ব্যাটারদের ভালো পারফর্মের পর লঙ্কানদের ব্যাটে পাঠিয়ে শুরুতে বল হাতেও টাইগাররা ছিলেন দুর্দান্ত। তিন ব্যাটারকে ফেরানোর পর শ্রীলঙ্কার হাল ধরেন পাথুম নিশাঙ্কা ও চারিথ আশালাঙ্কা। তাদের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে মাঝে ছন্দ হারায় বাংলাদেশ। শেষের দিকে তাসকিন-তানজিমরা ছন্দে ফিরলেও ততক্ষণে দেরি হয়ে যায়। নিশাঙ্কার সেঞ্চুরি ও আশালাঙ্কার ৯১ রানের ইনিংসে লঙ্কানদের ৩ উইকেটের জয়ে অপেক্ষা বাড়ল শান্তদের সিরিজ জয়ের।
চট্টগ্রামে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ডাচ বাংলা ব্যাংক বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কা ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয়টিতে টসে জিতে স্বাগতিকদের আগে ব্যাটের আমন্ত্রণ জানান লঙ্কান অধিনায়ক কুশল মেন্ডিস। নির্ধারিত ওভার শেষে ৭ উইকেটে ২৮৬ রানের সংগ্রহ পেয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। জবাবে নেমে ১৭ বল ও ৩ উইকেট হাতে রেখে জয়ের বন্দরে নোঙর করে লঙ্কানরা। এতে ১-১ সমতায় সিরিজে ফিরেছে কুশল মেন্ডিসের দল।
সফরকারীদের রানতাড়ায় পাঠিয়ে প্রথম ওভারে উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশের ইনিংসে শুভসূচনা এনে দেন বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম। রানের খাতা না খুলেই গোল্ডেন ডাক মেরে ফিরে যান আভিস্কা ফের্নান্দো।
দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৪১ রান তোলেন পাথুম নিশাঙ্কা ও কুশল মেন্ডিস। ৫.১ ওভারে জুটি ভাঙেন তাসকিন আহমেদ। ১৩ বলে ১৬ রান করা মেন্ডিসকে ফেরান মুশফিকুর রহিমের ক্যাচ বানিয়ে। পরের ওভারে সাদিরা সামারাবিক্রমাকে ফেরান শরীফুল। ৪ বলে ১ রান করে ফিরে যান লঙ্কান এই ব্যাটার।
তৃতীয় উইকেটে ১৮৩ বলে ১৮৫ রানের জুটি গড়ে লঙ্কানদের জয়ের পথ সহজ করে দেন পাথুম নিশাঙ্কা ও চারিথ আশালাঙ্কা। ৩১.২ ওভারে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন নিশাঙ্কা। ১০০ বলে সেঞ্চুরি ছোঁয়া ইনিংসে ছিল ১১টি চার ৩টি ছক্কার মার। ৩৭তম ওভারে নিশাঙ্কাকে ফেরান মেহেদী হাসান মিরাজ। ১৩টি চার ও ৩ ছক্কায় ১১৩ বলে ১১৪ রানে সাজানো ছিল তার ইনিংস।
৩৮তম ওভারে আশালাঙ্কাকে ফিরিয়ে ওয়ানডেতে নিজের ১০০ উইকেট পূর্ণ করেন তাসকিন। ৭২তম ম্যাচে ৭০তম ইনিংসে ৮ম বাংলাদেশি বোলার হিসেবে এই মাইলফলক স্পর্শ করেছেন তাসকিন। পেসারদের মধ্যে চতুর্থ তিনি।
ম্যাচের হিসেবে বাংলাদেশিদের মধ্যে শত উইকেট পূর্ণ করা দ্রুততম বোলার তাসকিন। তার আগে মোস্তাফিজুর রহমান ৫৪ ম্যাচে এবং আব্দুর রাজ্জাক ৬৯ ম্যাচে ১০০ উইকেটের মাইলফলকে পৌঁছান।
৪১.১ ওভারে ২৫১ রানে জানিথ লিয়ানেগেকে ফেরান তানজিম হাসান সাকিব। ১৬ বলে ৯ রান করেন এই ব্যাটার। জয় থেকে দুই রান দূরে থাকতে হাসারাঙ্গাকে ফেরান তাইজুল। ১৬ বলে ২৫ রান করেন লঙ্কান তারকা অলরাউন্ডার। পরে প্রমোধ মাধুশানকে নিয়ে জয় নিশ্চিত করেন দুনিথ ওয়েল্লাগে। ২৬ বলে ১৫ রান করেন ওয়েল্লাগে।
