চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

যতবার আমাকে আটকানো হয়, ততবার দ্বিগুণ এগিয়ে যাই: শাকিব

যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করায় দীর্ঘদিন ধরে দেখা পাওয়া যাচ্ছে না ঢাকাই সুপারস্টার শাকিব খানের। এদিকে, ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘গলুই’ ও ‘বিদ্রোহী’ সিনেমা নিয়ে কথা বলার জন্য বেশ ক’দিন যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি ঢাকাই ছবির ‘কিং খান’কে। 

অবশেষে সোমবার বাংলাদেশ সময় মধ্যরাতে চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে আলাপ হয় জনপ্রিয় এ চিত্র তারকার।

দুই সিনেমা প্রসঙ্গে কথা বলার শুরুতেই শাকিব খান বলেন, কিছু মানুষ হয়তো চেষ্টা করছে ‘গলুই’ আটকিয়ে অন্য সিনেমা এগিয়ে রাখার। গুটি কয়েক মানুষের চেষ্টায় যদি কোনো সিনেমা হিট হতো, তাহলে বলিউডের ‘স্টার কিড’রা সবাই ‘স্টার সুপারস্টার’ হতো। বলিউডের অনেক নামকরা প্রযোজকরা সন্তানদের দিয়ে চেষ্টা করেও স্টার বানাতে পারেননি। তাই জোর করে কিছু করা যায় না। তবে ইন্ডাস্ট্রিতে যে অবস্থা অন্যদের সিনেমা যদি হিট হয় অবশ্যই এটা ইন্ডাস্ট্রির সবার জন্য মঙ্গলজনক।

মার্কিন মুলুকে থাকলেও ঈদের দুটি সিনেমার সবসময় খোঁজ খবর রেখেছেন বলে জানালেন শাকিব খান। তার ফ্যান পেজটিও দুটি সিনেমার প্রচারণায় ছিল সক্রিয়। শাকিব খান বলেন, সোশ্যাল মিডিয়াতে খেয়াল করেছি ইয়াং জেনারেশন ভালো ভাবে ‘বিদ্রোহী’ দেখছে। শতাধিক সিনেমা হল পেয়েছে বিধায় বহু মানুষ দেখেছে। ঈদের দিন থেকে হলের সামনে দর্শকের ঢল ছিল।

তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে সুখকর ব্যাপার যেটা অনুভব করছি, দীর্ঘদিন পর মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে দলে দলে গিয়ে ‘গলুই’ দেখছে। পরিচ্ছন্ন পারিবারিক গল্প আছে বলে মুক্তির আগে পরিবার নিয়ে সিনেমা হলে আসার আহ্বান জানিয়ে ফেসবুকে পোস্টও দিয়েছিলাম। ঈদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হচ্ছে পরিবারসহ মানুষকে হলে ফেরাতে পেরেছি। সিনেমা হল বিমুখ এই সময়ে এটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল।’

শাকিব খান বলেন, গুটি কয়েক মানুষের জন্য নয়, আমি সিনেমা করি লাখ লাখ মানুষের জন্য। তারা কেউ আমার সিনেমা ফ্রি দেখে না। কষ্টে উপার্জিত টাকার একটি অংশ থেকে সময় ব্যয় করে আমার সিনেমা দেখে। দিনশেষে সিনেমা হিট কিংবা ফ্লপ করায় তারা। যত বাধা-বিপত্তি আসুক না কেন, সবসময় আমার লাখ লাখ দর্শক দূর-দূরান্তে গিয়ে হলেও আমার সিনেমা দেখেছে। এবারও চেষ্টা ছিল আমার সিনেমা আটকানোর। তার মানে নিশ্চয়ই পরিষ্কার, আমার সিনেমা বেশি এগিয়ে আছে! একজন অভিনেতার ক্যারিয়ার নির্ভর করে দর্শকের উপর। প্রভাব খাটিয়ে মানুষের ভালোবাসা বাদে হয়তো সব পাওয়া যায়।

প্রায়ই কিছু মানুষ বলে বেড়ায়, ‘এই ঈদে শাকিব খানের স্টারডম শেষ’! মুঠোফোনের ওপাশ থেকে কথাটা শুনেই হাসছিলেন এই সুপারস্টার। উত্তরটা দিয়েছেন এভাবে, “এ কথাটা কি এবারই প্রথম শুনলে? এটা আমি শুনে আসছি গত ১৫ বছর ধরে। যেদিন থেকে সিনেমায় আমার একটা পজিশন তৈরি হয়েছে তখন থেকে আমাকে শুনতে হচ্ছে, ‘শাকিব খান পিছিয়ে গেছে আর হবে না।’ মন থেকে বলছি, এভাবে যতবার আমাকে আটকানো হয়, মানুষের দোয়া-ভালোবাসায় আমি দ্বিগুণ এগিয়ে যাই।”

