বাবা মারা গেছেন প্রায় ৮ বছর বয়সে, পৃথিবীতে নেই মাও। ছোটবেলা থেকেই পরিশ্রম করে বড় হয়েছেন। নিজের ঘর-বাড়ি বলতে কিছুই ছিল না। মামার বাড়িতে থেকে সবকিছু করেছেন। চা বিক্রি করে সংসার চালাতেন। সবকিছুই চলছিল ভালো, তবে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে থমকে যায় সবই। বলা হচ্ছে, কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের চা দোকানি হুমায়ুন আহমেদের (২৫) কথা।
পোস্টেট অপারেশন অসুস্থতার কারণে এক মাস ধরে চায়ের দোকান বন্ধ হয়ে যায় হুমায়ুন আহমেদের। পরিবারে নেমে আসে হতাশা। সেই হুমায়ুন আহমেদের খোঁজ পেয়ে ভালবাসা দিবসে তারই পাশে দাঁড়ায় উদ্যোগ সোশ্যাল ফাউন্ডেশন নামের একটি সামাজিক সংগঠন। ৫০ হাজার টাকা তুলে দিলেন তার হাতে।
হুমায়ুন আহমেদ সংসারে স্ত্রী ও চার বছর বয়সী এক ছেলে সন্তান রয়েছে।
বুধবার ১৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলায় পিরিজপুর ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের অসুস্থ চা দোকানি হুমায়ুন আহমেদের হাতে ৫০ হাজার টাকা তুলে দেন সংগঠনের সদস্যরা। এছাড়াও হুমায়ুন আহমেদ সুস্থ হলে তাকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় সংগঠনটি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি শেখ বোরহান উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রিয়াদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ফরহাদ আহমেদ এবং সদস্য রিদয়সহ এলাকাবাসী।
হুমায়ুন আহমেদ জানান, জীবনে দুঃখ কষ্ট সেই ছোটবেলা থেকেই শুরু। কিন্তু বর্তমানে আমার এই অসুস্থতার সময় জীবনের সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতি। আমার আগে যে চায়ের দোকান ছিল তার মাধ্যমে সংসার চালাচ্ছিলাম। আমি অসুস্থ হয়ে যাওয়াতে পরিবারে নেমে আসে হতাশা। আমার পাশে উদ্যোগ সোশ্যাল ফাউন্ডেশন দাঁড়ানোয় তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
সংগঠনটির সভাপতি শেখ বুরহান উদ্দিন পরাণ জানান, আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস যেটা আমরা সবাই জানি। এই দিবসে উদ্যোগ সোশ্যাল ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আমরা একটি ব্যতিক্রম উদ্যোগ নিয়ে অসুস্থ চা দোকানদার হুমায়ূন আহমেদের পাশে দাঁড়িয়েছি। তার অসুস্থতার কথা জানতে পেরে আমরা সকলেই সহযোগিতার জন্য এগিয়ে এসেছি। তার অপারেশন করতে যত টাকা লাগে সংগঠনের পক্ষ থেকে দেয়ার চেষ্টা করবো। আজকে তার অপারেশন জন্য ৫০ হাজার টাকা তুলে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এছাড়া পরে তার ব্যবসা করার জন্য আমরা একটি তহবিল গঠন করে তার একটি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে দিব। আসলে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে অনেকেই ফুল নিয়ে ব্যস্ত, প্রেমিকা নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু আমাদের সংগঠনের সদস্যরা দু’দিন যাবৎ পরিকল্পনা করছেন, ভালোবাসা দিবসে এমন কিছু করার যাতে মানুষের উপকার হয়, মানবিক কাজ হয়। এছাড়াও আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে ভাসমান ফ্রি স্কুলের ব্যবস্থা রয়েছে।
স্থানীয় ওমর ফারুক জানান, ভালোবাসা দিবস মানে দেখছি এলাকার ছেলে-মেয়েরা ফুল নিয়ে এদিক-সেদিক ঘুরাফেরা করে। তবে ভালবাসা দিবসে এমন ব্যতিক্রম আয়োজন করায় উদ্যোগ সোশ্যাল ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ জানাই।