প্রথম রাউন্ডের লড়াই দিয়ে রোববার টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের পর্দা উঠেছে। সাতটি বিশ্বকাপ পেরিয়ে এসেছে ২০ ওভারের ক্রিকেটের রোমাঞ্চকর যাত্রা। সাউথ আফ্রিকায় বসেছিল প্রথমটি। পঞ্চমটি বসেছিল বাংলাদেশে। ঘটনাবহুল আর উত্তেজনায় ঠাঁসা প্রতিটি আসরের স্মৃতি তুলে আনছে চ্যানেল আই অনলাইন। এপর্বে থাকছে ২০১৪ মহাযজ্ঞের স্মৃতিগাঁথা।
তিন ঘণ্টার অ্যাকশন সিক্সটিন সিক্সটিন
ক্রিকেট ক্রেজি নেশনস, হাউ এক্সাইটিং
স্টেডিয়াম ওয়েটিং, টেনশান টেনশান
ঢিং ঢিটাং ঢিং ঢিং ঢিং ঢিং ঢিং ঢিং
চার ছক্কা হৈ হৈ বল গড়াইয়া গেল কই
চার ছক্কা হৈ হৈ বল গড়াইয়া গেল কই
২০১৪ টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের এই সূচনা সঙ্গীতটি টুর্নামেন্ট শুরুর আগে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশেই গানটি প্রভাব বিস্তার করে। যে গানের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের প্রধান প্রধান নগরগুলোতে ফ্ল্যাশমব সংস্কৃতির নতুন ধারা ছড়িয়ে পড়ে।
আইসিসি বিশ্বকাপের সূচনা সঙ্গীত বাছাইয়ের জন্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। আয়োজনে বাংলাদেশের তিন স্বাগতিক শহর– ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তাদের নিজস্ব নৃত্যসহ ভিডিও জমা দিতে বলা হয়। ফলে গানটি আরও গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে।
গানের প্রতিযোগিতার ফলে বাংলাদেশে ফ্ল্যাশমবের আবির্ভাব ও দেশের অনেক শহরেই ছড়িয়ে পড়তে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, চীন, রাশিয়াতেও গানটি ছড়িয়ে পড়ে। বৈশ্বিক আবেদন ও নৃত্যের গ্রহণযোগ্য বিচারে চার-ছক্কা হৈ হৈ গানটিকে সাউথ কোরিয়ান র্যাপার সাইয়ের গ্যাংনাম স্টাইলের সঙ্গেও তুলনা করা শুরু হয়!
সূচনা সঙ্গীতে বিশ্বকাপ ঝড় শুরুর জোরাল বার্তা দিলেও বাংলাদেশের সামনে ছিল সফল টুর্নামেন্ট আয়োজনের হরেক চ্যালেঞ্জ। ব্যাট বলের লড়াইয়ে কাজটা ঠিকঠাক করা দায়িত্ব ক্রিকেটারদের তো ছিলই। মনে রাখার মতোই এক আসর উপহার দিতে তৎপর ছিল বিসিবি। আয়োজনে বিন্দুমাত্র ত্রুটি রাখতে চায়নি দেশের ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থাটি। ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপে যৌথ আয়োজক হওয়ার অভিজ্ঞতা কাজে লাগায়। দর্শকদের বিপুল সাড়ায় আসর ঘিরে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। একই সময়ে মেয়েদের টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের চতুর্থ আসরের স্বাগতিক হয়ে একক আয়োজনেও সক্ষমতা প্রমাণে সফল হয় বাংলাদেশ।
প্রথমবার বিশ্বকাপে ১৬ দল অংশ নেয়। ২০১৩ সালে হওয়া বাছাইপর্বের বাধা টপকে আইসিসির ছয় সহযোগী দেশ বিশ্বকাপের টিকিট কাটে। আয়ারল্যান্ড, আফগানিস্তান, নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথমবার খেলার সুযোগ পায় সংযুক্ত আরব আমিরাত, নেপাল ও হংকং।
