সোমবার (১৫ মে) সকাল ৮টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কিংবদন্তী অভিনেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনীতিবীদ আকবর হোসেন পাঠান ফারুক। তার মৃত্যুতে আরও একজন অভিভাবক হারালো বাংলা চলচ্চিত্র। তাই ভারাক্রান্ত মনে শোকবার্তা দিচ্ছেন এই অঙ্গনের তারকারা।
নায়ক ফারুকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে সুপারস্টার শাকিব খান তার ফ্যান পেজে লিখেছেন, চলে গেলেন আমাদের প্রিয় মিঁয়া ভাই (আকবর পাঠান ফারুক)। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। যতদিন তিনি সুস্থ সবল ছিলেন, ততদিন আমাকে স্নেহে আগলে রেখেছিলেন। আমার যে কোনো ভালো কাজ এবং ছবির পোস্টার কিংবা ট্রেলার রিলিজ দেখে তিনি নিজ থেকে অ্যাপ্রিসিয়েট করে গর্বিত হতেন। আমার কাছে শ্রদ্ধাভাজন এই মানুষটি ছিলেন চলচ্চিত্র অঙ্গনে প্রাজ্ঞজনদের একজন। কাজে কিংবা কাজের বাইরে এই মহান মানুষটির সাথে আমার অসংখ্য স্মৃতি। তার প্রয়াণে প্রিয় অভিনেতা হারানোর পাশাপাশি একজন অভিভাবক হারানোর শোক অনুভব করছি। ওপারে অনেক শান্তিতে থাকবেন।
ফারুকের সঙ্গে তোলা একটি ছবি শেয়ার করে চিত্রনায়িকা পূর্ণিমা তার সোশ্যাল হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘আজ সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময়) সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় না ফেরার দেশে চলে গেলেন বাংলা চলচ্চিত্রের ‘মিয়াভাই’ খ্যাত নায়ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ঢাকা ১৭ (গুলশান-বনানী) আসনের সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান (ফারুক) ভাই। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।’
নব্বই দশকের জনপ্রিয় নায়ক নাঈম বলেছেন, ‘আজ সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করলেন কিংবদন্তি অভিনেতা, ‘মিয়াভাই’ খ্যাত নায়ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ঢাকা ১৭ (গুলশান-বনানী) আসনের সংসদ সদস্য আমাদের ফারুক ভাই (আকবর হোসেন পাঠান)। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। উনার প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা এবং পরিবারের প্রতি আমাদের গভীর সমবেদনা। ফারুক ভাইয়ের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। আল্লাহ ওনার সকল গুনাহ মাফ করে জান্নাত দান করুন, আমিন।”
ব্যবসায়ী ও চিত্রনায়ক অনন্ত জলিল বলেছেন, ‘প্রায় পাঁচ দশক ঢালিউডে অবদান রাখা ঢাকাই সিনেমার কিংবদন্তী চিত্রনায়ক ও ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান ফারুক (আমাদের ফারুক ভাই)। এই র্কীতিমান মহান মানুষটির প্রয়াণে গভীর শোক ও বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং তার শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।’
চিত্রনায়ক ওমর সানী নায়ক ফারুকের একটি ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘আল্লাহ আমাদের লিজেন্ড ফারুক ভাইকে জান্নাত নসিব করুন। আমিন।’
অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীর শোকবার্তা, ‘বিদায় বীর মুক্তিযোদ্ধা, চলচ্চিত্র নায়ক ফারুক। বিনম্র শ্রদ্ধা। আপনার আত্মার শান্তি হোক। চিত্রনায়ক আরিফিন শুভ লিখেছেন, ‘ভালো থাকবেন মিয়া ভাই। বাংলার সকল দর্শকের মনে চিরকাল বেঁচে থাকবেন আপনি। শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।’
চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস লিখেন, ‘বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী অভিনেতা ও সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব আকবর হোসেন পাঠান ফারুক সাহেবের মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। উনার সঙ্গে আমার প্রথম সিনেমা ‘কোটি টাকার কাবিন’। সবাই উনার জন্য দোয়া করবেন।’
