করোনাভাইরাস এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দীর্ঘায়িত বৈশ্বিক সংকটের কারণে দেশকে যাতে কখনই দুর্ভিক্ষের কবলে পড়তে না হয় সেজন্য জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে সচিবদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এটি আমার কথা নয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বলা হচ্ছে যে বিশ্বে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে।

নিজ কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিক সচিব সভায় সূচনা বক্তব্যে তিনি বলেন, দুর্ভিক্ষ আমাদের দেশকে কখনই যেন ক্ষতিগ্রস্ত করতে না পারে সেজন্য এখন থেকেই আমাদের আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বেশ কয়েকটি প্রস্তাব বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছেন যার মধ্যে রয়েছে সরকারি ব্যয়ে সাশ্রয়ী হওয়া, অগ্রাধিকার ভিত্তিক উন্নয়ন প্রকল্প নির্ধারণ, রপ্তানি বহুমুখীকরণ, বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা এবং প্রতি ইঞ্চি পতিত জমি চাষের অধীনে নিয়ে আসার জন্য জনগণকে সচেতন করা এবং বিদ্যুৎ ও গ্যাস ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়া।
তিনি বলেন, বিশ্ব অর্থনীতি যখন করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে বিপর্যস্ত, তখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা এবং পাল্টা নিষেধাজ্ঞা বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা তৈরি করেছে। তিনি আরও বলেন, একটি বা দুটি দেশ এই সংকটের সুবিধা পাচ্ছে এবং উন্নত দেশসহ বাকি দেশগুলো কষ্টে রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উন্নত দেশগুলিও গুরুতর সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে যার জন্য তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং রিজার্ভ অর্থ হ্রাস পাচ্ছে। বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি বহুগুণ বেড়েছে। আমাদের দেশ এর আওতার বাইরে নয় এবং এটি আমাদের দেশেও আঘাত করেছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের যারা রেমিটেন্স পাঠায় তাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুযোগ ও প্রণোদনা আমরা দিয়েছি। পাশাপাশি আমাদের ভাল রিজার্ভ রয়েছে। আমাদের তিন মাসের খাদ্য কেনার মতো রিজার্ভ থাকলেই যথেষ্ট। সেখানে আমাদের ৫/৬ মাসের রিজার্ভ আছে। তারপরও আমাদের এখন যা অবস্থা তাতে আমাদের একটু সাশ্রয়ী হতে হবে,আরেকটু সচেতন হতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা এখনই যে বিপদে পড়েছি তা কিন্তু না। কিন্তু আমার কথাটা হচ্ছে আমার আগাম ব্যবস্থাটা নিতে হবে যেন ভবিষ্যতে দেশ যেনো কোন বিপদে না পড়ে বা দেশের মানুষ না পড়ে। আমাদের সেই সতর্কতাটা একান্তভাবে দরকার এবং সেই সতর্ক বার্তাটাই কিন্তু আমরা দিচ্ছি।
পাশপাশি আমাদের রপ্তানি বহুমুখীকরণ করতে হবে। এটার ওপরও আমাদের গুরুত্ব দেওয়া একান্তভাবে দরকার বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেকটা মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের তথ্য তাদের ওয়েবসাইটে থাকার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে যাতে যে কেউ যেকোন তথ্য ওখান থেকে জানতে পারে, নিতে পারে। সেখানে আমাদের সাফল্যগুলো তুলে ধরতে হবে। প্রত্যেকটা মন্ত্রণালয় তাদের ওয়েবসাইটে যদি এই সাফল্যগুলো প্রতিনিয়ত আপডেট করে সেগুলো তুলে ধরেন তাহলে মানুষ কিন্তু জানতে পারবে যে কি কি কাজ আপনারা করলেন।
ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষকে ঘর নির্মাণ করে দেওয়াসহ মানুষের কল্যাণে আওয়ামী লীগ সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও সভায় তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আমাদের অনেক জিনিস এখনও কিনতে হয়। যে সমস্ত জিনিস আমাদের বাইরে থেকে কিনতে হয় তারমধ্যে যে সব জিনিস আমরা দেশে উৎপাদন করতে পারি সেই দিকে আমাদের এখন দৃষ্টি দিতে হবে যেন দেশীয় উৎপাদনের মাধ্যমে আমরা আমাদের চাহিদা পূরণ করতে পারি। অন্তত বাইরের ওপর নির্ভরশীলতা যতটা কমাতে পারি।
বিদ্যুৎ মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হলেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য জ্বালানি তেলের দাম বা গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় এক্ষেত্রেও বাংলাদেশে কিছুটা সমস্যা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতু নির্মান,কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মানের কথা তুলে ধরার পাশপাশি দেশকে এগিয়ে নিতে আওয়ামী লীগ সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেকোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে,আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে এবং সেইভাবে মানুষকে সাথে নিজে কাজ করতে হবে।’
অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশনা দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘এই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমাদের সমস্ত পরিকল্পনাগুলো বা প্রকল্পগুলো বাছতে হবে। বেছে নিয়ে এবং কোনগুলো দ্রুত শেষ করা যায় আমরা সেগুলো আগে শেষ করে ফেলে নতুনটা যাতে ধরতে পারি সেই ব্যবস্থা নিতে হবে।’