চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

ভারত-ইংল্যান্ড: র‍্যাঙ্কিংয়ে সেরা দুইয়ের মহারণ

দ্বিতীয় সেমি: বোলিংয়ে সমানে সমান, ব্যাটিংয়ে এগিয়ে রোহিত-কোহলিরা

চার-ছক্কার ফুলঝুরির পাশাপাশি বোলারদের উইকেট নিয়ে উল্লাসে মেতে ওঠাই ক্রিকেটের নান্দনিকতা। সেই নান্দনিকদৃশ্য যদি র‍্যাঙ্কিংয়ের দুই সেরা দলের লড়াইয়ে দেখা যায়, অবধারিতভাবেই মেটাবে পিপাসুদের মন। বিশ্বকাপের মঞ্চে শেষ চারের মুখোমুখি হলে তো কথাই নেই। ভারত ও ইংল্যান্ডের লড়াই যেন তাই মহারণেরই আরেক রূপ।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায় অ্যাডিলেড ওভালে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের সেরা চারের দ্বিতীয় রোমাঞ্চে মুখোমুখি হবে ভারত ও ইংল্যান্ড। ২০ ওভারের ক্রিকেটে র‍্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বরে থাকা টিম ইন্ডিয়ার এবং দুইয়ে থাকা ইংলিশদের মধ্যে হবে রোমাঞ্চকর লড়াই।

স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় যখন খেলা শুরু হবে, আকাশে ১৫ শতাংশ মেঘের আনাগোনা থাকার পূর্বাভাস। খেলার মাঝে বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই বলা যায়।

সুপার টুয়েলভে গ্রুপ ২-এ থাকা ভারত ৮ পয়েন্ট নিয়ে হয়েছে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। গ্রুপ ১-এ ৭ পয়েন্ট ও +০.৪৭৩ নেট রানরেট নিয়ে রানার্সআপ হয় ইংল্যান্ড।

ইতিহাস বলছে, ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাটে এ দুই দলের গায়ে সবসময় লেগে থাকে ফেভারিটের তকমা। দল দুটি যখনই মুখোমুখি হয়, চলে সেয়ানে সেয়ানে টক্কর। পরিসংখ্যান দিচ্ছে তার জ্বলন্ত প্রমাণ।

টি-টুয়েন্টিতে মুখোমুখি লড়াইয়ে ভারত ও ইংল্যান্ড ২২টি ম্যাচে নেমেছে। ভারত ১২ জয় তুলেছে, ইংল্যান্ড জিতেছে ১০ ম্যাচে। বিশ্বকাপের মঞ্চে ৩ বারের দেখায়ও এগিয়ে ভারত। তাদের দুই জয়ের বিপরীতে পরাজয় একবার।

সবশেষ পাঁচবারের দেখায় ৪টিতে হেরেছে জস বাটলারের দল। তবে গত জুলাইয়ে সর্বশেষ দেখায় থ্রি লায়ন্সরা জিতেছিল।

পরিসংখ্যান বলছে, দুদলের খেলায় আগে ব্যাট করে ভারত জিতেছে ৮ বার, ইংল্যান্ড ৩ বার। রানতাড়ায় অবশ্য জয়ের সংখ্যাটা ইংল্যান্ডের বেশি, ৭ বার। বিপরীতে ভারতের ৪ বার।

ভারত যে ১২ ম্যাচে ইংলিশদের বিপক্ষে জিতেছে, এরমধ্যে ৬টি ছিল ঘরের মাঠে, চারটি ইংল্যান্ডের মাটিতে ও বাকি ২টি নিরপেক্ষ ভেন্যুতে। অপরদিকে, ইংল্যান্ড ১০টি জয়ের ৫টি ঘরের মাঠে ও ৫টি ভারতের মাটিতে পেয়েছে।

২০০৭ সালে প্রথম আসরে শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে ৪ রানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। পরের তিন আসরে সেমিফাইনালেই উঠতে পারেনি টিম ইন্ডিয়া। বাংলাদেশে ২০১৪ সালে হওয়া পঞ্চম আসরে হয়েছিল ফাইনালিস্ট। শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে পাওয়া হয়নি শিরোপা। ২০১৬ সালে স্বাগতিক হয়ে সেমিফাইনাল অবধি গেলেও সেবারের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে পেরে ওঠেনি। গত আসরে গ্রুপপর্বেই পড়েছিল বাদ।

প্রথম দুই আসরে গ্রুপপর্বে বাদ পড়া ইংল্যান্ড ২০১০ সালে তৃতীয় আসরে হয় চ্যাম্পিয়ন। পরের দুই বিশ্বকাপে আবারও গ্রুপপর্বেই ক্রিকেটের জনকদের বিদায় নিতে হয়। ২০১৬ বিশ্বকাপে শেষ ওভারে ক্যারিবীয়দের কাছে হেরে হয় রানার্সআপ। গত আসরে খেলেছিল সেমিফাইনাল।