অভিনেত্রী বিজরী বরকতউল্লাহ বললেন, ‘কিংবদন্তী চলচ্চিত্র অভিনেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা নায়ক ফারুক সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন, (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহি রাজিউন)। আল্লাহ তার সকল গুনাহ মাফ করে জান্নাত দান করুন, আমিন।’
গুণী চলচ্চিত্র নির্মাতা জাকির হোসেন রাজুর নির্মাণে একাধিক ছবিতে কাজ করেছেন ফারুক। সেসব স্মৃতি হাতড়ে রাজু বলেছেন, বাংলা চলচ্চিত্রের ‘মিয়া ভাই’ খ্যাত, তুমুল জনপ্রিয় নায়ক ফারুক ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদ শুনে স্তব্ধ হয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ। মৃত্যু অনিবার্য, তবু মৃত্যু আমার ভালো লাগে না! এই সংবাদটি শুনলেই মন বিবশ হয়ে যায়। যে মানুষটি মৃত্যুবরণ করেন, হাজার চেষ্টা করলেও তার সঙ্গে আর কোনও দিন কথা বলা যাবে না, পৃথিবীর কোনও প্রযুক্তির মাধ্যমেও আর জানা যাবে না, মানুষটি কেমন আছেন! কী ভীষণ অসহায় আমরা মৃত্যুর কাছে! আমার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘জীবন সংসার’, দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘এ জীবন তোমার আমার’র নায়ক ফারুক ভাই। শত শত মধুর স্মৃতি তার সঙ্গে, যেসব স্মৃতি সিনেমার গল্পের চেয়েও মধুর। কোনও একদিন সেই সব স্মৃতি নিয়ে বিশদভাবে লিখবো। আজ শুধু বলবো, পরপারে ভালো থাকবেন ফারুক ভাই! আল্লাহ যেন আপনার দোষত্রুটি ক্ষমা করে আপনাকে জান্নাতবাসী করেন, আপনার পরিবারের সবাইকে শোক সইবার শক্তি দেন।
চিত্রনায়িকা অঞ্জনা লিখেছেন, কথাটা শোনার পরেই বুকের ভিতর ছ্যাত করে উঠলো। চলে গেলেন আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী চিত্রনায়ক আমার অসংখ্য সুপার বাম্পারহিট চলচ্চিত্রের জননন্দিত মাটি ও মানুষের সফল চিত্রনায়ক ফারুক ভাই। আমার ৩য় মাইলস্টোন চলচ্চিত্র “মাটির মায়া” ছায়াছবিতে প্রথম ফারুক ভাই এর সাথে আমার অভিনয় এর পর অসংখ্য চলচ্চিত্রে অভিনয়ের কতো মধুময় স্মৃতি যা ভেবে চোখ বারবার অশ্রুসিক্ত হয়ে যাচ্ছে, কান্নায় বুক ভার হয়ে যাচ্ছে। ফারুক ভাই জীবনদ্বশায় সব সময় বলতেন এতো চলচ্চিত্রে জীবনে অভিনয় করেছি কিন্তুু “ফুলেশ্বরী” আমার জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র যার গান সব সময় আমি গুনগুন করি গাই “নদীরে কতো রঙ্গ দেখালি আমায়”- এই কথাগুলো কখনোই ভুলে যাবার নয়, ফারক ভাই আপনি বেঁচে থাকবেন আপনার অনবদ্য শ্রেষ্ঠ কর্মের মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্রের স্বপ্নিল আকাশে কোটি দর্শকের হৃদয়ে অনন্তকাল। আমি ও ফারুক ভাই অভিনীত উল্লেখ্য যোগ্য সুপারহিট ছায়াছবিগুলো হলো- ১। মাটিরমায়া ৩। প্রিয়বান্ধবী ৪। ছোট মা ৫। চোখের মনি ৬। সখি তুমি কার ৭। মাসুম ৮। প্রতিদ্বন্দ্বী ৯। সুখের সংসার ১০। মেহমান ১১। ভাগ্যলক্ষ্মী ১২। রক্তেরবাধন ১৩। অন্ধবধু ১৪। ফুলেশ্বরী।
চিত্রনায়ক জায়েদ খান লিখেছেন, এতক্ষণ কিছু লিখিনি; কারণ, মনে হয়েছে আপনি বেঁচে আছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আল্লাহর কাছে চলে গেলেন। এটা তো কথা ছিল না। বলেছিলেন, জায়েদ আসতেছি আড্ডা হবে। এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না আপনি নাই মিয়া ভাই।
চিত্রনায়ক ইমন, নিরব, আদর আজাদ, নির্মাতা সৈকত নাসির, গায়িকা আঁখি আলমগীরসহ আরও অনেকেই ফারুকের মৃত্যুতে শোকবার্তা দিয়েছেন।
অভিনেত্রী সাফা কবীর লিখেন, “সারেং বউ, লাঠিয়াল, সুজন সখী, গোলাপি এখন ট্রেনেসহ কতো কতো কালজয়ী চলচ্চিত্র উপহার দিয়েছেন তিনি। ‘মিয়া ভাই’ চলচ্চিত্রে এতোই সাফল্য পেয়েছিলেন যে সবাই তাকে মিয়া ভাই বলেই ডাকতো। বাংলা চলচ্চিত্রের মিয়া ভাই, কিংবদন্তী নায়ক ও আমাদের সবার প্রিয় ফারুক স্যার আজ চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে। তাঁর এই প্রয়াণে আমরা শোকাহত। তিনি সবসময় থাকবেন আমাদের মাঝে, আমাদের মিয়া ভাই কিংবা সাহেব কিংবা সুজন হয়ে।”