস্থলে আসবে।
২ সেপ্টেম্বর পুরাতন বাণিজ্যমেলার মাঠে ‘সুধী সমাবেশ’
২৮ জুলাই রাজধানীতে বিএনপির মহাসমাবেশের পর থেকেই ঢাকাতে বড় জমায়েতের পরিকল্পনা ছিলো আওয়ামী লীগের। সেই ধারাবাহিকতায় ২ সেপ্টেম্বর আগারগাঁওয়ে বড় জমায়েতের আয়োজন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। যা আয়োজন করবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। যদিও এই সমাবেশে ঢাকা বিভাগের সব জেলা থেকেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অংশ নেবে। এই সুধী সমাবেশকে সামনে রেখে কমপক্ষে ৫ লাখ লোকের জমায়েত করতে চায় ক্ষমতাসীনরা।
এজন্য ঢাকা বিভাগের ১১টি জেলা ইউনিট এবং ৪টি মহানগর ইউনিটকে নির্দিষ্ট সংখ্যক লোক নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। যেমন ঢাকা জেলাকে ৫০ হাজার লোক নিয়ে সমাবেশস্থলে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এভাবে জেলা ইউনিট গুলোকে কমপক্ষে ৩০ হাজার লোক নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। তারা বাস ও ট্রাক যোগে সুধী সমাবেশস্থলে উপস্থিত হবে। এছাড়া, যাত্রী চাহিদার প্রেক্ষিতে আগামী ১ ও ২ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন স্থান থেকে তেজগাঁও অভিমুখী ১০টি স্পেশাল পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। যেগুলো মূলক সমাবেশে আগত লোকেরা যাতায়াত করবে।
২ আগস্ট রংপুরে বড় সমাবেশের করেছিল আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারনী মহল বলছে: আসছে দু’মাসে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে সারাদেশে অন্তত ১০টি বড় শহরে বৃহত জমায়েত করতে চাইছে দলটি। এমনকি সেটা নির্বাচন পর্যন্ত টেনে নেওয়া হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেছেন: সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ঢাকা ছাড়াও সিলেট, বরিশাল, খুলনাসহ বিভিন্ন জেলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সমাবেশ হবে, এগুলো নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ। আওয়ামী লীগ জনগণের দল, জনগণের শক্তির দল। কেউ যদি মনে করে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবে, সেটা তাদের ভুল ধারণা।
যুবলীগও সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে ২ সেপ্টেম্বর সুধী সমাবেশে বড় জমায়েত করতে চায় আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ। সংগঠনটির চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন: এই সমাবেশে শক্তি প্রদর্শন ও জনসম্পৃক্ততা সৃষ্টির মাধ্যমে আমরা বিরোধী শক্তিকে জানাতে চাই যে নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথ আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী যুবলীগের দখলে থাকবে।