অংশ নেয়া দলগুলোর মধ্যে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ আট দল সরাসরি দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলেছিল। দুদল প্রথম রাউন্ডের বাধা টপকে পরের পর্বে পা রাখে। সেরা আটে না থাকায় বাংলাদেশকে প্রথম রাউন্ডে খেলতে হয়। এ গ্রুপে লাল-সবুজদের সঙ্গী ছিল আফগানিস্তান, নেপাল ও হংকং। বি গ্রুপে পড়েছিল নেদারল্যান্ডস, আয়ারল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
উদ্বোধনী ম্যাচে স্পিনারদের দাপটে আফগানিস্তানকে গুঁড়িয়ে দেয় টাইগাররা। টসে জিতে আগে ফিল্ডিং নেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। ১৭.১ ওভারে ৭২ রানে অলআউট হয় আফগানরা। ৮ ওভার হাতে রেখে ৯ উইকেটের বিশাল জয় পায় স্বাগতিক দল। দ্বিতীয় ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে ৮ উইকেটের অনায়াস জয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে এক পা দিয়ে রাখে লাল-সবুজের দল।
গ্রুপের শেষ ম্যাচে হংকংয়ের কাছে হেরে অঘটনের শিকার হয় মুশফিকের দল। অবিশ্বাস্য ব্যাটিং বিপর্যয়ে কেবল ১০৮ রানে অলআউট হয়। একপর্যায়ে স্কোর ছিল ৩ উইকেটে ৮৫ রান। সেখান থেকে ২৩ রান যোগ করতে ৭ উইকেট হারায়। বাংলাদেশের চার ব্যাটার রানের খাতা খুলতে পারেননি। বাঁহাতি স্পিনার নাদিম আহমেদ ২১ রান খরচায় নেন ৪ উইকেট।
অল্প রানে গুটিয়ে বাংলাদেশের দ্বিতীয় রাউন্ডের আগেই বিদায়ের শঙ্কা জেগেছিল। হংকং ১৩.১ ওভারের মধ্যে রান তাড়া করে ফেললে রানরেটে এগিয়ে থাকত নেপাল। সেক্ষেত্রে হিমালয়ের দেশটি পরের রাউন্ডে চলে যেত। তেমন অবশ্য হয়নি। বোলারদের কল্যাণে টাইগাররা সে যাত্রায় রক্ষা পায়। ৮৩ রানের মধ্যে প্রতিপক্ষের ৬ উইকেট ফেলে দিয়েছিল। সাকিব আল হাসান ৪ ওভারে মাত্র ৯ রান দিয়ে পান ৩ উইকেট।
ছোট পুঁজি নিয়েও জয়ের আশায় জল ঢেলে দেয় ফরহাদ রেজার করা ১৭তম ওভার। ওভারে তিনি ১৫ রান দিয়ে বসেন। হংকং জয়ের রাস্তা পেয়ে যায়। পরের দুই ওভারে আব্দুর রাজ্জাক ও সাব্বির রহমান উইকেট পেলেও যথেষ্ট ছিল না। সাতে নামা মুনির দার ২৭ বলে ৩৬ রানের কার্যকরী ইনিংস খেলেন। দুই বল বাকি থাকতে ২ উইকেটের নাটকীয় জয় পায় হংকং। অপেক্ষাকৃত কমশক্তির দলের বিপক্ষে হারের ধাক্কা নিয়ে মাঠ ছাড়েন মুশফিক-তামিম-রিয়াদরা। রানরেট ভালো থাকায় অবশ্য দ্বিতীয় রাউন্ডে পৌঁছে যান।
বি-গ্রুপে নেদারল্যান্ডস, আয়ারল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ের পয়েন্ট হয়েছিল সমান ৪। রানরেটের হিসাবে দ্বিতীয় রাউন্ডে একটি দল পা রাখে।
২১ মার্চ সিলেটে কমলা বিপ্লব দেখেছিল ক্রিকেট বিশ্ব। আগে ব্যাট করা আয়ারল্যান্ড ৪ উইকেটে ১৮৯ রানের বড় স্কোর পায়। নেদারল্যান্ডসের জন্য পরের রাউন্ডে যাওয়ার কাজটা অনেক কঠিন হয়ে যায় তাতে। শুধু জিতলেই হবে না, রানরেটে বেশ ভালো অবস্থায় থাকা জিম্বাবুয়েকে টপকানোর সমীকরণ ছিলই।
ডাচদের জিততে ১৯০ রান ১৪.২ ওভারের মধ্যেই করতে হতো। শুরু থেকেই অতি মারমুখী ছিলেন দুই ওপেনার পিটার বোরেন ও স্টেফান মাইবার্গ। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারের তারা বোর্ডে তুলে ফেলেন ৯১ রান। সেসময়ে এটি ছিল আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টিতে পাওয়ার প্লেতে সবচেয়ে বেশি দলীয় রান তোলার বিশ্বরেকর্ড।
