লোগান ফন বিক ও সাইব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেখটের রেকর্ড জুটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে লড়াকু পুঁজি পেয়েছিল নেদারল্যান্ডস। প্রোটিয়া বধে নতুন মহাকাব্য রচনা করে সবাইকে চমকে দেয়া দলটি আরও বড় কিছু ঘটানোর আশায় ছিল। তবে সেই আশায় পানি ঢেলে বিশ্বকাপের চলতি আসরে টানা তিন ম্যাচ হারের পর অবশেষে প্রথম জয়ের দেখা পেয়েছে শ্রীলঙ্কা।
লক্ষ্ণৌর ভারতরত্ন শ্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী একনা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শনিবার টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে নেদারল্যান্ডস ৪৯.৪ ওভারে ডাচরা ২৬২ রানে অলআউট হয়। জবাবে শ্রীলঙ্কা ১১ বল বাকি থাকতে ৫ উইকেটের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে।
টেবিলের তলানিতে থাকা লঙ্কানরা ৪ ম্যাচে ২ পয়েন্ট নিয়ে নয় নম্বরে উঠেছে। সমান পয়েন্টে থাকলেও রানরেটের বিচারে সাত নম্বরে আছে বাংলাদেশ, আটে নেদারল্যান্ডস। সবার নিচে নেমেছে আফগানিস্তান।
চার ম্যাচে সবগুলো জিতে সমান ৮ পয়েন্টে আছে নিউজিল্যান্ড ও ভারত। রানরেটে এগিয়ে থাকার সুবাদে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে কিউইরা। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে টিম ইন্ডিয়া।
রান তাড়ায় দলীয় ১৮ রানে প্রথম উইকেট খুইয়ে বসে শ্রীলঙ্কা। আরিয়ান দত্তের বলে বাস ডে লেডের তালুবন্দি হন ৫ রান করা কুশল পেরেরা।
অধিনায়ক কুশল মেন্ডিসও ইনিংস বড় করতে সক্ষম হননি। আরিয়ানের বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ১১ রান করে পল ফন মিকেরেনের হাতে ক্যাচ দেন।
তৃতীয় উইকেটে ৫২ রান যোগ করেন পাথুম নিশাঙ্কা এবং সাদিরা সামারাবিক্রমা। শ্রীলঙ্কার স্কোর একশো পেরোনোর পর ফিফটি পাওয়া নিশাঙ্কা উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। লঙ্কান ওপেনার ৫২ বলে ৯ চারে ৫৪ রান করেন।
চারিথ আসালাঙ্কাকে নিয়ে চতুর্থ উইকেটে ৭৭ রান যোগ করে সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের জয়ের পথে নিতে থাকেন সামারাবিক্রমা। ৬৬ বলে ২ চারে ৪৪ রান করা আসালাঙ্কাকে বোল্ড করেন আরিয়ান।
এরপর ধনঞ্জয়া ডি সিলভার সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে জুটি গড়ে দলকে জয়ের একদম কাছে নিয়ে যান সামারাবিক্রমা। ৩৭ বলে এক চার ও ২ ছক্কায় ধনঞ্জয়া ৩০ রান করে বোল্ড হওয়ার সময় শ্রীলঙ্কা জয় থেকে মাত্র পাঁচ রান দূরে ছিল।
কলিন অ্যাকেরম্যানের বলে চার মেরে খেলা শেষ করেন দুশন হেমন্ত। দারুণ ব্যাটিং করা ম্যাচসেরা সামারাবিক্রমা ১০৫ বলে ৭ চারে ৯১ রানে অপরাজিত থাকেন।
ডাচদের পক্ষে আরিয়ান পান ৩ উইকেট। একটি করে উইকেট দখল করেন মিরেকেন ও অ্যাকেরম্যান।
এর আগে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নামা নেদারল্যান্ডস প্রথম ১০ ওভারে স্কোরবোর্ডে ৪৮ রান তুললেই দুই ওপেনারকে হারায়। কাসুন রাজিথার বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন বিক্রমজিৎ সিং। এরপর রাজিথার বলে ১৬ রান করে বোল্ড হন ম্যাক্স ও’ডাউড।
