এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘ ১৭ বছর পর আগামীকাল বৃহস্পতিবার দেশে ফিরছেন। রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা ঝুঁকির প্রেক্ষাপটে তারেক রহমানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। সর্বোচ্চ পুলিশি নিরাপত্তার পাশাপাশি তার চলাচলে যুক্ত করা হয়েছে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ‘স্পেশাল স্কট’।
তারেক রহমানের বাসভবন ও অফিসেও থাকবে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা। নিরাপত্তা ছাড়পত্র ছাড়া কাউকে তার ধারেকাছে ভিড়তে দেবে না পুলিশ। থাকছে বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত প্রতিটি থানা এলাকায় পুলিশি কঠোর নিরাপত্তা নজরদারি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সদরদপ্তর কেন্দ্রীয়ভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকি করবে, মাঠ পর্যায়ে মোতায়েন থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েক হাজার সদস্য। এ ছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্স (সিএসএফ) ও পুলিশ সমন্বিতভাবে তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করবে।
আজ বুধবার বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত সোয়া ১২টায় লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন তারেক রহমান। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-২০২ ফ্লাইটে তিনি দেশে ফিরবেন। ফ্লাইটটি সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রাবিরতি শেষে আগামীকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১১টা ৫৫ মিনিটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা রয়েছে।
তারেক রহমানের দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে রাজধানীর পূর্বাচল ৩০০ ফিট এলাকায় নির্মিত সংবর্ধনা মঞ্চ প্রায় প্রস্তুত করা হয়েছে। এই উপলক্ষে ওই এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
বিএনপির পক্ষ থেকেও ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিএনপি ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ইতোমধ্যে ঢাকায় এসে জড়ো হচ্ছেন। প্রিয় নেতাকে এক নজর দেখতেই তাদের এই আগমন বলে জানিয়েছেন তারা।
তারেক রহমানের নিরাপত্তার জন্য বুলেটপ্রুফ গাড়ি কিনেছে বিএনপি, যা এরইমধ্যে দেশে পৌঁছেছে। এছাড়াও টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার প্রাডো এলসি ২৫০ মডেল গাড়ি বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে এবং বাংলাদেশে নিবন্ধিত হয়েছে।
আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, তারেক রহমানের দেশে ফেরা ঘিরে মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে পুলিশের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার নজরদারি শুরু হয়েছে। আগামীকাল ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তিনশ ফিট হয়ে এভারকেয়ার হাসপাতাল ও গুলশান অ্যাভিনিউর বাসভবন পর্যন্ত পুলিশ ও বিভিন্ন সংস্থার প্রায় কয়েক হাজার সদস্য মোতায়েন করা হবে।
ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. শাহরিয়ার আলী বলেন, ডিএমপির পক্ষ থেকে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হবে, সে হিসাবে তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। ইতোমধ্যে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত প্রতিটি থানা এলাকায় পুলিশি নিরাপত্তা থাকবে। সঙ্গে থাকবে পুলিশের ‘স্পেশাল স্কট’। এ ছাড়া মোড়ে মোড়ে পুলিশি চেকপোস্ট রাখা হবে। বর্তমানে গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় অন্তত নয়টি চেকপোস্ট রয়েছে। এসব চেকপোস্টে ২৪ ঘণ্টায় দেড় শতাধিক পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। তারেক রহমান দেশে ফেরায় গুলশান এলাকায় অন্তত তিনটি চেকপোস্ট বাড়তে পারে। তার বাসা ও আশপাশের এলাকায় প্রতিদিন দেড় শতাধিক পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য মোতায়েন থাকবেন। বাসভবন থেকে কোথাও যাতায়াতে পুলিশি নিরাপত্তা চাইলে সেক্ষেত্রেও বাড়বে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তখন পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার তিন শতাধিক সদস্য নিরাপত্তায় যুক্ত থাকবেন।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর গুলশান অ্যাভিনিউর ১৯৬ নম্বর বাসায় উঠবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাসভবন ‘ফিরোজা’র দেয়াল ঘেঁষেই এ বাসা। গুলশান অ্যাভিনিউর বাসাটি তারেক রহমানের জন্য প্রায় প্রস্তুত। কোনো কারণে সেটি পুরোপুরি প্রস্তুত না হলে তিনি তার মা খালেদা জিয়ার ভাড়া বাসা ফিরোজায় উঠবেন। দেশে ফেরার পর গুলশানের ৮৬ নম্বর রোডে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় থেকেই তিনি দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
ডিএমপির গুলশান বিভাগ জানায়, গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাসভবন ফিরোজা ও তারেক রহমানের বাসভবন পাশাপাশি হওয়ায় দুটি বাসা ও তার অফিসকে একই নিরাপত্তা পরিকল্পনার আওতায় আনা হচ্ছে। বিশেষ করে বাসা ও অফিসের মধ্যকার দূরত্ব ও চলাচলের পথকে নিরাপত্তা পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এ বিষয়ে গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) রওনক আলম বলেন, আমরা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। পুলিশ সদরদপ্তর থেকেও একটা নিরাপত্তা নির্দেশিকা দেওয়া হবে। ডিএমপি সদরদপ্তরের সেন্ট্রালি একটা নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি পদ মর্যাদার এক কর্মকর্তা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে তারেক রহমানের দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তার ঝুঁকিগুলো বিবেচনা করা হয়। সে অনুযায়ী পরবর্তীতে কঠোর নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
জানা গেছে, বিশেষ ব্যক্তি হিসেবে তারেক রহমানের নিরাপত্তায় ডিএমপি প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিচ্ছে। তবে সার্বিক নিরাপত্তার মূল দায়িত্বে থাকছে বিএনপি চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্স (সিএসএফ)। তারা পুলিশ ও বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করছেন।
ডিএমপি সদর দপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, সম্পূর্ণ নিরাপত্তা ব্যবস্থাটি কেন্দ্রীয়ভাবে ডিএমপির সদরদপ্তর থেকে তদারকি করা হবে এবং সেখান থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে। সে নির্দেশনা অনুযায়ী ডিএমপির গুলশান ও উত্তরা বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাবেন।
সম্প্রতি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এ কে এম শামছুল ইসলামকে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছে বিএনপি। তারেক রহমানের নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি জানিয়েছেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে তার নিরাপত্তার জন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এদিকে তারেক রহমানের আগমন ঘিরে আজ বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রী ব্যতীত অন্যদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।