অধিনায়ক বোরেন ১৫ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৩১ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে আউট হন, ভাঙে ৯১ রানের ওপেনিং জুটি। খানিকপর আরও বিধ্বংসী ব্যাটিং করতে থাকা মাইবার্গ ২৩ বলে ৪ চার ও ৭ ছক্কায় ৬৩ রান করে ক্রিজ ছাড়েন। ঠিক ১০০ রানের মাথায় তৃতীয় উইকেট হারায় নেদারল্যান্ডস।
চতুর্থ উইকেটে ঝড় তোলেন উইকেটরক্ষক ব্যাটার ওয়েসলি বারেসি ও টম কুপার। ২৪ বলে তারা ৬১ রানের জুটি গড়েন। ১৫ বলে এক চার ও ৬ ছক্কায় ৪৫ রান করে আইরিশ বোলারদের জন্য ত্রাস হয়ে ওঠেন কুপার।
কেভিন ও’ব্রায়েনের হাতে যখন কুপার ধরা পড়েন, তখন দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার জন্য ডাচদের দরকার ছিল ৩০ বলে ২৯ রান। সমীকরণ তখন তাদের অনুকূলেই চলে এসেছিল।
টিম মুরতাঘের বলে বেন কুপার ছক্কা মারার সঙ্গে সঙ্গে অবিশ্বাস্য জয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে পৌঁছে যায় নেদারল্যান্ডস। ১৩.৫ ওভারে তারা লক্ষ্য পূরণ করে। বারেসি ২২ বলে ৩ চার ও ৩ ছক্কায় ৪০ রানে অপরাজিত থাকেন।
১০ দল দুগ্রুপে ভাগ হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে অংশ নেয়। এক নম্বর গ্রুপে ছিল- শ্রীলঙ্কা, সাউথ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডস। দুই নম্বর গ্রুপে- বাংলাদেশ, ভারত, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান।
দ্বিতীয় রাউন্ডের প্রথম ম্যাচে মিরপুরে মুখোমুখি হয় ভারত ও পাকিস্তান। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুদেশের খেলা থাকলেই উত্তেজনার পারদ চড়তে থাকে। এক্ষেত্রেও ছিল না ব্যতিক্রম। তবে মাঠের ক্রিকেটে পাকিস্তান লড়াইটা একেবারেই করতে পারেনি। আগে ব্যাট করে ৭ উইকেটে তাদের সংগ্রহ ছিল ১৩০ রান। দ্রুত রান তোলার প্রবণতা না দেখিয়ে ৯ বল হাতে রেখে সহজ জয় পায় টিম ইন্ডিয়া।
চট্টগ্রামে দর্শকরা দেখেছিল শ্রীলঙ্কা ও সাউথ আফ্রিকার জমজমাট লড়াই। কুশল পেরেরার ৪০ বলে ৬ চার ও ৩ ছক্কায় ভালো শুরু পায় আগে ব্যাট করা লঙ্কানরা। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ ৪৩ রান করলেও বাকিরা সুবিধা করতে পারেননি। ৭ উইকেটে ১৬৫ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর দাঁড়িয়েছিল।
শেষ ৪ ওভারে সাউথ আফ্রিকার দরকার ছিল ৪৬ রান, হাতে ৬ উইকেট। অজন্তা মেন্ডিসের ১৭তম ওভারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে ছক্কা মারেন অ্যালবি মরকেল। চতুর্থ বলে দিনেশ চান্দিমালের হাতে ধরা পড়েন। মেন্ডিস ১৭ রান দিলে সমীকরণ দাঁড়ায় ১৮ বলে ২৯ রান। ১৮তম ওভারে লাসিথ মালিঙ্গা দেন ১০ রান। তাতে প্রোটিয়াদের জয়ে দরকার পড়ে ১২ বলে ১৯ রান।
নুয়ান কুলাসেকারা ১৯তম ওভারে বল হাতে ছিলেন কার্যকরী। ফারহান বেহারডিনের উইকেট শিকারের পাশাপাশি ৪ রানের বেশি খরচ করেননি। সাউথ আফ্রিকার জন্য কাজটা তাই কঠিন হয়ে যায়।
শেষ ওভারে এবি ডি ভিলিয়ার্সের দলের জয়ে প্রয়োজন ছিল ১৫ রান। অভিজ্ঞ মালিঙ্গার হাতে বল তুলে নেন লঙ্কান অধিনায়ক চান্দিমাল। প্রথম দুই বলে রান আউট হন ডেল স্টেইন ও ডেভিড মিলার। ম্যাচ থেকে প্রোটিয়ারা তখনই ছিটকে যায়। ইমরান তাহির শেষ চার বলে ৮ রান তুলে ব্যবধান কমাতে পেরেছিলেন। ৫ রানের রোমাঞ্চকর জয় পায় শ্রীলঙ্কা।
