গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেটে অবিশ্বাস্য এক চিত্রনাট্য লেখা হল আবারও। শক্তিশালী সাউথ আফ্রিকাকে ১৩ রানে হারিয়ে সেমিফাইনালের সমীকরণ নাটকীয় পর্যায়ে নিয়ে গেল নেদারল্যান্ডস। অবশ্য ডাচদের বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেছে। কিন্তু প্রোটিয়াদের হারে শেষ চারে যাওয়ার দারুণ সম্ভাবনার সামনে দাঁড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। সেক্ষেত্রে টাইগারদের অবশ্যই হারাতে হবে পাকিস্তানকে।
৫ ম্যাচ খেলা সাউথ আফ্রিকার পয়েন্ট ৫, রানরেট +০.৮৭৪। এক ম্যাচ কম খেলা বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ঝুলিতে রয়েছে ৪ পয়েন্ট করে। এই দু-প্রতিপক্ষের ম্যাচে জয়ী দলটি ৬ পয়েন্ট নিয়ে নিশ্চিত করবে সেমিফাইনালের টিকিট।
অন্যদিকে, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ বাকি থাকলেও ৬ পয়েন্ট ও +০.৭৩০ রানরেট নিয়ে সেমিতে চলে গেছে ভারত। পাকিস্তানের রানরেট +১.১১৭, যা প্রোটিয়াদের চেয়ে বেশি। ১০টায় মাঠে গড়াবে বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচ। বৃষ্টির কারণে এই লড়াই পরিত্যক্ত হলে রানরেটের বিচারে পাকিস্তান শেষ চারে পৌঁছে যাবে।
রোববার অ্যাডিলেড ওভালে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামা নেদারল্যান্ডস ৪ উইকেটে ১৫৮ রান তোলে। জবাবে সাউথ আফ্রিকা ৮ উইকেটে ১৪৫ রানে থেমেছে।
ডাচদের ওপেনিং জুটিতে ৫৮ রান যোগ করেন স্টেফান মাইবার্গ ও ম্যাক্স ও’ডাউড। ৩০ বলে ৭ চারে ৩৭ রান করা মাইবার্গের বিদায়ে ভাঙে জুটি।
দ্বিতীয় উইকেটে টম কুপারকে নিয়ে ৩৯ রানের জুটি গড়েন ও’ডাউড। কেশভ মহারাজের বলে কাগিসো রাবাদার হাতে ধরা পড়ার আগে ও’ডাউড ২৯ বলে ৩১ রান করেন।
ব্যাট হাতে টম কুপার ছিলেন বিধ্বংসী। ১৯ বলে ২ চার ও ২ ছক্কায় ৩৫ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেছেন। মহারাজের বলে ডি ককের গ্লাভসবন্দি হয়ে থামে তার দারুণ ইনিংস।
শেষ ৫ ওভারে বোর্ডে ৪৬ রান জমা করে কমলা জার্সিধারীরা। বাস ডে লেডে এক রানের বেশি করতে না পারলেও ম্যাচসেরা কলিন অ্যাকেরম্যান ও অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডস শেষে মারমুখী হন। দলকে চ্যালেঞ্জিং স্কোর এনে দিতে সক্ষম হন। অ্যাকেরম্যান ২৬ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৪১ ও এডওয়ার্ডস ৭ বলে ২ চারে ১২ রানে অপরাজিত থাকেন।
প্রোটিয়াদের পক্ষে ৪ ওভারে ২৭ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন কেশভ মহারাজ। একটি করে উইকেট নেন এনরিচ নর্টজে এবং এইডেন মার্করাম।
১৫৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নামা সাউথ আফ্রিকা তৃতীয় ওভারে কুইন্টন ডি ককের উইকেট হারিয়ে বসে। ফ্রেড ক্ল্যাসেনের বলে ১৩ রান করে ডি কক উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ড্রেসিংরুমে যান।
পল ফন মিকেরেনের বলে বোল্ড হন ২০ রান করা টেম্বা বাভুমা। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে সাউথ আফ্রিকার স্কোর দাঁড়ায় ২ উইকেটে ৩৯ রান। দশম ওভারে ১৯ বলে ২ চারে ২৫ রান করা রাইলি রুশোর ক্যাচ নিয়ে খেলা জমিয়ে তোলেন ও’ডাউড।
একাদশ ওভারে ব্যক্তিগত ৫ রানের মাথায় জীবন পান ডেভিড মিলার। পয়েন্টে তার ক্যাচ নিতে পারেননি মাইবার্গ। পরে অবশ্য মার্করামের ক্যাচ ঠিকই নেন মাইবার্গ। ১৭ রান করে মার্করাম ক্রিজ ছাড়েন। সাউথ আফ্রিকা ৯০ রান তুলতে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে।
জীবন পেলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি মিলার। ১৭ বলে ১৭ রান করে গ্লোভারের বলে ফন ডের মেরউই অনেক খানি দৌড়ে গিয়ে অসাধারণ ক্যাচে নেন। দুই বল পর ওয়েইন পার্নেল উইকেটরক্ষক এডওয়ার্ডসের গ্লাভসে ধরা পড়লে জয়ের সামনে চলে যায় নেদারল্যান্ডস।
শেষ ৪ ওভারে সাউথ আফ্রিকার দরকার ছিল ৪৪ রান, হাতে তখন ৪ উইকেট। লোগান ফন বিকের করা ১৭তম ওভারে উইকেট না পড়লেও ৩ রানের বেশি প্রোটিয়ারা নিতে পারেনি।
১৮তম ওভারে বল হাতে নেন বাস ডে লেডে। তৃতীয় বলে ১৮ বলে এক ছক্কায় ২১ রান করা হেনরিখ ক্ল্যাসেন উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ফ্রেড ক্ল্যাসেনের তালুবন্দি হন।
শেষ দুই ওভারে সাউথ আফ্রিকার দরকার ছিল ৩৬ রান। শেষ ওভারে তা ২৬ রানে গিয়ে ঠেকে। ওয়াইড, নো বল, ফ্রি হিটের উত্তেজনা থাকলেও সেটি কাজে লাগাতে পারেনি সাউথ আফ্রিকা। মহারাজ হ্যামস্ট্রিংয়ের ইনজুরিতে পড়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে রান নেন। পঞ্চম বলে ১৩ রান করে তিনি বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ দেন। শেষ বলে নর্টজে চার মারলেও জয়ের উল্লাসে মারে ডাচরা।