একেই বলে পয়সা উসুলের ম্যাচ! এই পাকিস্তানের পক্ষে খেলা, তো পরের বলেই ভারতের দিকে পাল্লা ঝুলে যাওয়া। মেলবোর্নের গ্যালারিতে লক্ষ ছুঁইছুঁই দর্শককে স্নায়ুচাপের সর্বোচ্চ রোমাঞ্চে ভাসিয়ে দিয়েছে ভারত-পাকিস্তান মহারণ। উত্তেজনার পারদ সপ্তমে চড়ানো খেলায় শেষ হাসি রোহিত শর্মার দলের। বিরাট কোহলির অতিমানবীয় ইনিংসে আমিরাত বিশ্বকাপে হারের বদলা অস্ট্রেলিয়ায় ৪ উইকেটের জয়ে তুলেছে টিম ইন্ডিয়া।
মেলবোর্নে ১৬০ রানের লক্ষ্যে নামা ভারতের টপ অর্ডারের ব্যর্থতায় বাজি ধরার লোক কমছিল। নাটকীয়তায় ঠাসা ম্যাচে শেষ বলে হয়েছে সমাধান। ৫৩ বলে ৮২ রানের অপরাজিত ইনিংসে আরেকবার নিজেকে চিনিয়েছেন কোহলি। ৬ চার ও ৪ ইনিংসে সাজানো।
রোববার গ্রুপ ২-এর ম্যাচটিতে জবাব নিতে নেমে নাসিম শাহ-হারিস রউফে ধুঁকছিল ভারত। উদ্বোধনী ব্যাটার রোহিত-রাহুল যখন ফেরেন, বোর্ডে মোটে ১০ রান। চারে নামা সূর্যকুমার যাদবও রাখতে পারেননি নামের মান। মারকাটারি ক্রিকেটের টেবিলের দ্বিতীয় সেরা তারকা ফিরেছেন ১০ বলে ১৫ রান করে।
যাদব ফেরার পর উপরের দিকে ব্যাট করতে আসেন অক্ষর প্যাটেল। ২ রান করে রান আউটের ফেরেন। বোর্ডে তখন ৬ ওভার শেষে মাত্র ৩১ রান। বাকি দৃশ্যপটের নায়ক দুজন।
কোহলি আর হার্দিক পান্ডিয়া। দাঁত কামড়ে থাকা ব্যাটিংয়ে বিরাট যখন পাকিস্তানি বোলারদের উড়িয়ে মারছিলেন, অন্যপাশ আগলে ছিলেন পান্ডিয়া। পান্ডিয়া হিট করলে ধরে রাখছিলেন বিরাট। দুর্দান্ত স্ট্রাইক রোটেট করে দুজনে পঞ্চম উইকেটে আনেন ১১৩ রানের জুটি। ৩৭ বলে ৪০ রান করে পান্ডিয়া ফিরলে চাপ বাড়ে ফের।
নাটকের শেষ দৃশ্যে আসে আরও বড় চমক। নো বল, ছক্কা, ওয়াইড, ফ্রি হিটে কোহলি বোল্ড হলেও দৌড়ে ৩ রান, সবমিলিয়ে শেষ পর্যন্ত জয়ের উল্লাসে মাতে ভারত।
শেষ ৫ ওভারে ওভারপ্রতি ১২ রানের সমীকরণ মিলিয়ে নায়কের হাসি অন্যতম সেরা ব্যাটার কোহলির। শেষ ওভার করতে আসা নেওয়াজ ১৬ রান ডিফেন্ড করতে পারেননি।
পাকিস্তানের হয়ে ৪ ওভারে ৩৪ রান খরচ করে উইকেটশূন্য থাকেন আফ্রিদি। আঠারতম ওভারে এসে তিনি গোনেন ১৮ রান। নাসিম শাহ ৪ ওভারে ২৩ রানের বিনিময়ে পেয়েছেন এক উইকেট। দুটি উইকেট শিকার করেছেন হারিস রউফ ও খরুচে মোহাম্মদ নেওয়াজ।
এর আগে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ভারতের বোলাররা ছিলেন পুরো ছন্দে। পাকিস্তানের লম্বা ব্যাটিং লাইনআপ ধসিয়ে দিয়েছেন রোহিতের দলের চার পেসার। আর্শদ্বীপ ও হার্দিক ফিরিয়েছেন তিনজন করে ব্যাটারকে।
বিশাল মাঠে ব্যাটিংয়ে নেমে গোল্ডেন ডাকে ফিরেছেন অধিনায়ক বাবর। বাবরের পর বিশ্বের এক নম্বর টি-টুয়েন্টি ব্যাটার রিজওয়ানকেও ফিরিয়েছেন আর্শদ্বীপ। দলীয় ১৫ রানে দুই ব্যাটিং স্তম্ভকে হারিয়ে চাপে পড়ে যায় পাকিস্তান।
চাপ আরও বাড়িয়ে দেন ভূবনশ্বর কুমার-মোহাম্মদ সামি। নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে প্রতিপক্ষের কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছিলেন দুজনে। ধীরগতির ব্যাটিংয়ে চতুর্থ উইকেটে ৮১ রানের জুটি গড়েন শান মাসুদ ও ইফতেখার আহমেদ।
৩৪ বলে ২ চার ও ৪ ছক্কায় পাকিস্তানকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন ইফতেখার। পরে দ্রুত উইকেট হারিয়ে আবারও চাপে পড়ে পাকিস্তান। মিডলে ব্যর্থ হন শাদাব খান, হায়দার আলী ও মোহাম্মদ নেওয়াজ। আবারও ব্যর্থ হয়েছেন আসিফ আলী।
নবম উইকেটে পাকিস্তানকে দ্রুতগতিতে ৩০ রানের জুটি এনে দেন শাহিন আফ্রিদি ও মাসুদ। ৮ বলে একটি করে চার-ছক্কায় ১৬ রানের ক্যামিও খেলেছেন পেসার আফ্রিদি। তিনে নেমে শেষ বল পর্যন্ত উইকেটে থেকে পাকিস্তানকে ১৬০ রানের সংগ্রহ এনে দিয়েছেন মাসুদ। ৪২ বলে ৫ চারে সাজিয়েছেন ৫২ রানের ইনিংস।
রোমাঞ্চকর ম্যাচে দুর্দান্ত বোলিং প্রদর্শনী দেখিয়েছেন ভারতের চার পেসার। ৪ ওভারে ২২ রান খরচায় আফ্রিদিকে ফিরিয়েছেন ভূবনেশ্বর। ফিফটি করা ইফতেখারকে এলবির ফাঁদে ফিরিয়েছেন শামি। ৪ ওভারে যথাক্রমে ৩০ ও ৩২ রান দিয়ে তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন হার্দিক ও আর্শদ্বীপ।