অন্যদিকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের পরাজয়ের জন্য কেবল দুর্ভাগ্যই দায়ী ছিল। ইংলিশদের ৬ উইকেটে ১৭২ রানের জবাবে কিউইরা ৫.২ ওভারে ১ উইকেটে তোলে ৫২ রান। এ সময় বৃষ্টি নামলে খেলা আর মাঠে গড়ায়নি। তাই বৃষ্টি আইনে ৯ রানে হারে নিউজিল্যান্ড।
সাউথ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ডের শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ের সাক্ষী হয়েছিল চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম। আগে ব্যাট করা প্রোটিয়ারা ৬ উইকেটে ১৭০ রান করে। জেপি ডুমিনি খেলেন ৪৩ বলে ১০ চার ও ৩ ছক্কায় ৮৬ রানের ইনিংস।
শেষ ওভারে ব্ল্যাক ক্যাপসদের জয়ে দরকার ছিল মাত্র ৭ রান, হাতে ৫ উইকেট। বল হাতে ডেল স্টেইন ভেল্কি দেখাতে শুরু করেন। প্রথম বলে লুক রঞ্চিকে বিদায় করেন। পরের দুবলে রান নিতে পারেননি নাথান ম্যাককালাম। চতুর্থ বলে যদিও চার মারতে সক্ষম হন। সমীকরণ দাঁড়ায় ২ বলে ৩ রান। পঞ্চম বলে ফ্যাফ ডু প্লেসিস নেন ক্যাচ, ম্যাককালাম সাজঘরে ফেরেন। শেষ বলে নিউজিল্যান্ডের জয়ের জন্য ৩ রান করতে হতো।
একপ্রান্ত আগলে আক্রমণাত্মক ব্যাট করে যাওয়া রস টেলর ছিলেন নিউজিল্যান্ডের শেষ ভরসা। স্টেইনের ছোড়া শেষ বলে কোনোমতে ব্যাট ছুঁয়ে দৌড় দেন টেলর। বল কুড়িয়ে স্টেইন নন স্ট্রাইক প্রান্তের উইকেট ভেঙে দিলে টেলর রান আউট হন। ২ রানের অবিশ্বাস্য জয় পায় সাউথ আফ্রিকা। বৃথা যায় টেলরের ৩৭ বলে ৪ চার ও ৩ ছক্কায় খেলা ৬৩ রানের নান্দনিক ইনিংস।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাত্র ৩৯ রানেই অলআউট হয় নেদারল্যান্ডস। টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে সবচেয়ে কম রানে অলআউট হওয়ার সেই রেকর্ড এখনো অক্ষত। ১৫ ওভার হাতে রেখে লঙ্কানরা ৯ উইকেটের বড় জয় পায়।
ডাচরা পরের ম্যাচে অবশ্য অঘটনের জন্ম দিতে বসেছিল। সাউথ আফ্রিকা তাদের বিপক্ষে আগে ব্যাট করে ৯ উইকেটে ১৪৫ রানে থেমে যায়। নেদারল্যান্ডসের আহসান মালিক ৪ ওভারে ১৯ রানে নেন ৫ উইকেট।
জবাবে প্রথম ৬ ওভারে ১ উইকেটে ৬৩ রান তুলে প্রোটিয়াদের হারের শঙ্কায় ফেলে কমলা বাহিনী। ওপেনার স্টেফান মাইবার্গ রুদ্ররূপ ধারণ করে তুলে নেন ফিফটি। ২৮ বলে ৮ চার ও ২ ছক্কায় ৫১ রান করে তিনি। জেপি ডুমিনির বলে বোল্ড হন। পরে নিয়মিত উইকেট তুলে সাউথ আফ্রিকা ম্যাচে ফেরে।
শেষ ১২ বলে ডাচদের দরকার ছিল ৯ রান। ততক্ষণে দলটি ৯ উইকেট হারিয়ে বসেছে। শেষ ব্যাটার হিসেবে টিম ফন ডের গুগেন আউট হলে ৬ রানের স্বস্তির জয় পায় প্রোটিয়ারা।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৯০ রানের জয়ের লক্ষ্যে নেমে প্রথম ওভারে শূন্য রানে ২ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। এমন পরিস্থিতি থেকে আগ্রাসী হয়ে ওঠেন অ্যালেক্স হেলস। ইয়ন মরগানকে নিয়ে তৃতীয় উইকেটে ১৫৬ রান যোগ করেন। ৫৪ বলে ১১ চার ও ৬ ছক্কায় ১১৬ রানের অপরাজিত ইনিংস তিনি। ৪ বল বাকি থাকতে ৬ উইকেটের দারুণ জয় পায় থ্রি লায়ন্সরা।
মিরপুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আগে ব্যাট করা অস্ট্রেলিয়া করে ৮ উইকেটে ১৭৮ রান। শেষ ৪ ওভারে ক্যারিবীয়দের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৫৩ রান। অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি ও ডোয়াইন ব্রাভো ২২ গজে তোলেন ঝড়।
পরে সমীকরণ দাঁড়ায় ৬ বলে ১২ রান। শেষ ওভারে বল হাতে নেন জেমস ফকনার। প্রথম দুই বলে কোনো রান হয়নি। তৃতীয় বলটি ফুলটস দেন ফকনার। সুযোগ কাজে লাগিয়ে লং অফের উপর দিয়ে ছক্কা হাঁকান স্যামি। পরের বলে স্ট্রেইট শটে ছক্কা মেরে স্যামি ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৬ উইকেটে জয়ের উল্লাসে মাতান।
লাফিয়ে ডান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে শূন্যে ঘুষি মেরে ব্যাট মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে স্যামির দৌড়ে উদযাপনের দৃশ্যটি ছিল নজরকাড়া। বাউন্ডারি লাইনের কাছে বিজ্ঞাপন বোর্ডের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা ক্রিস গেইল অতি আনন্দে বেপরোয়া হয়ে দৌড়াতে গিয়ে পড়ে যান! তাকে টপকে সতীর্থরা স্যামি ও ব্রাভোর দিকে ছুটে যান। এরপরও স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে গ্যাংনাম স্টাইলে ঠিকই নেচেছিলেন গেইল!
রোমাঞ্চ ছড়ানো হাই-স্কোরিং ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ৩ রানে পরাজিত করে সাউথ আফ্রিকা। আগে ব্যাট করে প্রোটিয়ারা করে ৫ উইকেটে ১৯৬ রান। শেষ ৫ ওভারে ইংল্যান্ডের দরকার ছিল ৬৪ রান। কঠিন সমীকরণ মেলানোর পথে খুব কাছে গিয়েও ৭ উইকেটে ১৯৩ রানে তাদের থামতে হয়।
ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ ঘিরে সবাই জমজমাট লড়াইয়ের প্রত্যাশায় ছিল। টিম ইন্ডিয়ার করা ৭ উইকেটে ১৫৯ রানের জবাবে অজিরা ২২ বল বাকি থাকতে ৮৬ রানে অলআউট হয়ে যায়।
নেদারল্যান্ডসের কাছে ৪৫ রানে হারের লজ্জার মুখে পড়েছিল ইংল্যান্ড। ডাচদের ৫ উইকেটে ১৩৩ রানের জবাবে ইংলিশদের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপ ৮৮ রানে শেষ হয়ে যায়।
স্কোরবোর্ডে কেবল ১১৯ রান তোলা সত্ত্বেও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫৯ রানের বড় ব্যবধানে জয় পায় শ্রীলঙ্কা। রঙ্গনা হেরাথের ভয়ঙ্কর বোলিংয়ের সাক্ষী হয় সেবারের বিশ্বকাপ। ৩.৩ ওভারে ২ মেডেনে মাত্র ৩ রানে তিনি নেন ৫ উইকেট! কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ৪২ রানের ইনিংস খেলেন। বাকিরা দুঅঙ্কের ঘরেই যেতে পারেননি। ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, রস টেলর ও জিমি নিশামরা শূন্য রানে সাজঘরে ফেরেন। মাত্র ৬০ রানেই গুটিয়ে যায় ব্ল্যাক ক্যাপস। এই ম্যাচ জিতে সেমির টিকিট কাটে লঙ্কানরা।
আয়োজক হিসেবে সফলতা অর্জন করলেও মাঠে অসফল ছিল টাইগাররা। দ্বিতীয় রাউন্ডের সবকটি ম্যাচে হারে। ব্যাটিং ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে একেবারেই বের হতে পারেনি স্বাগতিকরা। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পেসার তাসকিন আহমেদের অভিষেক হয়।
