ইতালির উপকূলে একটি জাহাজডুবির ঘটনায় ৬৭ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে আছেন পাকিস্তান জাতীয় নারী ফুটবল ও হকি দলের খেলোয়াড় শাহিদা রাজা।
২৯ বর্ষী শাহিদা প্রতিবন্ধী তিন বছর বয়সী ছেলে, বোন এবং এক বন্ধুর চিকিৎসার জন্য জাহাজে করে বিদেশে পাড়ি দিচ্ছিলেন। তিনি দক্ষিণ-পশ্চিম বেলুচিস্তান প্রদেশের কোয়েটার বাসিন্দা ছিলেন।
ডুবে যাওয়া জাহাজটি তুরস্কের ইজমির বন্দর থেকে রওনা দিয়েছিল। ইউরোপে উন্নত জীবনযাত্রার সন্ধানে থাকা আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ইরানসহ অন্য দেশের নাগরিকরা সেই জাহাজের যাত্রী ছিলেন। দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়াদের বর্ণনা অনুযায়ী, জাহাজটিতে কমপক্ষে ১৭০ জন যাত্রী ছিল।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সময় ভোরের আগে ক্যালাব্রিয়ার কাছে আইওনিয়ান সাগরে তীব্র স্রোতে জাহাজটি ভেঙে ডুবে যায়।
নিহত শাহিদার বোন সাদিয়া বলেছেন, ‘শাহিদার একমাত্র স্বপ্ন ছিল তার প্রতিবন্ধী সন্তানের চিকিৎসা করানো। যখন পাকিস্তানের হাসপাতালগুলো তাকে বলেছিল বিদেশে চিকিৎসাই একমাত্র বিকল্প হতে পারে, তখন তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন।’
‘তিনি একজন সাহসী নারী ও একজন পুরুষের মতো শক্তিশালী ছিলেন। আমার বোন তার ছেলেকে করাচির আগা খান হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছিলেন। শাহিদা কোয়েটার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের কাছে গিয়েছিলেন। যেখানে বলেছিল, তার ছেলের জন্য কিছুই করা সম্ভব নয়।’
‘একজন মা তার সন্তানদের জন্য যা করেন তা অন্য কেউ করতে পারেন না। শাহিদা সবসময় নিজের মতো করে কিছু সামলাতে চেয়েছিলেন। আমাদের বোনের জন্য আমরা গর্বিত।’
পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আরিফ আলভি বলেছেন, শাহিদার মর্মান্তিক মৃত্যু তাকে ‘গভীরভাবে নাড়া দিয়েছেভ’, কারণ দেশ তার ছেলেকে চিকিৎসা সুবিধা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
সেরিব্রাল পালসি বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে আলভি বলেন, ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের স্থান দেয়ার জন্য স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পেশাদার প্রশিক্ষণ এবং সমাজের একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ।’
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি জাহাজডুবির জন্য মানব পাচারকারীদের দায়ী করেছেন, ‘প্রতিকূল আবহাওয়ায় ২০০ জন লোক নিয়ে যাওয়াটা অপরাধ।’
শাহিদার বন্ধু সুমাইয়া মুশতাক জানান, তিনি প্রায়ই তার সন্তানের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতেন। তার ভাষ্য, ‘স্থানীয় হাসপাতালের শাহিদার ছেলের রোগ নিরাময়ের অক্ষমতাই তাকে বিদেশে একটি ভালো ভবিষ্যত খুঁজতে বাধ্য করেছিল। আন্তর্জাতিক খেলোয়াড় হওয়া সত্ত্বেও তিনি পাকিস্তানে চাকরি খুঁজে পাননি।’
পাকিস্তানি অ্যাথলেটের ছেলে হাসান সেই জাহাজে ছিল না, দেশেই থেকে গিয়েছিল। মস্তিষ্কের সমস্যার কারণে তার শরীরের একপাশে মাথা থেকে পা পর্যন্ত অবশ হয়ে যায়। শাহিদা তাকে ছাড়া বিদেশ ভ্রমণ করে কীভাবে সন্তানের চিকিৎসার ব্যবস্থা করছিলেন, সেটি অবশ্য স্পষ্ট নয়।