ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টাইগারদের সিরিজ হাতছাড়া হয়েছিল মিরপুরেই। তিন ওয়ানডের সিরিজে প্রথম ম্যাচে ছিল জয়ের সুযোগ। ভরাডুবি হয়েছিল দ্বিতীয় ম্যাচে। মিরপুরে ১৩২ রানে হেরেছিল তামিম ইকবালের দল। শেষ ম্যাচে সাকিব আল হাসানের ব্যাটে-বলে উজ্জ্বল পারফরম্যান্সের মন্ত্রবলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ।
মিরপুরে সিরিজ হারলেও চট্টগ্রামে ইংল্যান্ডকে হারানোয় বিশ্বকাপের সুপার লিগ টেবিলে উন্নতি হয়েছে বাংলাদেশের। অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তানকে টপকে ১৩০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চারে এখন টিম টাইগার্স। ১৫৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে ইংল্যান্ড।
ঢাকায় ভরাডুবির পর চট্টগ্রামে এসে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোটা ছিল জাদুমন্ত্রের মতো। সাগরিকার পাড়ে ব্যাট হাতে বড় স্কোর গড়তে পারেনি বাংলাদেশ। ২৪৬ রানে থেমেছিল ইনিংস। বল হাতে ছিল দাপুটে। ৪৩.১ ওভারেই টাইগাররা ফিরিয়ে দেয় সফরকারী দলের সব ব্যাটারকে। ৫০ রানে জয় আসে। দেখে নেয়া যাক ঘুরে দাঁড়ানোর বাঁকগুলো।
সাকিবের অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠা: জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক সাকিব। ব্যাট-বলে ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। ২৪.৩ ওভারে ১১৫ রানের সময় ক্রিজে আসেন। একের পর এক সতীর্থদের হারালেও টিকে ছিলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। ৭১ বলে ৭৫ রানের ইনিংস খেলেন। ৪৮.৪ ওভারে ২৪৬ রানে জফরা আর্চারের শিকার হন। ব্যাট হাতে ম্যাচের সর্বোচ্চ ইনিংসের পাশাপাশি বল হাতেও সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি সাকিব। ফিরিয়েছেন ৪ ইংলিশ ব্যাটারকে। দুর্দান্ত পারফর্মে হয়েছেন ম্যাচসেরা।
মুশফিক-শান্তর জুটির ভিত গড়া: টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। পিচ ব্যাটারদের জন্য সহায়ক হলেও ব্যর্থ হয়েছেন দুই ওপেনারই। মাত্র ১৭ রানে ফেরেন তামিম ও সঙ্গী লিটন দাস। সেখান থেকে দলের হাল ধরেন মুশফিক ও শান্ত। ৯৮ রানের জুটিতে ভিত গড়ে দেন। বিপর্যয়ের সময় হাল ধরলেও অবশ্য ৯৮ রানের জুটিতে দুই ব্যাটার খেলেছেন ১২৯ বল। একটু ধীর ব্যাটিংই বলা চলে। তবে আরেকটু আগ্রাসী না হতে পারলেও তাদের জুটিটি ছিল কার্যকর।
সাকিবকে দেয়া আফিফের সঙ্গ: ১৫৩ রানে মুশফিক ফেরার পর সাকিবকে সঙ্গ দিতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ১৬৩ রানে ফেরেন মিডল অর্ডারের ভরসা। সংগ্রহ বাড়াতে তখন কার্যকরী ভূমিকা রাখেন আফিফ হোসেন। ২৪ বলে ১৫ রান করে আউট হলেও সাকিবকে সঙ্গ দিয়েছেন ৯ ওভার। সাকিব-আফিফের সেই জুটিতে ৪৯ রান পেয়েছে বাংলাদেশ।
আফিফ ফেরার পর ছন্দে থাকা সাকিবকে দীর্ঘক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি আর কেউ। ব্যর্থ হয়েছেন মিরাজ। মাত্র ১৫ রানে ফেরেন মিরাজ ও তাইজুল। শেষের দিকে এসে সাকিবকে সঙ্গ দেন ইবাদত। ১৯ রান আসে তাদের জুটিতে। শেষ অবধি ২৪৬ রানে ইনিংস থামে।
নিয়ন্ত্রিত বোলিং: আগে ব্যাট করে খুব একটা বড় সংগ্রহ পায়নি বাংলাদেশ। ২৪৬ রানের পুঁজি নিয়ে ছিল নিয়ন্ত্রিত বোলিং। চারটি ওয়াইডসহ ইংলিশ ব্যাটারদের মোট ২৬৩ বল করেছে বাংলাদেশ। কাউন্ট হওয়া ২৫৯ বলের মাঝে ১৪৪ বলেই কোনো রান করতে পারেননি সফরকারী ব্যাটাররা। বোলারদের রান খরচায় সর্বোচ্চ ইকোনমি ছিল ৫.৭৫। ৮ ওভারে ৪৬ রান দিয়েছেন মিরাজ। তাইজুল ১০ ওভারে ৫.২০ ইকোনমিতে রান খরচ করেছেন ৫২। বাকি তিন বোলার সাকিব, ইবাদত ও মোস্তাফিজের ইকোনমি ছিল ৪.৩০-এর নিচে। ধারাবাহিকভাবে উইকেটও শিকার করেছেন স্বাগতিক বোলাররা।
মোস্তাফিজকে নতুন বলে ব্যবহার: প্রথম ও দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মোস্তাফিজকে নতুন বলে ব্যবহার করেননি তামিম। সেই ভুল চট্টগ্রামে করেননি টাইগার অধিনায়ক। প্রথম ওভারেই বল তুলে দিয়েছেন মোস্তাফিজের হাতে। নতুন বল দিয়ে আক্রমণে যেতে ছন্দবোধ করেন বাঁহাতি পেসার। শুরু থেকেই ইংলিশ ব্যাটারদের রেখেছিলেন চাপে। সেটির ধারাবাহিকতা নিয়মিত উইকেট দিয়েছে টাইগার বোলারদের।
ইবাদতকে নেয়া: তৃতীয় ওয়ানডেতে এসে একাদশে সুযোগ পেয়েছেন ইবাদত হোসেন। সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন ভালোভাবেই। ডানহাতি পেসার ফিরিয়েছেন প্রথম ম্যাচে শতক করা ডেভিড মালান ও মঈন আলীকে। রান খরচেও কিপ্টে ছিলেন। ৯ ওভারে ১ মেডেন দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট। ৪.২২ ইকোনমিতে রান খরচ করেছেন ৩৮।
শরীরিভাষা: ব্যাটিংয়ে খুব একটা শরীরিভাষা তথা স্পৃহা দেখা যায়নি টাইগারদের। বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে ছিল ম্যাচ জয়ের আকাঙ্ক্ষা। সেটা প্রমাণও করেছে তামিমের দল। সাগরিকার পাড়ে বোলারদের পাশাপাশি ফিল্ডাররাও ছিলেন আগ্রাসী। ইংলিশ ৬ ব্যাটারকে ফেরাতে মিলেছে ফিল্ডারদের সহায়তা। ছিল দুর্দান্ত ক্যাচও।
চট্টগ্রামে টাইগারদের ঘুরে দাঁড়ানোটা আত্মবিশ্বাস জোগাবে ব্যাটার, বোলার ও ফিল্ডার সবার মাঝেই। এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখার পাশাপাশি ব্যাটারদের ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে পারলে বছরের শেষাংশে বিশ্বকাপে দারুণকিছুই করার সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের।