টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে অতীতে শঙ্কা জেগেছিল। আদি ফরম্যাটটির গ্রহণযোগ্যতা ফেরাতে দ্বিপক্ষীয় সিরিজের গুরুত্ব বাড়াতে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পরিকল্পনায় হেঁটেছে আইসিসি। গত সপ্তাহের শেষদিকে ফেব্রুয়ারির শুরুতে নিউজিল্যান্ড সফরের দুই টেস্টের সিরিজের জন্য আনকোরা দল দিয়েছে সাউথ আফ্রিকা। তাতে টেস্টের ভবিষ্যৎ নিয়ে অশনি সংকেতের কথা ফের জোরেশোরে আলোচিত হচ্ছে।
নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে প্রোটিয়াদের টেস্ট সিরিজ চলাকালীন সাউথ আফ্রিকায় বসবে এসএ-২০ লিগ। প্রথম সারির খেলোয়াড়রা টি-টুয়েন্টি ফরম্যাটের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগটিতে খেলতে আগ্রহী হওয়ায় কিউইদের বিপক্ষে খেলবেন না। ১৪ সদস্যের প্রোটিয়া দলের ৭ জনেরই টেস্ট অভিষেকই হয়নি। ২৭ বর্ষী নেইল ব্যান্ডকে করা হয়েছে অধিনায়ক, যিনি টেস্ট অভিষেকের অপেক্ষায় আছেন। দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ডুয়ান অলিভিয়ের খেলেছেন মাত্র ১৫ টেস্ট। ঘটনাটি এরইমধ্যে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
সিডনিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার তৃতীয় টেস্টের আগেরদিন মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে টেস্ট ক্রিকেটের বাস্তবতা নিয়ে কথা বলতে হয়েছে প্যাট কামিন্সকে। জনপ্রিয়তা না কমলেও টি-টুয়েন্টি, টি-টেন দ্য হান্ড্রেডের মতো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের আগ্রাসনে সাদা পোশাকের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে অজি অধিনায়ক মতামত তুলে ধরেছেন।
‘আমার আশা, ১০ কিংবা ২০ বছরের মধ্যে টেস্ট এখনকার চেয়েও শক্তিশালী হবে। পাকিস্তানের বিপক্ষে আমরা দুটি দুর্দান্ত টেস্ট ম্যাচ খেলেছি, সত্যিই অনেক সমর্থন পেয়েছি, বিপুল পরিমাণ দর্শক ছিল। তাই মনে করি না যে টেস্ট অতি নাটকীয়ভাবে পতনের মধ্যে আছে। যতটা এটা নিয়ে কখনো কখনো কথা বলা হয়। তবে মনে করি, অন্যান্য ক্রিকেটের সংখ্যা নিয়ে একটি সমস্যা আছে। স্পষ্টতই প্রতিভাধরদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা আগের চেয়ে বেশি। টেস্ট ক্রিকেটকে খুব ভালোবেসে বড় হয়েছি। জানি সাউথ আফ্রিকা তাদের শক্তিশালী দল পাঠাচ্ছে না। আশা করছি এটি শুধুই একটি মাত্র ঘটনা।’
টি-টুয়েন্টিকে জনসাধারণের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফরম্যাট হিসেবে দেখা হলেও অস্ট্রেলিয়ার মাঠে এখনও টেস্ট দেখার জন্য অনেকের আগ্রহ রয়েছে। গত সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তানের মধ্যকার বক্সিং ডে টেস্টের প্রথম দুদিনে গ্যালারিতে এক লাখ মানুষ খেলা দেখেছে। এটি বিশ্বের অন্যকোথাও সবসময় হয় না, যা কামিন্সকে কিছুটা চিন্তিত করেছে।
‘কিছু বিষয়ে, মাঝে মাঝে কিছুটা চিন্তিত থাকি। কিন্তু একই সময়ে, টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে কখনোই বেশি সমর্থক ছিল না এবং মনে করি না যে বিশ্বে ক্রিকেট দেখছে এমন সমর্থক বেশি ছিল। একজন টেস্ট ক্রিকেটপ্রেমী হিসেবে আশা করি, সবাই টেস্ট ক্রিকেট দেখবে।’
টেস্টের জন্য সার্বজনীন ম্যাচ ফি এই ফরম্যাটে খেলতে ক্রিকেটারদের আরও আকৃষ্ট করার কৌশল হিসেবে কাজ করবে? কামিন্স এবিষয়ে দৃঢ়ভাবে কোনো মনোভাব না রাখলেও সিলভার বুলেট (কঠিন সমস্যার জন্য একটি সহজ নিশ্চয়তাযুক্ত সমাধান) আশা করছেন। এটি সম্ভাব্যভাবে টেস্ট ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা পুনরুদ্ধারে সহায়তা করতে পারে বলে মত তার।
‘আমি বুঝতে পারি, অনেকগুলো বৈচিত্র্যময় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তাই সত্যিই বিশেষভাবে অনুভব করি, অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট অগ্রাধিকার এবং প্রতিবার আমরা যখনই খেলি, এটি সত্যিই ভালোভাবে সমর্থন পায়। জানি না সিলভার বুলেট কী, তবে এটি কাজে দিলে দারুণ হবে।’
ক্যাঙ্গারুদের অধিনায়ক সাউথ আফ্রিকার দ্বিতীয় সারির স্কোয়াড গঠনের বিষয়টিকে একটি মাত্র ঘটনা হিসেবে দেখলেও ভিন্ন মনোভাব উসমান খাজার। অস্ট্রেলিয়ার ওপেনিং ব্যাটার বিশ্ব ক্রিকেটের সংকট উত্তরণে জেগে উঠে মোকাবেলা করতে বলছেন।
‘আমার ব্যক্তিগত মত, দুর্ভাগ্যজনকভাবে সমস্যা হল যে অন্যকিছু দেশ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার জন্য তেমন পারিশ্রমিকও পাচ্ছে না। এটাই মূল ঘটনা। বিষয়টা জানি, কারণ অন্যান্য দেশের খেলোয়াড়দের সাথে কথা বলেছি। প্রশ্ন করেছি, তাদের গড় বেতন, তাদের দেশের হয়ে খেলার জন্য চুক্তি অনুযায়ী চুক্তি ফি কত।’
‘সব বোর্ডের আর্থিক অবস্থা কেমন, তা খুব ভালোভাবে দেখতে হবে। তারা কেমন সংগ্রাম করছে, টাকা সঠিক জায়গায় যাচ্ছে কিনা, খেলোয়াড়রা পাচ্ছে কিনা দেখতে হবে। তাদের জন্য আমাদের একটা উপায় বের করতে হবে। অন্য দেশগুলোকে আন্তর্জাতিক, বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেট খেলার জন্য উৎসাহিত করা লাগবে। এজন্য বিশ্বের সব ক্রিকেট বোর্ডের কাছ থেকে খেলোয়াড়দের সর্বোত্তম উপায়ে কীভাবে অর্থ প্রদান করা যায়, তা নির্ধারণে চেষ্টার জন্য স্বচ্ছতা প্রয়োজন।’
‘যদি ওয়েস্ট ইন্ডিজের দিকে তাকান, দেখবেন বিশাল ঘাটতিতে আছে। তারা সংগ্রাম করছে, পর্যাপ্ত অর্থ আনতে পারছে না। তাহলে বিশ্ব ক্রিকেটকে সাহায্য করার জন্য একত্রিত হতে হবে। কিন্তু যতক্ষণ না আপনি এ ব্যাপারে স্পষ্টভাবে অবহিত থাকা এবং শতভাগ ভুল জায়গায় অর্থ বরাদ্দ হচ্ছে না- এসব কঠিন কাজ।’
এদিকে, অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ক্রিকেটার স্টিভ ওয়াহ আইসিসি এবং বিভিন্ন ক্রিকেট বোর্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি যথেষ্ট যত্নশীল না হওয়ার অভিযোগ এনেছেন।
‘অবশ্যই তারা বিষয়টি পাত্তা দেয় না। সমস্যাটা কী, এটা বেশ স্পষ্ট। এই গ্রীষ্ম মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাদের পূর্ণশক্তির দল অস্ট্রেলিয়ায় পাঠাচ্ছে না। তারা এখন কয়েক বছর ধরে পূর্ণশক্তির টেস্ট দল বেছে নেয়নি। আইসিসি বা কেউ শীগগিরই পদক্ষেপ না নিলে টেস্ট ক্রিকেট সত্যিকার অর্থেই আর টেস্ট ক্রিকেটে পরিণত হবে না। কারণ সেরা খেলোয়াড়দের বিপক্ষে নিজেকে যাচাই করছেন না।’
‘বুঝতে পারছি কেন খেলোয়াড়রা আসে না। তারা ঠিকমতো বেতন পাচ্ছে না। বুঝতে পারছি না কেনো আইসিসি বা শীর্ষ দেশ যারা প্রচুর অর্থ উপার্জন করছে, তাদের শুধু টেস্ট ম্যাচের জন্য নির্ধারিত ফি নেই। এমন করলে সবাই টেস্ট খেলতে উৎসাহিত হয়। অন্যথায় তারা শুধু টি-১০ বা টি-টুয়েন্টি খেলে।’