১১-২০ ওভারের মধ্যে কমলা বাহিনী ৩৩ রান যোগ করার পর আরও তিন উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে। সাবলীল খেলতে থাকা কলিন অ্যাকেরম্যান খেলেন ৩১ বলে ৫ চারে ২৯ রানের ইনিংস। রাজিথার করা অফস্টাম্পের অনেক বাইরের বলে শট করতে গিয়ে অ্যাকেরম্যান উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন।
বাস ডে লেডে মাত্র ৬ রান করে দিলশান মাদুশাঙ্কার বলে তৃতীয় স্লিপে কুশল পেরেরার হাতে ধরা পড়েন। অলরাউন্ডার তেজা নিদামানুরু ৯ রান করে মাদুশাঙ্কার বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ড্রেসিংরুমের পথে হেঁটে যান।
সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে ৬৯ বলে ৭৮ রানের ইনিংস খেলা ডাচ অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডস আজ হননি সফল। মাহেশ থিকশানার বলে বোল্ড হওয়ার আগে করেন ১৬ রান। এ সময় নেদারল্যান্ডস ৯১ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে।
এরপর সপ্তম উইকেটে ওয়ানডে বিশ্বকাপে রেকর্ড ১৩০ রানের জুটি গড়েন ফন বিক ও এঙ্গেলব্রেখট। ২০১৯ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সপ্তম উইকেটে মহেন্দ্র সিং ধোনি ও রবীন্দ্র জাদেজা ১১৬ রানের জুটি গড়েছিলেন। চার বছর আগের সেই রেকর্ড আজ ভেঙে যায়।
ভাগ্যের ছোঁয়াও অবশ্য তাতে ছিল। চামিকা করুণারত্নের করা ৪৩ তম ওভারের দ্বিতীয় বলটি ছিল স্লোয়ার। অফ স্টাম্পের বাইরের বলটি ব্যাটে লাগাতে পারেননি এঙ্গেলব্রেখট। উইকেটরক্ষক কুশল মেন্ডিসও বল গ্লাভসবন্দি করতে ব্যর্থ হন। বল তার গ্লাভসে সামান্য লাগার পর পেছনে থাকা হেলমেটে লাগে। নিয়ম অনুযায়ী বলের গতিপথ অস্বাভাবিকভাবে পরিবর্তিত হওয়ায় ৫ রান পেনাল্টি পায় নেদারল্যান্ডস। পরের বলেই ক্যাচ ফেলে দেন দুশন হেমন্ত। ব্যক্তিগত ৬১ রানে এঙ্গেলব্রেখট জীবন পান।
থিকশানার করা ৪৪তম ওভারেও ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান এঙ্গেলব্রেখট। এর খানিক পরই সপ্তম উইকেটে রেকর্ড জুটির সৃষ্টি হয়।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথম ফিফটি পাওয়া এঙ্গেলব্রেখট অবশ্য ৮২ বলে ৪টি চার ও এক ছক্কায় ৭০ রানেই থামেন। মাদুশাঙ্কার করা ইয়র্কারে স্কুপ করতে গিয়ে বোল্ড হন।
ব্যক্তিগত ৪৯ রানে জীবন পাওয়া ফন বিকও ফিফটির দেখা পান। বদলি ফিল্ডার দুনিথ ওয়েল্লাগে এক্সট্রা কভার থেকে বল ছুড়লেও করুনারত্নে তা ধরতে না পারায় তিনি রান আউট হননি।
৪৮তম ওভারে মাদুশাঙ্কার বলে ৭ রান করে কুশলের গ্লাভসবন্দি হন রোয়েলফ ফন ডের মেরউই। খানিক পর ৭৫ বলে এক চার ও এক ছক্কায় ৫৯ রান করা ফন কিকের উইকেট তুলে নেন রাজিথা। শেষ ওভারে পল ফন মিকেরেন রান আউট হলে থামে নেদারল্যান্ডসের ইনিংস।
শ্রীলঙ্কার পক্ষে মাদুশাঙ্কা ও রাজিথা ৪টি করে উইকেট পান। একটি উইকেট পকেটে পুরেন থিকশানা।