শীর্ষের নিউজিল্যান্ডের সমান সর্বোচ্চ ৭ পয়েন্ট তুলেও স্বস্তিতে থাকতে পারছে না অস্ট্রেলিয়া। গ্রুপ-১ এ স্বাগতিকদের সমান পয়েন্ট নিয়ে সেমি প্রায় নিশ্চিত করে রেখেছে নিউজিল্যান্ড। এক ম্যাচ হাতে রাখা ইংল্যান্ডও শেষ চারের বড় দাবিদার। শনিবার বাটলারের দল শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে দিলে ভাঙবে অজিদের সেমির স্বপ্ন। তার আগে আফগানিস্তানকে হারিয়ে নিজেদের কাজটা সেরে রাখলেন ওয়েড-স্টয়নিসরা।
অ্যাডিলেড ওভালে অস্ট্রেলিয়ার ছোঁড়া ১৬৯ রানের লক্ষ্যে মোহাম্মদ নবীরা থেমেছেন ৪ রান পেছনে। জয়ের সম্ভাবনা জাগানো আফগানরা নির্ধারিত ওভার শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে তোলে ১৬৪ রান। ম্যাচসেরা অজি অলরাউন্ডার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল উড়ন্ত ফিফটির জন্য।
শুক্রবার দুর্দান্ত শুরু এনেও শেষটা নিজেদের করতে পারেননি গুরবাজ-নবীরা। মাঝের দিকে ধুঁকতে থাকা দলটির শেষ ৬ বলে সমীকরণ দাঁড়ায় ২২ রানের। রশিদ খান খুব কাছেও চলে গিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত ৪ রান পেছনেই থামতে হয়েছে লেগ স্পিনিং তারকাকে। হারের খাতায় তার ২৩ বলে অপরাজিত ৪৮ রানের ঝড়। আসরে এটি আফগানিস্তানের তৃতীয় হার, বাকি দুটি ম্যাচ হয়েছিল পরিত্যক্ত। জয়শূন্য থেকে ফিরতে হচ্ছে তাদের।
অস্ট্রেলিয়ার জয়ে টেবিলও জমে উঠেছে। শনিবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে ইংল্যান্ড জিততে পারলে সেমিতে চলে যাবে। সমান পয়েন্ট হলেও নেট রানরেটে পিছিয়ে থাকা অজিদের বাজবে বিদায়ঘণ্টা। দাসুন শানাকার দল যদি ইংলিশদের হারিয়ে দেয়, সেক্ষেত্রে আগেই বিদায় নিশ্চিত হওয়া লঙ্কানদের সঙ্গে সেমির স্বপ্নভঙ্গ হবে ইংলিশদেরও। ৫ ম্যাচে ৩ জয়ে ৭ পয়েন্ট তোলা নিউজিল্যান্ড রানরেটে এগিয়ে থাকায় সেমি নিশ্চিত করে বসে আছে অনেকটাই।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে পয়েন্টের সঙ্গে রানরেট বাড়িয়ে সেরা চারের জন্য দাবি পোক্ত করার সুযোগ ছিল অস্ট্রেলিয়ার। লক্ষ্যে সুবিধা করতে দেননি গুরবাজ-গুলবাদিনরা। উদ্বোধনী জুটি দ্রুত ফিরলেও গুরবাজ ঝড় তোলেন। দুটি করে চার-ছক্কায় ১৭ বলে তোলেন ৩০ রান। মাঝের দিকে ২৩ বলে আরেকটি ঝড় আনেন নাইব। ৩৯ রানের ইনিংসে হাঁকান ৩টি চার ও দুটি ছক্কা।
গুরবাজ-নাইব ফেরার পর খেই হারায় আফগান দল। ৯৮ রান পর্যন্ত দুই উইকেট হারানো দল ১১০ পর্যন্ত যেতে হারায় আরও ৫ উইকেট। সেখানেই থেমে যায় জয়ের স্বপ্ন। এরপর শেষ চেষ্টা করেন রশিদ খান। ২৩ বলে ৩টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৪৮ রান এনেও মাঠ ছাড়েন আক্ষেপ নিয়ে।
অজিদের হয়ে কাজের কাজটা করেছেন অ্যাডাম জাম্পা। মিতব্যয়ী স্পিনার ৪ ওভারে খরচ করেছেন ২২ রান, হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়ে ফিরিয়েছেন ইব্রাহিম ও নাজিবুল্লাহকে। ৩৩ রানের বিনিময়ে ২টি উইকেট তুলেছেন হ্যাজেলউড। স্টার্কের জায়গায় খেলা কেন রিচার্ডসন ৪৮ রান দিয়ে ফিরিয়েছেন আফগান ওপেনার গুরবাজকে।
এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে দারুণ শুরু আনেন ডেভিড ওয়ার্নার ও ক্যামেরুন গ্রিন। মাঝে মিচেল মার্শ খেললেও বাকিরা ছিলেন ব্যর্থ। শেষ পর্যন্ত থাকা ম্যাক্সওয়েল ফিফটি হাঁকিয়ে দলকে এনে দেন পৌনে দুইশর সংগ্রহ।
ফিঞ্চের জায়গায় নেমে অবশ্য সুবিধা করতে পারেননি গ্রিন, ফজলহক ফারুকির বলে ফিরেছেন ৩ রান করে। তৃতীয় উইকেটে মার্শকে নিয়ে দ্রুত রান তোলেন ওয়ার্নার।
দলীয় ৪৮ রানে নাভিন উল-হকের শিকার হয়েছেন বাঁহাতি তারকা ওপেনার, ১৮ বলে ৫ চারে তুলেছেন ২৫ রান। ব্যর্থ হয়েছেন একাদশে ফেরা স্টিভেন স্মিথ। মার্কাস স্টয়নিসও থাকতে পারেননি বেশি সময়। অধিনায়ক ওয়েড থেমেছেন ৮ বলে ৬ রান এনে।
মাঝের দিকে ৩০ বলে ৪৫ রানের ইনিংস খেলে রানের চাকা সচল রাখেন মিচেল মার্শ। দেড়শ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করা ডানহাতি হাঁকিয়েছেন তিন চার ও দুই ছক্কা। পঞ্চম উইকেটে স্টয়নিসকে নিয়ে ফিফটি ছাড়ানো জুটি আনেন ম্যাক্সওয়েল। দলীয় ১৩৯ রানে স্টয়নিস ২১ বলে ২৫ রান করে ফিরলে আবারও চাপে পড়ে অস্ট্রেলিয়া।
একপাশ আগলে চাপ কাটিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালান ম্যাক্সওয়েল। অপরপাশে তাকে যোগ্য সঙ্গ দিতে ব্যর্থ হন ওয়েড, প্যাট কামিন্স ও টেলএন্ডাররা। শেষ পর্যন্ত রশিদ-ফারুকিদের বিপক্ষে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৬৮ রানে থামে অস্ট্রেলিয়া। ৩২ বলে ৬ চার ও দুই ছক্কায় ৫৪ রানে অপরাজিত থাকেন ম্যাক্সওয়েল।
ভালো শুরুর পর মাঝের দিকে খেই হারায় আফগান বোলাররা। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট তুলে নিয়েছে তারা। ৪ ওভারে ২১ রান খরচ করে ৩ উইকেট নেয়া নাভিন-উল-হক অজিদের দমিয়ে রেখেছিলেন। ২৯ রান দিয়ে গ্রিন ও ওয়েডকে ফিরিয়েছেন ফারুকি।