ফর্মহীনতার শৃঙ্খল থেকে বেরিয়ে এপর্যন্ত ৫ ম্যাচে ১২৩ গড়ে টুর্নামেন্টে সর্বাধিক রান সংগ্রাহক বিরাট কোহলি। চোখ ধাঁধানো ব্যাটিং করে ৩৬০ স্কাই তকমা পেয়ে যাওয়া সূর্যকুমার যাদবের খেলায় নিজের মুগ্ধতার কথা জানিয়ে ফেলেছেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। ৫ ম্যাচে ৭৫ গড়ে ১৯৩.৯৬ স্ট্রাইক রেটে সূর্যকুমারের রান ২২৫। এই দুই ব্যাটারের পারফরম্যান্সে স্বস্তিতে সাবেক চ্যাম্পিয়নরা।

ব্যাটিং অর্ডারে অস্বস্তির কারণও রয়েছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে ফিফটি পেলেও বিশ্বকাপে স্বরূপে নেই লোকেশ রাহুল। ৫ ম্যাচে তার ব্যাটে এসেছে ১২৩ রান। ফ্লপ ফর্মে থাকা টিম ইন্ডিয়ার অধিনায়ক রোহিত শর্মা একটি ফিরটি করলেও ৫ ম্যাচে তার রান মাত্র ৮৯। গত মঙ্গলবার অনুশীলনে বল থ্রো ডাউনের বিপরীতে ব্যাট করার সময় ডান হাতের বাহুতে ব্যথা পান রোহিত। যা ভারতীয় দলে তৈরি করেছে বাড়তি দুশ্চিন্তা।

অ্যাডিলেডে পেসারদের পারফরম্যান্স রাখতে পারে বড় ভূমিকা। সেমির লড়াইয়ে বোলিং ডিপার্টমেন্টে পেসার আর্শদীপ সিংয়ের উপর ম্যান ইন ব্লুদের অনেকটাই নির্ভরশীল হওয়া লাগতে পারে। ৫ ম্যাচে ১৪.৩০ গড়ে তিনি নিয়েছেন ১০ উইকেট। ইকোনমি রেটটাও আটের নিচে রাখতে পেরেছেন। হার্দিক পান্ডিয়া পেয়েছেন ৮ উইকেট। মোহাম্মাদ শামির দখলে ৬ উইকেট। পেসারদের ছায়ায় খানিকটা ঢাকা পড়ে যাওয়া স্পিনার রবীচন্দ্রন অশ্বিনের ঝুলিতে ৬ উইকেট।

শেষ চারের লড়াইয়ের আগ পর্যন্ত কেবল দুই ইংলিশ ব্যাটার একশো রানের অধিক করতে পেরেছেন। ৪ ম্যাচে অ্যালেক্স হেলসের সংগ্রহ ১২৫। অধিনায়ক জস বাটলারের ব্যাট থেকে ১১৯ রান এসেছে। বেন স্টোকস, মঈন আলীদের থেকে দলের পাওনা বাকি রয়েছে।

বোলিংয়ে ৪ ম্যাচে ৬.৪০ ইকোনমি রেটে মাত্র ৯.৪০ গড়ে ১০ উইকেট নিয়ে সেরা ছন্দে আছেন স্যাম কারেন। ১২ গড়ে মার্ক উডের শিকার ৯ উইকেট। বেন স্টোকসের ঝুলিতে ৫ উইকেট।

ইংল্যান্ডের পেসারদের সামলানো ভারতের ব্যাটারদের জন্য হবে কঠিন চ্যালেঞ্জ। কারণ আদর্শ পেস আক্রমণের বিপক্ষে রোহিত শর্মার দলের বেহালদশা সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে বেরিয়ে পড়েছিল। লুনগি এনগিডি এবং ওয়েইন পারনেলের তোপে দাঁড়াতেই পারেনি টিম ইন্ডিয়া। ব্যতিক্রম ছিলেন সূর্যকুমার যাদব।

দ্বিতীয় সেমির ভেন্যু অ্যাডিলেড ওভালে এ দুদল কখনোই ২০ ওভারের ক্রিকেটে মুখোমুখি হয়নি। পরিসংখ্যান বলছে, দেড়শ বছরেরও বেশি সময়ের ইতিহাস ধরে রাখা ভেন্যুটিতে ১১ আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টি হয়েছে। আগে ব্যাটিং করা দল জিতেছে ৭ বার, হেরেছে ৪ বার। এবারের বিশ্বকাপে আগে ব্যাট করা দল জিতেছে ৪ বার, রান তাড়া করে জয়ের নজির দুইবার।

২০১১ সালে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড ম্যাচ দিয়ে অ্যাডিলেডে প্রথমবার টি-টুয়েন্টি মাঠে গড়ায়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০১৯ সালে আগে ব্যাট করা অজিরা করেছিল ২৩৩ রান। ভেন্যুটিতে সর্বাধিক দলীয় স্কোরের সেই রেকর্ডটি এখনো টিকে আছে। দলীয় সর্বনিম্ন রানের রেকর্ড জিম্বাবুয়ের। চলতি বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে তারা ১১৭ রানে।