“মানুষ আমাকে কতটা ভালোবাসলে বলতে পারে, আপনি শুধু ভালো ভালো কাজ করে যান; আপনার সিনেমা সুপারহিট করার দায়িত্ব আমাদের। প্রায়ই দেখি ফেসবুকে ফ্যানরা লেখে, আপনার প্রতি ভালোবাসা ততদিন থাকবে যতদিন সূর্য জ্বলবে। অথচ এই মানুষগুলোকে আমি চিনি না, তারা আমাকে সামনে থেকে কোনোদিন দেখতে পাবে কিনা তাও জানে না। কিন্তু সবসময় আমাকে সমর্থন দিতে থাকে। আমার জন্য রাস্তায় নামে! আমার জন্মদিনটি দূর থেকে উদযাপন করে। এই নিঃস্বার্থ ভালোবাসার কাছে সারাজীবন কৃতজ্ঞ হয়ে থাকবো। তাদের ভালোবাসার কাছে দু-চারজন মানুষের কথা গায়েই লাগে না।”-সার্বিক বিষয়ে বলছিলেন শাকিব খান।

ঢাকাই ছবির এই সুপারস্টার বলেন, কিছু মানুষের বদ দোয়া আমাকে কখনও কিছু করতে পারেনি। বহু বছর ধরে দেখেছি এরা আসলে স্বার্থান্বেষী মহল। তাদের বাজে কথায় কান দিতাম, তাহলে হয়তো আরও আগেই থেমে যেতে হতো। দশজন আমার খারাপ চাইলেও কোটি মানুষ আমার জন্য ভালো চায়, আমার জন্য দোয়া করে। তাদের ভালোবাসার শক্তিতে আমি দ্বিগুণ এগিয়ে যাই। সবাইকে খুশী করে চলা পৃথিবীর কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব না। সবসময় আমার কাজটা করেছি এবং যতদিন বেঁচে থাকবো করে যাবো।

এর আগে ২০১৭ সালে শাকিব খানের সিনেমা ‘নবাব’-এর মুক্তি আটকে দিতে চেয়েছিল চলচ্চিত্রের সবগুলো সংগঠন। এমনকি সেন্সর বোর্ড ঘেরাও হয়েছিল, রাস্তায় নেমে আন্দোলন হয়েছিল দু’বাংলার বহুল আলোচিত এ সিনেমাটির মুক্তি ঠেকাতে। তবে সব প্রচেষ্টায় ছিল গুড়ে বালি! পুরো ইন্ডাস্ট্রি বিপক্ষে থাকলেও সেই ‘নবাব’ দেখতে শাকিবের ভক্তরা সিনেমা হলে জনস্রোত ঘটিয়েছিল। শুধু ওই বছর নয়, গত কয়েক বছরের মধ্যে ব্লকবাস্টার মেগাহিট হয়েছিল ‘নবাব’। কথায় কথায় এমনটাই স্মরণ করিয়ে দিলেন এই তারকা।

শাকিব খানের কথা, আমার বিপক্ষে সেবার ইন্ডাস্ট্রির বেশীরভাগ মানুষ দাঁড়িয়েছিল। আমার ফ্যানরা প্রতিবাদ হিসেবে সিনেমা হলে এসেছিল। আমি আসলে কাজ করছি এসব লাখো, কোটি ভক্তদের জন্য। ওরা সবসময় আমার পাশে ছিল, আছে এবং থাকবে। তাই আমি ওদের চাওয়া প্রাধান্য দেই। কোনো স্বার্থবাজ মানুষদের নিয়ে ভাবার এক মুহূর্ত টাইম আমার নাই।

এই ঈদেও কান পাতলেই শোনা যায়, মুক্তি পাওয়া শাকিবের ‘গলুই’ প্রদর্শনেও অপশক্তি হিসেবে কাজ করেছে একটি পক্ষ। সে কারণে কাজী হায়াতের মতো কিংবদন্তী নির্মাতাও অভিযোগ করে বলেন, ‘ঈর্ষান্বিত ও উদ্দেশ্য প্রণেদিতভাবে শত বছরের পুরানো আইন দেখিয়ে ‘গলুই’-এর প্রদর্শন আটকে দেয়া হয়েছে। যদিও পরবর্তীতে তথ্য মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে পুনরায় প্রদর্শিত হচ্ছে ‘গলুই’।

কেন ভালো সিনেমা ও কাজের মানুষদের আটকানো হয়? জানতে চাইলে শাকিব খান বলেন, আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে কোনো সুস্থ প্রতিযোগিতা নেই। জিতবো কীভাবে এটা ভেবে কাজ না করে আরেকজনকে বাধা দেব কীভাবে সেটার পিছনে লেগে থাকা হয়। কেউ এগিয়ে যাচ্ছে দেখলে তাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা না করে কীভাবে তাকে টেনে নিচে নামাতে হবে সেই প্রতিযোগিতা করা হয়। এটা পুরোপুরি অসুস্থ প্রতিযোগিতা। এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা বিরাজমান বিধায় অন্যরা পিছিয়ে যায়।

আমেরিকা থেকে কবে দেশে ফিরবেন? এমন প্রশ্নে শাকিব খান বলেন, ‘দেশে ফেরার সময় হয়ে গেছে। শিগগিরই দেশে ফিরবো। আমি এখানে আরাম আয়েশে বসে আছি এমনটা নয়। কাজের মধ্যে আছি। আমেরিকার মতো দেশে সিনেমার শুটিং করা মুখের কথা না। সবকিছু গোছাতে একটু সময় লাগছে।’