বাংলাদেশের হয়ে তাসকিন আহমেদ ও শরীফুল ইসলাম দুটি করে উইকেট নেন। এছাড়া তানজিম সাকিব, তাইজুল ও মিরাজ নেন একটি করে উইকেট।
এর আগে ব্যাটে নেমে প্রথম ওয়ানডের মতো দ্বিতীয়টিতেও ব্যর্থ হয়েছেন লিটন দাস। পরপর দুই ম্যাচে মেরেছেন ডাক। প্রথমটিতে গোল্ডেন ডাক মারলেও দ্বিতীয় ম্যাচে দু’বল বেশি খেলেছেন। ইনিংসের তৃতীয় বলে মাধুশঙ্কার বলে স্কয়ারলেগে ওয়েল্লাগের হাতে ক্যাচ দেন টাইগার ওপেনার।
নেমে রানের খাতা খোলার আগেই জীবন পান শান্ত। দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে টপএজ হন। স্লিপে থাকা পাথুম নিশাঙ্কা বল তালুবন্দি করতে ব্যর্থ হন। বল চলে যায় সীমানার বাইরে।
জীবন পেয়ে আর ফিরে তাকাননি টাইগার অধিনায়ক। সৌম্য সরকারকে নিয়ে গড়েন ৭৫ রানের জুটি। ১২.২ ওভারে শান্ত ধরা দেন মেন্ডিসের হাতে। মাধুশঙ্কার গুডলেন্থের বল আউটসাইট এজ হয়ে চলে যায় উইকেটরক্ষকের হাতে। ৬টি চারে ৩৯ বলে ৪০ রান করে যান টাইগার দলপতি।
৭৫ রানে ২ উইকেট হারানোর পর হৃদয়কে নিয়ে ৫৫ রানের জুটি গড়েন সৌম্য। প্রথম ওয়ানডেতে ব্যর্থ হলেও দ্বিতীয় ওয়ানডেতে স্বরূপে ফিরেছেন। তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের ১২তম ফিফটি। সেইসঙ্গে দশম বাংলাদেশি হিসেবে ওয়ানডেতে দুই হাজার রানের ক্লাবে ঢুকেছেন।
ম্যাচের আগে দুই হাজারি ক্লাবে পৌঁছাতে সৌম্যর দরকার ছিল ৫৬ রান। ১১ চার ও এক ছক্কায় ৬৬ বলে ৬৮ রানের ইনিংস খেলে ফিরেছেন। তার রানসংখ্যা এখন ২০১২। ৬৮তম ম্যাচে এসে এই ক্লাবে পৌঁছালেন। নয় বছরের ক্যারিয়ারে ৬৪ ইনিংসে ব্যাট করে ১২ ফিফটি ও ৩ সেঞ্চুরি তুলেছেন তারকা ওপেনার।
২১.২ ওভারে হাসারাঙ্গার বলে তালুবন্দি হন মাধুশঙ্কার হাতে। সৌম্য ফেরার পর টিকতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। ২ বল মোকাবেলা করে রানের খাতা খোলার আগে ফিরে যান।
রান পেলেও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি মুশফিকুর রহিম। তিন চারে ২৮ বলে ২৫ রান করে ফিরেছেন। টিকতে পারেননি মেহেদী হাসান মিরাজও। ১৮ বলে ১২ রান করে ফিরে যান।
৩৫.৫ ওভারে ১৮৯ রানে মিরাজ ফেরার পর তানজিম হাসান সাকিবকে নিয়ে ৬২ বলে ৪৭ রানের জুটি গড়েন হৃদয়। ৪৭তম ওভারের প্রথম বলে হাসারাঙার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তানজিম। ৩৩ বলে ১৮ রান করেন লোয়ারঅর্ডার ব্যাটার।
শেষদিকে তাসকিন আহমেদকে সঙ্গী করে ২৩ বলে ৫০ রানের ঝড়ো অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে ইনিংস শেষ করেন হৃদয়। ৩ চার ও ৫ ছক্কায় ১০২ বলে ৯৬ রান করে অপরাজিত থাকেন হৃদয়। হৃদয়ের ক্যারিয়ারসেরা ব্যাটিং এটি। ওয়ানডেতে হৃদয়ের সর্বোচ্চ রান ছিল ৯২। দুটি চার ও এক ছক্কায় ১০ বলে ১৮ রানের ঝড়ো ক্যামিও উপহার দেন তাসকিন।
লঙ্কানদের হয়ে আগুনঝরা বোলিং করেছেন ভানিডু হাসারাঙ্গা। ১০ ওভারে ৪৫ রান খরচায় নিয়েছেন ৪ উইকেট। দিলশান মাধুশঙ্কা দুটি এবং প্রমোধ মাধুশান নেন এক উইকেট।