সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণায় যখন বন্যার ভয়াবাহ তাণ্ডব চলছে, খেয়ে না খেয়ে অসংখ্য আশ্রয়হীন মানুষের লড়াই করছে বাঁচার জন্য; তখনই একদল হীন প্রকৃতির মানুষ সরকার বিরোধীতার মানসিকতায় মিথ্যা গল্প বানিয়ে গুজব ছড়াতে ব্যস্ত। সেই মিথ্যাকে সাধারণ মানুষের কাছে কথিত সত্য হিসেবে তুলে ধরতে তারা অশ্রয় নিয়েছে নানান কৌশলের। সেই কৌশলে কখনো তারা ব্যবহার করেছে অন্য দেশের পুরানো ছবি, আবার কখনো দেশের মধ্যে অনেকদিন আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার ভিডিও-ছবি সম্পাদনা করে সেটাকে বর্তমানের বলে চালিয়ে দেওয়া অচেষ্টা করেছে।
সম্প্রতি আমরা দেখেছি, বন্যা দুর্গত অসহায় মানুষের মধ্যে ভয় ছড়িয়ে দিতে একটি মহল ওইসব এলাকায় ‘গণহারে ডাকাতি’ চলছে বলে গুজব রটিয়ে দেয়। আর সেই খবর যখন নিয়ন্ত্রণহীন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে বাহন করে দ্রুত ছড়িয়ে যায় দেশ থেকে দেশান্তরে, তখন সাধারণ মানুষের বিশ্বাসেও তা কড়া নাড়তে শুরু করে। মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণা থেকে সেই গুজব ডাল-পালা মেলে বৃক্ষে পরিণত হয়। কেননা তার পেছনে থাকে অত্যন্ত শক্তিশালী এক চক্র। একের পর এক ঘটনার সঙ্গে জড়িত যারা।
এই শক্তিশালী চক্রটিকে বারবার সক্রিয় হয়ে উঠতে দেখা গেছে। গত কয়েক বছরে এদের দেখা গেছে, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময়, তাদের ফাঁসির রায় কার্যকরের সময়, শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের উত্তাল আন্দোলনের সময়, সংখ্যালঘুদের ওপর ধারাবাহিক নির্যাতনে এবং সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্মকাণ্ডের সফল পরিসমাপ্তির সময়। সর্বশেষ তাদের অপতৎপরতা শুরু হয়েছে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের তারিখ ঘোষণার পর। বন্যা দুর্গত এলাকায় কথিত ‘গণহারে ডাকাতি’ও এরই অংশ।
এসব কারণেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে বিষয়টি নিয়ে জনগণকে সতর্ক থাকতে বলেছে। কয়েকদিন আগে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘একটি মহল পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বন্ধের ষড়যন্ত্র করছে। আপনাদের সবাইকে কিন্তু সতর্ক থাকতে হবে। তাদের কিন্তু একটা উদ্দেশ্য আছে; কিছু কিছু তথ্যও আমরা পেয়েছি। এমন একটা ঘটনা ঘটানো হবে, যেন ২৫ তারিখে আমরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করতেই না পারি।’
বন্যা পরিস্থিতির মধ্যে যারা ডাকাতির গুজব রটিয়েছে, তাদের তালিকা তৈরি করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মুজিবুর রহমান। তিনি বলেছেন, গুজব রটনাকারীদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আমরা মনে করি, এসব গুজব ছড়ানোর কাজে যে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতেই হবে। তাবেই এসব অপতৎপরতা বন্ধ হবে। না হলে বারবার স্বরূপ দেখাবে তারা।