প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয় শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আগে ব্যাটিংয়ে নামা লঙ্কানরা ৬ উইকেটে ১৬০ রান জমা করে। রানতাড়ায় নেমে ক্যারিবীয়রা একপর্যায়ে ছিল ১৩.৫ ওভারে ৪ উইকেটে ৮০ রান। জয়ের জন্য তাদের দরকার ছিল ৩৭ বলে ৮১ রান। কঠিন সমীকরণ হলেও তখন ক্রিজে মারলন স্যামুয়েলস ও ড্যারেন স্যামি। ব্যাট করতে নামার অপেক্ষায় ছিলেন আন্দ্রে রাসেল ও দীনেশ রামদিন। ক্যারিবীয়দের আশা টিকে ছিল।
এমন সময় নেমেছিল ভয়াবহ ঝড় ও শিলাবৃষ্টি। মাঠ গেল পানিতে ভেসে। শিলার আস্তর জমে সবুজ মাঠ ঢাকা পড়ে যায়। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে খেলা আর চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। বৃষ্টি আইনে ২৭ রানে জিতে ফাইনালে চলে যায় শ্রীলঙ্কা।
ওয়ানডের মতো টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপেও ফাইনালে পা রাখার সৌভাগ্য সাউথ আফ্রিকার হয়নি। দ্বিতীয় সেমিফাইনালে টিম ইন্ডিয়ার বিপক্ষে ৪ উইকেটে ১৭২ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর পায় প্রোটিয়ারা। বিরাট কোহলির ৪৪ বলে অপরাজিত ৭২ রানের ইনিংসে ভর করে ৬ উইকেটের জয়ে উঠে যায় ভারত।
হোম অব ক্রিকেটে ৬ এপ্রিল হয়েছিল শ্রীলঙ্কা-ফাইনাল। ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপে এ দুই দলই ছিল ফাইনালের প্রতিপক্ষ। তিন বছর পর আবারও তারা ভিন্ন ফরম্যাটের বিশ্বকাপে প্রতিপক্ষ হিসেবে নামে।
দর্শকরা রান উৎসবের প্রত্যাশা করলেও ফাইনালে তেমন ঘটেনি। বৃষ্টির কারণে দেরিতে শুরু হলেও পূর্ণ ২০ ওভারের ম্যাচই মাঠে গড়ায়। আগে ব্যাট করে ৪ উইকেটের বেশি না হারিয়ে ১৩০ রানে যেতে পারে ভারত। বিরাট কোহলি ৫৮ বলে ৭৭ রানের ইনিংস খেলে রান আউট হন।
শ্রীলঙ্কাও ইনিংসের শুরু ধীরগতিতে করে। ৭৮ রানে হারিয়ে বসে ৪ উইকেট। জয়ের জন্য তখন দরকার ৪৫ বলে ৫৩ রান। বল ও রানের ব্যবধান কম থাকলেও ভারতের বোলাররা লো স্কোরিং ম্যাচ জমানোর আয়োজন সম্পন্ন করে রেখেছিল।
কুশল পেরেরা, তিলকারত্নে দিলশান, মাহেলা জয়াবর্ধনে ও লাহিরু থিরিমান্নে আউট হওয়ার পর জুটি গড়েন লঙ্কান কিংবদন্তি কুমার সাঙ্গাকারা ও থিসারা পেরেরা। তিনে নামা সাঙ্গাকারা অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় টেনে নিতে থাকেন খেলা। দলের প্রয়োজনে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেন থিসারা।
৫৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন সাঙ্গাকারা-থিসারা। রবীচন্দ্রন অশ্বিনের বলে সুইপ শটে ছক্কা হাঁকিয়ে শ্রীলঙ্কার শিরোপা জয় নিশ্চিত করেন ১৪ বলে ৩ ছক্কায় ২৭ রান করা থিসারা। ১৯৯৬ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ের ১৮ বছর পর টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপও জিতে নেয় লঙ্কানরা।
৩৫ বলে ৬ চার ও এক ছক্কায় ৫২ রানের মূল্যবান ইনিংস খেলে ফাইনালে সেরা হন সাঙ্গাকারা। এটিই ছিল তার শেষ আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টি ম্যাচ। ৩১৯ রান করে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হন বিরাট কোহলি।